এক
আমায় তুমি মরতে শেখালে
প্রথম পাপড়ি মেলে দিতেই ঝরতে শেখালে।
তুমি– তুললে একি ঝড়
আমার– স্বপ্নগুলো ভেঙে ভেঙে ভাঙলে এ অন্তর
মেঘে মেঘে মনের আকাশ ভরতে শেখালে।
ভাবি– কাঁদবো না তো আর
তবু– অশ্রু ঝরে ছুঁয়ে ছুঁয়ে বুকের হাহাকার।
দুটি চোখে জলের কাজল পরতে শেখালে।
দুই
পড়ন্ত বিকেলের মতো
তোমার হাতেও নাকি সময়ের স্বল্পতা আজ
তুমি বলো, বলো ঠিক কবে
যৌথ কবিতা লিখে খোলা হবে রাত্রির ভাঁজ।
গোলাপকে ছুঁয়ে দিয়ে শিশির যা বলে
সে কথা ফোটাতে হবে উপমা না উৎপ্রেক্ষাতে
দুটি চোখে প্রশ্নেরা মাতে
জবাব পেলেই
কবিতায় পাওয়া যেত অলঙ্কারের কারুকাজ।
সময়টা ফেরে যদি সুদীর্ঘ হয়ে
এসো তুমি খোলা হাওয়া, জোছনা ও জোনাকির সাথে
রইলাম সে অপেক্ষাতে
জেনো ততদিন
অন্তরে অস্ত যাবে না এই স্বপ্নের সাঁঝ।
তিন
প্রিয় মুখগুলি পার হতে হতে
ভিজে ওঠে বুক, ভিজে ওঠে চোখ দুটি
মা- মাটির ঘ্রাণ চায় না যে দিতে ছুটি।
ছায়া ছায়া গ্রাম নদী মেঠোপথ সবুজ মাঠের হাসি
বলে ওঠে ভালোবাসি
আমার ঠোঁটেও সে কথাই ফুটি ফুটি।
এই তো বিদায় বেলা
এ যেন হৃদয়বিদারক কোনো খেলা।
ফিরবো আবার এটুকুই শুধু প্রতীক্ষা হয়ে থাকে
সোনালি স্বপ্ন আঁকে
যে স্বপ্ন নিয়ে এই আমি জেগে উঠি।
চার
কী আলোয় হবে অভিসার
মরে গেছে চাঁদ আজ মরে গেছে জোছনা আমার
তুমি ফিরে যাও
অন্য কোথাও।
মরে গেছে আমার সে মেঘ
তোমাকে ভিজিয়ে দিতে ঝরাতো যে গহীন আবেগ
জোছনা বা বৃষ্টি ছাড়া
অভিসারে প্রেম ফোটে কার
তুমি ফিরে যাও
অন্য কোথাও।
দিয়ে গেছে সে এই মরণ
আমার জীবন যাকে দেয়া ছিল, দেয়া ছিল মন
অবশেষে শেষ তো সবই,
কিছু নেই তোমাকে দেবার
তুমি ফিরে যাও
অন্য কোথাও।
পাঁচ
রাই সাধিকা জানে শুধু শ্যাম নামের সাধন
কৃষ্ণধ্যানে অনন্তকাল মগ্ন রাইয়ের মন।
প্রাণ জুড়ে তার কৃষ্ণ-ছায়া
কায়ায় মেশে কৃষ্ণ-কায়া
দুই রূপের এক লীলায় ফোটে অরূপ মায়া
চির প্রেমের আলোয় তখন হাসে ত্রিভুবন।
শ্যাম ছাড়া নাই, নাইতো রাধা
শ্রী রাধিকা শ্যামের আধা
অন্তরে তার শ্যামের সাধন তাইতো সাধা
রাধিকা শ্যাম একাকারে কেবলই একজন।
ছয়
ও মন– মানুষ গুরুর চরণ সেধে যা
মিলবে চির অমূল্য ধন
সারা জনম পাসনি কেঁদে যা।
ভুলের ভিটায় বসত করে
সময় গেলো ঘোরে ঘোরে
মূল ঠিকানায় যাবি যদি গুরু নাম হৃদয়ে বেঁধে যা।
রূপের পর্দা টেনে
কোন আড়ালে অরূপ হাসে নিতে হবে জেনে।
ভাবের ঘরে ঢোকার চাবি
সহায় ছাড়া কোথায় পাবি
একা জানার বিষয় কি তা অভেদ থেকে এলো ভেদে যা।
সাত
যখন– দু চোখে দেখেছি ঢেউ ভরা নদী
এ বুকে দেখেছি দিগন্ত ছোঁয়া সবুজ অনিঃশেষ
আমি– তখনই হয়েছি, তখনই হয়েছি শ্যামলী বাংলাদেশ।
যখন– দেখেছি আমার নিঃশ্বাসে শুধু কোমল মাটির ঘ্রাণ
স্বপ্নে আমার আকাশ দোলানো নীল সাগরের গান
যখন– দেখেছি আমার মুখের ভাষায় জারি সারি সুর ছড়ায় মধুর রেশ
আমি– তখনই হয়েছি, তখনই হয়েছি শ্যামলী বাংলাদেশ।
যখন– দেখেছি আমার হৃদয় জড়ানো মানুষের মমতায়
আমার আশার পথ বয়ে চলে আগামীর ঠিকানায়
যখন– দেখেছি আমার প্রাণের গভীরে চির গর্বিত চেতনার উন্মেষ
আমি– তখনই হয়েছি তখনই হয়েছি শ্যামলী বাংলাদেশ।
আট
কেন সে আমাকে চায় আকাশের চাঁদ নামে ডাকতে?
আমি– চাই না তো চাঁদ হয়ে থাকতে।
যতই থাকুক চাঁদে মধুময় জোছনার সুখ
এক– সূর্যের আগুনে যে পোড়ে তার বুক
আমি– চাই না তো পুড়ে পুড়ে এ বুকে জোছনা ধরে রাখতে
আমি– চাই না তো চাঁদ হয়ে থাকতে।
যতই থাকুক চাঁদে বাসনা জড়ানো অনুরাগ
তার– হৃদয়ে রয়েছে শত কলঙ্ক দাগ
আমি– চাই না তো কোনো দিনই এ হৃদয় কলঙ্কে ঢাকতে
আমি– চাই না তো চাঁদ হয়ে থাকতে।
নয়
ছোট্টমণি লক্ষ্মীমণি
ঘুমের দেশে যাবে
সে আজ– স্বপ্ন লোকে ফুল পাখি আর পরীর দেখা পাবে।
সে আজ– চাঁদের হাতে হাতটি রেখে
নীল জোছনার আদর মেখে
মায়া মায়া দুটি চোখে
খুশির রঙ ছড়াবে।
সে আজ– তারায় তারায় ঘুরবে কত
করবে মজা অবিরত
আকাশটা কি চুপটি করে
এ সব কথাই ভাবে?
দশ
যে হৃদয় সবকিছু সয়ে যায়
শুধু সেই হৃদয় জানে
কোথায় কতটা তার ক্ষয়ে যায়।
কোথায় কতটা হয় রক্তক্ষরণ
কতটা মরণ
সে ভার সে একান্তে বয়ে যায়।
পোড়ায় নীরবে তার স্বপ্ন-ফাগুন
অদেখা আগুন
কোথাও সে পরিচয় রয়ে যায়।