অন্তহীন সাইলেন্স
∆
কিছু বৃষ্টিফোটা, কিছু থমথমে মেঘ আনাগোনা
কিছু আবদ্ধ জল, কিছু থমকে যাওয়া সময়
বিবর্ণ কিছু লতা, কিছু স্মৃতি, কিছু উত্তাপ
কিছু বোঝাবুঝি, কিছু বিশ্বাস, কিছু ভগ্ন পরিচয় ।
হাওয়ার ঝাপটা মানে না বারণ বোধাতীত
ছুঁয়ে যায় কেশ, মিহি ত্বক, চোখের ভাষা
কেনো বৈরী আকাশ খোঁজে ওম; রোদহীন কিনারাহীন
এমন উদাসী সৌরভে ফুলেরা রঙিন চেয়ে আছে দিশাহীন
কতটা বদলে গেছে হুইটম্যানের সাইলেন্ট্ সান্ মিসিসিপির মালভূমি
ক্লোভার ও টিমোথির শস্যভূমি অন্তহীন
কর্নমাঠে নবম-মাসের মৌমাছি গুঞ্জন;
অভিলাষী অন্তর্বর্তী চোখে যে প্রেমের জোয়ার
কতটা দ্বিধার দেয়ালে বাঁধা পড়ে হারিয়েছে অবেলায়
গ্রামীণ গার্হস্থ্য জীবন, স্বতঃস্ফূর্ত গানগুলি কি দিয়েছে স্বস্তি?
নির্বাক প্রকৃতিতে খুঁজে ফেরা এক অবিচ্ছেদ্য আধ্যাত্মিক নির্মলতা!
হলদে পাতাদের জড়সড় পতনোন্মুখ অন্বেষণে
আজও আসে স্বপ্ন-চৈতন্যের ডানায় কবিতা-অরন্য
সংকটের করিডোরে এখনও দাঁড়িয়ে বিষন্ন বিশ ।
বোধিনিরালার সংলাপ
(গৃহবন্দীত্ব করোনা পটভূমিতে লেখা)
∆
রোদের কণ্ঠহারে মাটিতে নেমে আসে আলোর ফুল
নরম ঘাসের বনজ ব্যাকুল গন্ধে জীর্ণ অন্তঃপুর
পাথর পলকে ভ্রাম্যমান মেঘ মুমূর্ষের জানালায় আপন করে নেয় প্রহরের মন্থরতা
হে নিঃসীম নগরী, কি গভীর শূন্যতায় করো হাহাকার ।
বিষন্ন কোটরে বন্দী আমি, অঙ্গসঙ্গে অসীম গগনের ।
কদমে কদম মিলিয়ে হাঁটবো বদল মওশুমে
সেতু টলমল, নীচে ঝিলের ঝলমলে নিতান্ত জল
আলগা বাতাসে গা ভাসিয়ে দূরান্তে ছুটে যেতে চাই
ছুটে যেতে চাই ।
একঘেয়ে বাড়ির দেয়াল, মূর্চ্ছাবিহবল বইয়ের স্তুপ
উদাস ঝরে নির্জনতা, আপোষী তৃষ্ণার ক্ষয়
গভীর কৌতূহলে ফুটে আছে টিউলিপ, ড্যাফোডিল
যেমন ফুটেছিল অজস্র রডোডেনড্রন রঙিন গালিচার মতো,
পাহাড়ের পাদদেশ জুড়ে,
অনাথ বালকের অন্তর্নিহিত মায়ের গল্পে ম্যানভিল ছিলো মায়ের রাজ্য ।
বনানী বৃক্ষ ছেয়ে পাখিদের কোলাহল ধূসর, লাল, হলুদ
পালকে ভর করে এদেশ ওদেশ, দিগন্তে মিলিয়ে যাওয়া সূর্যরেখা
শ্বাস ফুরাবার আগে অশান্ত ছুটে যেতে চাই, ছুটে যেতে চাই ।
বালিয়াড়ি ছুঁই ছুঁই পুরনো দিন, ডেজার্টেট ল্যান্ড
প্রতিটি মুহুর্তের ভেতর জীবন আঁকড়ে থাকা নিঃশ্বাস
সকালগুলো বন্দী ফুলদানিতে, সন্ধ্যা ক্যান্ডেলে পোড়ে
তুমুল খোলা তীর ঘেঁষে ছুটে যেতে চাই ছুটে যেতে চাই
স্রোতের সেতারে ঝিনুকের অনন্ত চুম্বনে
লুটানো শাড়ির আঁচলে একঝাঁক অতল সৈকত গর্জন কুড়াতে চাই ।
হাওয়ার রাজ্য মন্থর
∆
আগন্তুক এক আকাশ দেখি, কী দীর্ঘ নিসর্গচারিতা
চোখদুটো বিস্ময়নিবদ্ধ সংবেদনপিযাসী
কঠিনকালের অগ্নিদগ্ধ জমিনে
আলোর তরঙ্গে হেসে উঠি বৃত্তান্ত হাওয়ার ডাকে ।
এসো তবে শুনি, শুনি কোকিলের কুহু সবাক
বিদায়ী সূর্য কবিতার থালায়, এসো কুড়াই শব্দ
প্রজাপতি অদৃশ্য হয় পক্ষান্তরে অন্তিম ছায়াসঙ্গে
মনের ভেতর জেঁকে বসে নৈঃশব্দ্যের পরাগায়ন
মনে পড়বে বিহনবেলায় যে আছে অন্তরালে
কত কাছে থেকেও তোমার, আমি কতদূরে ।
কবির চোখ, মাটির পলক
∆
এ উতলা মৌসুম, রৌদ্র-বৃষ্টির অনন্ত বিশ্বলোক
কুসুমিত রাত্রির আপোষে নিষ্কান্ত আলোক
নিভৃতে উজাড় বহে অতল পয়মন্ত ঝোঁক ।
দ্যাখোনি, দমকপ্রবণ কবির চন্দ্রাহত চোখ?
অগ্নি, সুষমায় পোড়ে, পোড়ে স্বত্ব যোগাযোগ ।
মহাকালের অনুকম্পায় ধ্যানমগ্ন দিন ধীর
কালের আহুতি বিভাময়। আপতিত্ নিবিড়
বেগচ্যুত বাতাসে বেড়ে ওঠে গ্রন্থিল বৃক্ষ দূর্বার
তীর জুড়ে ঝরে তাবৎ মেঘের জখম শরীর
মুহূর্তে মুহু মুহু আত্মার কম্পন, আহ্নিক পারাবার ।
ফুটন্ত ফুলেদের অবোধ হাসিতে মায়ার বন্টন
পেছনে ফেলে আসা পথ মুহূর্তের বৃত্তাকার
দ্যাখোনি, অবসন্ন মাটির দৈন্য নগ্ন পলক ?
দীর্ণ চোখে সহে পৃথিবীর ভার, পেষণ পদপাত
কবির প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির অন্তরাল । অদৃষ্ট পরিণাম ।
বুকে গ্রন্থিবদ্ধ ব্যুহ অপরিতোষ । মূকবেশী উচ্ছ্বাস ।
……………
রওশন হাসান, নিউইয়র্ক, উত্তর আমেরিকা।