হিসেবি প্রেম
প্রিয়ার তিলের দামে বিকিয়ে দিলেন কবি
বোখারা সমরখন্দ, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নগরী।
আমিও প্রেমিক বটে, তবে আধুনিক।
তুল্যমূল্য ভালো বুঝি। মুক্তবাজার, লেনদেন
আকলমন্দ বুঝে নেয় হাওয়া শুঁকে কালের গতিক।
“দেহ দিলে দেহ পাবে, দেহের অধিক মূলধন,
আমার তো নেই সখি!” হৃদয় বোঝে না পুঁজি।
খুঁজি শুধু সুদাসল, জের টেনে মেলাই গণিত।
এই দেখ দু’হাত পেতেছি, কী দিয়ে কী নেবে বলো?
কী দেবো তোমাকে? হিসাবের খাতাও খুলেছি।
আলিঙ্গন, চুম্বন পাবে ফিরে দেবে যতটুকু। চৌকাঠ
পেরুবার আগে হৃদয়টা রেখে এসো ওপাশে রোয়াকে।
লাস্যময়ী এখন অবসরে
প্রকৃত ভোরের আগেও একটি ভোর আসে। সেটি নকল। মুহূর্তে মিলিয়ে যায়।
নকলের ভেতরে জন্ম নেয় আসল ভোর। এ এক আজব খেলা।
যারা ঘুমিয়ে থাকে তারা আসল নকল কোনওটাই দেখতে পায় না।
তাতে ভোরেরা মন খারাপ করে এমন কথা কেউ কি কখনও শুনেছে?
মানুষ দেখবে বলে কবে, কোন বনে, নিসর্গের কোন ফুল অপেক্ষা করেছে?
মরুঝড় থামে নাকি বোকা পাখি বালুতে মূখ লুকালে!
আলো আসবে বলে, না জেনেই রাত জাগে কাননে কুসুম।
আমরাও জেগে আছি টেক-লিয়া নিবিড় রজনী। কুচকানো মখমলে
শাহেরজাদীর কিস্সা আড়মোড়া ভাঙ্গে।
লাস্যময়ী এখন ক্লান্ত, গিয়েছে অবসরে। তার শেষ চুমুকের স্মৃতিটুকু নিয়ে
তস্তরিতে কাত হয়ে নীরবে ঘুমায় একা সোনালী চায়ের কাপ।
গড়িয়ে পড়া অবশিষ্ট দুধ-চায়ের স্রোত হঠাৎ থম মেরে আছে।
পাহারাদার খোজাগুলো বিকট চিৎকারে আকাশ ফাটালে
সদ্য ঘুমভাঙা যেসব নিশাচর চোখ রগরাতে রগরাতে
ঘরের বাইরে আসবে তাদের বাসি পোশাক এড়িয়ে
আলগোছে ঘরে ঢুকে যাবে একটি অপ্রতিরোধ্য সোনালী ভোরের তাজা ঘ্রাণ।
ঘোড়াটা সত্যি মরেছে, লেজও নাড়ছে না
খোলা মাঠে পড়ে আছে বহুকাল আগে মরা ঘোড়া; চোখেও দেখে না, কানেও শোনে না।
ঘোড়াটা সত্যি মরেছে, কেন না, মরলেও গল্পের বোকাটে কুমীর সময়ে লেজুড় নাড়ে, এ ঘোড়া লেজ নাড়ছে না। শোনা ছিল, প্রাণিকূলে ঘোড়াদের ঘ্রাণেন্দ্রীয় সবচে প্রখর। কাজে দেখি ঠনঠন, দিন ও রাতের সারগম ধরতে পারেনি।
যখন এখানে রোদ ঝকঝকে, কী যেন কী ধূর্ত পাকচক্র, দিবালোকে বানিয়েছে নাপাক শুকর, বামুনের কাঁধের পাঁঠাকে। পূর্ণ গ্রহণের পাখি, রাত ভেবে ধরেছে নীড়ের পথ বেলা দ্বিপ্রহরে। অন্যদিকে, মরা কার্তিকের শেষ শনিবার বেজোড় তারিখে, অমাবস্যা মিলে গেলে নিষ্ঠ মধ্যযামে, নরবলি শেষে অক্ষতযোনি রমণীর শবের ওপরে বসে অন্ধ কাপালিক, পান করে ফেনায়িত উষ্ণ খুন কঙ্কালের ধূসর খুলিতে, ঘূর্ণিঝড়ের মত উন্মত্ত ঠা ঠা হেসে ওঠে, তখন অচিরে, নূপুর বাজিয়ে নাচে মানচিত্রজুড়ে শুধু ঘাতক ধর্ষক। মরা ঘোড়া তখন নীরবে পিটপিট, একচোখ মেলে, দেখে দূরে উঠিতেছে নতুন প্রাসাদ, ছাদ পেটানোর গান গাহিতেছে সমস্বরে রাজেরা মধুর; কানে বুঝি ঢুকে গেছে বিন্দু বিন্দু শিশিরের পানি।
ফলত, আমাদের দিন আর রাতের কাহিনী নিক্তির ওজনে সমান। ছবি সাদাকালো হলে মায়াবতী শাড়ির আঁচলে, ধার করা চরকায় সুতা কেটে কেটে, ধবল জোছনা ঢালে মৃতের চোখের মত সাদা মরা চাঁদ।
কুলসুম
সারাটা বিকেল শুধু মেঘে মেঘে গেল
এখন ঝরছে। ফোঁটা লাফিয়ে উঠছে মনের চাতালে
আদুরে জলের গান কারা যেন জুড়েছে প্লেয়ারে
তোমাকে মনে পড়ছে খুব, কী করছো কুলসুম?
বসেছো লিখতে কিছু, বৃষ্টি দেখতেছো বারান্দার গ্রিলে?
কপালের কুন্তলে ছিটে এসে জলকণা হয়তো লেগেছে
মুছে নিও শুকনো আঁচলে, ঠান্ডার ধাত কি সেরেছে?
আমার এ ঘরে লোডশেডিং, বাতাসে জানালার পর্দা দুলছে
অন্ধকারে
রকিং চেয়ারে ঘুম ঘুম-
তোমাকে খুব মনে পড়ছে কুলসুম!