অলংকরণ: সুমাইয়া হক
ইলু পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। লেখাপড়ায় বেশ মনোযোগী।ফাস্ট বয়। সব স্যার তাকে খুব ভালোবাসে।একদিন ক্লাসে স্যার সবাইকে ভূত নিয়ে গল্প লিখতে বলেন। সবাই নিজের মত করে লিখে স্যারের কাছে জমা দেয়।
স্যার গল্প পড়ে অবাক চোখে ইলুর মুখের দিকে তাকায়। ইলু ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে, স্যার কিছু ভুল হয়েছে? স্যার উত্তর দিলেন, এতো সুন্দর ভূতের গল্প কী করে লিখলে! এরপর সবার দিকে চেয়ে বলেন, দেখ ইলু আমাদের ইস্কুলের অহংকার। গ্রেট ইলু। তুমি অনেক বড় লেখক হতে পারবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি লাইব্রেরিতে নিয়মিত গল্প, কবিতা এবং যা তোমার ভালো লাগে সব বই পড়বে। স্যারের কথায় ইলু বেশ খুশি। এখন থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি কত রকমের বই পড়তে পারবে সে।
ইলুর মনে আরো প্রেরণা সৃষ্টি হলো। অবসর সময়ে চমৎকার গল্প ও কবিতা লেখে। মাঝেমাঝে পত্রিকায় প্রকাশ হয়। নিজের নাম পত্রিকায় দেখে ইলু বেশ আনন্দিত হয়। এইভাবে লেখার গতি বেড়ে যায়।
বন্ধুরা ইলুর বেশ প্রশংসা করে। ছুটির দিনে ইসকুল বন্ধ। তাই বন্ধু ইফান, শুভ, আবিরকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে চলে যায়। দুষ্টুমি আর গল্প করতে করতে একটি বনের ভেতর কখন যে ঢুকে গিয়েছে তারা টেরই পায়নি। কোথাও মানুষ চোখে পড়ে না। চারদিকে নির্জন। কোন সময় যে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো তারা বুঝতে পারেনি। চার বন্ধু গাছের নিচে আরাম করে বসলো। কী করবে ভেবে পায় না। দূরে কিছুটা আলোর ছটা দেখা যাচ্ছে। ইলু সবাইকে দূরের আলোটা দেখিয়ে বলে, চলো আমরা সবাই আলোটার কাছে যাই; যদি সেখানে রাতটা পার করা যায়। সবাই হাঁটতে হাঁটতে মাঝ পথে দেখে এক বিরাট লম্বা মানুষ। তার মাথার দিকে তাকাতে প্রায় আকাশের দিকে তাকাতে হয়। হাত পা এতটা লম্বা যে দেখেই সবাই ভয়ে কাঁপতে থাকে। তাদের খুব ভয় হলো এত বড় মানুষ দেখে। সবাই ভাবলো, এটা ভূত ছাড়া অন্য কিছু না। অনেক বইতে ভূত-পেত্নীর গল্প পড়েছে। তাছাড়া দাদুর মুখে কত মজার গল্প এবং ভয়াল গল্প শুনেছে।
কুচকুচে অন্ধকারে ভূতেরা চলাফেরা করে। ভূতেরা নাক দিয়ে ফিসফিসিয়ে কথা বলে। তাঁদের ছায়া নেইই। তাঁরা আমাদের দেখতে পায় কিন্তু তারা কোন ছদ্মবেশ না ধরা পর্যন্ত মানুষ তাদেরকে দেখতে পায় না। সবাই বেশ ভয় পেলো।
কী করবে! কিভাবে বাড়ি ফিরবে! আজ হয়তো বাড়ি যাওয়া হবে না! সবাই কাঁদতে থাকে। ইলু সবাইকে বলে ভয় পেলে হবে না। কীভাবে বাড়ি ফেরা যায় উপায় বের করতে হবে। মাঝপথে ভূত তাঁদের থামিয়ে দেয়। ভূত হি… হি… হি… করে হাসতে থাকে। আর বলে, তোমরা একজন একজন করে আমার পায়ের নিচে আসবে।
কী মজা!
কী মজা!
সবাই ভয়ে আরো প্রচন্ড কাঁপতে থাকে। তারা জানে পায়ের নিচে গেলে ভূত তাঁদের পায়ের চাপে মারবে। এইভাবে তাদের সাথে ভূতের দ্বন্দ্ব হয়।
ইলু বুদ্ধি করে দুটো পাথর ঘষা দিলো এবং আগুনের বিচ্ছুরণে অন্ধকার বন আলোকিত হয়ে উঠলো। ভূতটা ভয়ে তাকালো চারদিকে! এত আলো এলো কোত্থেকে!ভয় পেয়ে পালাতে লাগলো লম্বা ঠ্যাঙঅলা ভূতটা।
সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ইলুকে আনন্দে ঘিরে ধরলো সবাই। ‘তুই কি করে বুঝলি আগুন জ্বালালে ভূতটা চলে যাবে?’
ইলু বলে, দাদুর মুখে অনেক গল্প শুনেছি যে; আগুন দেখলে ভূতেরা ভয়ে পালায়।
এবার কী করবো আমরা? বাড়ি যাবার কোন ব্যবস্থা করতে পারবো কি? সবাই চিন্তিত। কীভাবে বাড়ি যাবে। যাবার পথটি কোন দিকে অন্ধকারো কী করে খুঁজে পাবে। কেউই কিছু ভেবে বের করতে পারছে না।
হঠাৎ তাদের দেখা সেই আলোটার কথা মনে পড়লো। সবাই সে-দিকে পা বাড়ালো। কাছে যেতে যেতে পুরানো একটা বাড়ি দেখতে পেলো। সবাই কিছুটা খুশি এবং শঙ্কিত। রাতটা এখানেই কাটিয়ে দিবে বলে স্থির করলো। খুব ভোরে বাড়ি চলে যাবে বললো ইফান। ইলু সায় দিয়ে বললো, কথাটা মন্দ বলিস না।
পুরনো বাড়ি। নিরালা। জনবানব শুন্য। ধুলাবালি এবং মাকড়সার জালে পুরো বাড়িটা ঝিম মেরে আছে। লোহার দরজার সামনে দাঁড়াতেই খুলে গেলো আলতো করে। ঘরে ঢুকতেই বন্ধ হয়ে গেল নিরবে। সবাই বিস্মিত এবং হতবাক! এটা কি ভূতের বাড়ি! সবাই বুঝলো আবারো ভূতের কবলে পড়েছে ওরা। দূর থেকে যে আলো দেখেছিলো; তা মুলত ভূতেরই কারসাজি। এককোনে সবাই জড়ো হয়ে বসে রইলো আর একে অন্যকে দোষ দিচ্ছিলো ওরা।
সবার বেশ খিদে পেলো। কী করবে? কী খাবে? পেটটা চোঁ চোঁ করছে। হঠাৎ একটা ইজি চেয়ার দুলে ওঠে। কিন্তু কেউ বসলো না বা ধরলো না।
জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে মেঝেতে পড়েছে। ভেতরে আলো আঁধারের রহস্য খেলা করছে। হঠাৎ ঝুমঝুম নূপুরের শব্দ বেজে ওঠে। নূপুরের শব্দ তাহলে কী আরেক ভূত অথবা পেত্নীর! ভাবছে কী হচ্ছে এসব। খাট নড়ে, ইজি চেয়ার দোলে; খড়-খড় শব্দ হয়।
হাঠাৎ মিষ্টি কণ্ঠে বলে ওঠলো, বাচ্চারা তোমরা ভয় পেও না। আমি তোমাদের বন্ধু। আমি জানি তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত। তাই তোমাদের জন্য মিষ্টি নিয়ে এসেছি। এই দেখো হাঁড়ি ভর্তি মিষ্টি। তোমরা নির্ভয়ে পেট ভরে খাও। আমি তোমাদের অদৃশ্য বন্ধু। ভয় পেও না।
প্রথমে ইলু ভয়ে ভয়ে একটা মিষ্টি নিলো এবং বাকিরা একে অন্যের দেখাদেখি নিলো এবং পেট পুরে খেলো। মিষ্টিকণ্ঠের পরির মতো মেয়েটি চকচকে পিতলের গ্লাসে করে স্বচ্ছ পানি বাড়িয়ে দিলো তাদের দিকে। ওরা তৃপ্তিসহ পান করলো। এই পানির স্বাদ অন্যরকম।
ইলুর ঘুম ভাঙলো। দেখলো সকাল হয়ে গেলো। ইলু সবাইকে জাগালো এবং বাড়ি ফিরে এলো। এরপর থেকেই যখনি মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হয় বন্ধুরা মিলে সেই জংধরা বাড়িতে চলে যায় সন্ধ্যার পর।