প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ‘মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২০’ পাচ্ছেন ছয় গুণী সাহিত্যিক ও সংগঠক। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর বরেণ্য কথাসাহিত্যিক নাসিমা আনিস (কথাসাহিত্যে), সরকার আবদুল মান্নান (প্রবন্ধ ও গবেষণায়), মনসুর আজিজ (কবিতায়), আহমেদ রিয়াজ (শিশুসাহিত্যে), কাজী শাহাদাত (সাহিত্য সংগঠক) এবং লোকগবেষণায় প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন (মরণোত্তর) পুরস্কার পাচ্ছেন।
বাংলা সাহিত্যে বিখ্যাত ‘সওগাত’ সম্পাদক ও সাহিত্য আন্দোলনের পথিকৃৎ মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এ বছর থেকে শিল্প-সাহিত্যের সংগঠন সাহিত্য মঞ্চ এই পুরস্কারটি প্রবর্তন করেছে। আগামীকাল ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ছয়টায় চাঁদপুর রোটারী ক্লাব মিলনায়তনে সাহিত্য মঞ্চের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দিনব্যাপী চাঁদপুর সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী পর্বে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। সাহিত্য সম্মেলনটি উদ্বোধন করবেন জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম এবং প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। ২ ডিসেম্বর বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি।
উল্লেখ্য, শক্তিমান কথাসাহিত্যিক নাসিমা আনিস ১৯৬২ সালের ১৬ নভেম্বর চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষা ও সাহিত্যে স্নাকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। প্রথম গ্রন্থ ‘মোহিনীর থান’ কাগজ প্রকাশন কর্তৃক তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার এবং দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘চন্দ্রভানুর পিনিস’ লিখে দৈনিক সমকাল নবীন কথাসাহিত্যিক পুরস্কার পেয়েছিলেন। স্বামী হাবিব আনিসুর রহমানও দেশের অন্যতম একজন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক। নাসিমা আনিসের উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত উপন্যাস : মোহিনীর থান, চন্দ্রভানুর পিনিস, বৃহন্নলা বৃত্তান্ত, স্বপ্ন আমরা বাঁচবো; গল্প : পিদিমের হবিষ্যি, কিডনির কারবার, কয়লা নামে কোনো জায়গা নেই।
সরকার আবদুল মান্নান একজন বহুমাত্রিক লেখক ও গবেষক। তিনি ১৯৬৪ সালে মতলব উত্তর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক। এ পর্যন্ত এনসিটিবির চেয়ারম্যানসহ সরকারের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : জগদীশ গুপ্তের রচনা ও জগৎ, শিক্ষা ও স্বদেশচিন্তা, বিতার রূপকল্প ও আত্মার অনুষঙ্গ, গল্পের আল্পনা, কবিতার স্থাপত্যরীতি ও অন্যান্য প্রবন্ধ, বাংলা কথাসাহিত্য আধুনিকতার কুশীলব। শিশুসাহিত্যে : দুষ্টু রাজকুমার ও অন্যান্য গল্প, জলের সঙ্গে শৈশব, কাক ও পুতুলের গল্প।
আহমেদ রিয়াজ একজন খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক। জন্ম ১৯৭৪ সালে, চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা শতাধিক। আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা ‘রুমা টু রিডা’ থেকেও তার গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, হেলেন অব ট্রয়, মেঘের হাতি, টুঙ্গিপাড়ার খোকা, পিস এন্ড হারমোনি, উড়াল পাতা, সাত গোয়েন্দা, উজাইয়ের গাধা, পাঁচ রসিকের গল্প। পাক্ষিক কিশোর ভুবন ও মাসিক কিশোর বাংলা’র নির্বাহী সম্পাদক এবং দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সাব-এডিটর তিনি।
মনসুর আজিজ নব্বই দশকের উজ্জ্বলতম কবি। জন্ম ১৯৭৪ সালের ১৫ আগস্ট, চাঁদপুরের হাইমচরে। ব্যবস্থাপনায় স্নাতক সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ও এমবিএ সম্পন্ন করেন। কবিতা আরাধ্য হলেও সাহিত্যের সকল শাখায় সমান বিচরণ তার। করছেন অনুবাদও। রাইটার্স অব বাংলাদেশ ও সাভার সাহিত্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সম্পাদনা করছেন ছোটকাগজ ‘আড্ডাপত্র’। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ২২টি। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : অতলান্ত নীলচোখ, অনন্ত আকাশের জ্যোতির্ম নক্ষত্র, মনুষ্যত্বের ল্যাম্পপোস্ট, শব্দের বেনারসি, জোড়াপাখি ফুলের রুমাল, জল ও জোয়ারের কাব্য, আঁধারের নাকফুল, সুনির্বাচিত কবিতা, আত্মধ্যানের আসন; উপন্যাস : জীবনবেলার বিকিকিনি; কিশোর কবিতাগ্রন্থ : নীল গালিচার স্বপ্ন; হৃদয়পুরের রাজা, মেঘের খোপায় পালক ভরে, নতুন ভোরে হীরের কুচি, সবুজ পাতা আঁকতে জানি, ছড়াগ্রন্থ : দুর্দিনের ছড়া; কিশোর উপন্যাস : ভেলায় চড়ে সারাবেলা।গবেষণা: শিশুর আচরণ শিশুর সাথে আচরণ।
কাজী শাহাদাত একজন দক্ষ সাহিত্য সংগঠক। জন্ম ১৯৬২ সালের ৫ এপ্রিল হাজীগঞ্জ উপজেলায়। তিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুর এর সাথে যুক্ত আছেন এবং বর্তমানে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি চাঁদপুরের লেখকদের লেখালেখির আঁতুড়ঘর হিসেবে খ্যাত দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক। তিনি চাঁদপুর প্রেসক্লাব এবং রোটারী ক্লাবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি সনাক, টিআইবিসহ বেশকিছু সামাজিক সংগঠনের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। একজন লেখক হিসেবেও রয়েছে যথেষ্ট সুখ্যাতি। তিনি ৮০’ দশকে সাহিত্য পত্রিকা নির্ভীক ও নির্ঝর সম্পাদনা করেন। তিনি শিল্প-সাহিত্যে অবদানের জন্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা, জাতীয় সাহিত্য পরিষদ পদক, ব্র্যাক মিডিয়া এ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।
প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন এর জন্ম ১৯৫২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর হাজীগঞ্জ উপজেলায়। চাঁদপুরের লোকসাহিত্য এবং জেলার ১৪৯৭টি গ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যা বিষয়ক গবেষণাগ্রন্থ ‘চাঁদপুর বড় রেলওয়ে স্টেশন গণহত্যা’ যা মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ট্রাস্ট কর্তৃক লোমহর্ষক গণহত্যার প্রামাণ্যপাঠ হিসেবে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ, চাঁদপুর জেলা’র প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন। রয়েছে একাধিক সম্পাদিত গ্রন্থ। লেখালেখি ও গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন লোকগবেষণায় ‘জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা, জাতীয় সাহিত্য পরিষদ পদক, রোটারী ফাউন্ডেশন কর্তৃক ‘সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’। আালোকিত এই মানুষটি ২০২০ সালের ১৬ জুন মৃত্যুবরণ করেন।
(সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)