এক.
ইচ্ছে আবার দেখব তোমায়
নির্জন কোন দিনে
আনমনা কোনো রক্তিম সাঁঝে
নদীতীর নেব কিনে।
বাউরি বাতাসে এলামেলো চুল
আকাশে মিশবে আছে যত ভুল
আমার দু’চোখ হবে না নীরব শান্ত।
অথবা কখনো রোদেলা দুপুরে
রমনার কোন ছায়ে
হাতের মুঠিতে জারবেরা ফুল
ফরাসি সুবাস গায়ে।
জড়াবো আবার মাধবীলতায়
সময় ফুরোবে কথায় কথায়
আমার অধীর মনটা হবে না ক্লান্ত।
কিংবা নিটোল সাজানো টেবিল
ধূসর রেস্তোরাঁতে
রবিঠাকুরের সুরমূর্ছনা
কফির পেয়ালা হাতে।
নতুন নয়নে তোমাকে খুঁজব
কোমল বাহুতে দু’চোখ গুজব
আমার পুরোনো ভাবনাটা করে ভ্রান্ত।
দুই.
রৌদ্রের তুলি দিয়ে কার্নিশ আঁকা
শরতের গান হবে লেখা
শিউলিগাছের ছায়া ফুলে ফুলে ঢাকা
এ দিনেও নেই তার দেখা।
রাজপথে রিকশার টুংটাং স্বর
চঞ্চলা পাখিদের সুর
মধ্যদুপুরে সব নীরব নিথর
কাশফুলে মন হলো চুর।
বিকেলের নীলাকাশে মেঘের কোলাজ
কেন তুমি সুদূরের রেখা।
গাড়ির বাঁশিতে কাঁপে কালো রাজপথ
দেখা যায় গোধূলির রেশ
ভেঙে পড়ে বারবার আবেগের রথ
দূরাকাশে রাতের আবেশ।
ওড়নার ভাঁজে ভাঁজে চাঁদের আলো
বসে আছি একা আমি একা।
তিন.
কেমন করে বোঝাই তোমায়
কত ভালবাসি
দখিন হাওয়ার মতো চলা
রাঁধাচূড়া হাসি।
দু’চোখ তারায় ধ্রুবতারার
আভিজাত্যের দ্যুতি।
কেমন করে বলি আমার
অগ্নি ভালোলাগা
দৃষ্টিটাকে পাথর করে
অহর্নিশি জাগা।
নিসাড় হয়ে রইল পড়ে
অভ্র অনুভূতি ।
কেমন করে লিখি আমি
ভুলে গেছি রীতি
হলো না আর ললিত রাগে
লেখা কোনো গীতি।
ভালোলাগার ফিনিক্স পাখি
দিল আত্মাহুতি।
চার.
চলে যেতে পারো তুমি
স্মৃতির পাহাড় রেখে
তোমার শোভা খুঁজে নেব
অরুন্ধতি থেকে
নাইবা হলো এ জীবনে
সখ্য তোমার সাথে।
কাতর হতে পারি আমি
দুঃখবিলাস ঋণে
তোমার ছোঁয়া মেখে নেব
শ্রাবণমেঘের দিনে
শান্ত শীতল ঝুম বরষার
ভেজা কোন প্রাতে।
না হয় তোমার ইচ্ছেপূরণ হবে
অঙ্গজুড়ে নাইবা তুমি রবে।
তোমার আস্বাদ নাই বা থাকুক
আমার উষ্ণ শ্বাসে
তোমার সুবাস ভেসে বেড়াক
পূবালী বাতাসে
পাগল করা কোনো মাতাল
চাঁদনীপসর রাতে ।
পাঁচ.
মিষ্টি রোদের এক বিকেলে
হলাম মুখোমুখি
আমার চোখে উতাল নদী
তুমিও বেশ সুখী,
দিনগুলো সব মুছে গেছে
তেমনি আছে পথ।
রৌদ্র মেখে আসতো উড়ে
ফুলের বুকে অলি
এখনও কি বিকেল হলে
ভাজো গানের কলি?
সবই স্মৃতি, ভেঙেচুরে
পড়ে আছে রথ।
মিষ্টি রোদের সেই বিকেলে
সুখ দিয়েছ আমায় ঢেলে
জ্বলজ্বলে সেই রঙিন ছবি
মনের ভেতর আঁকা
আজকে আকাশ সারি সারি
ধূসর মেঘে ঢাকা,
খোঁপার বাঁধন খুলে গেছে
ভেঙে গেছে নথ।
ছয়.
আমাকে পুড়িয়ে যদি সুখ পাও
যতবার খুশি পোড়াও
পুড়িয়ে ধূসর ছাইয়ের কণা
সুখনীলিমায় ওড়াও।
ভয় কেন পাও তোমার পার্শ্বে
থাকব অঙ্গাঅঙ্গি।
নতুন ভোরের শিশিরে জড়াবে
ইচ্ছে হয়েছে জড়াও
অবসান হবে তোমার মনের
বৃষ্টিবিহীন খরাও।
যেমন রয়েছে তেমনি থাকবে
আমার কোমল ভঙ্গি।
আমাকে হারিয়ে পুলকিত হবে
যেখানে সেখানে হারাও
চলবে জীবন সুখঅনুভবে
তোমার, আমাকে ছাড়াও।
সবকিছু মেনে কবিতাকে তাই
করেছি হৃদয়সঙ্গী।
সাত.
আকাশটা চলে গেছে আরো বেশি দূরে
বাতাসের মঞ্জুর হলো যেন ছুটি
কালশিটে গুমঘরে বসে আছি আমি
কার্নিশে চুপচাপ পায়রার জুটি।
ভুলে গেছি যেন আমি এই নিজেকেই।
আয়নায় আনমনা নিজের স্বরূপ
ডানাছেঁড়া ফড়িঙের অবিরাম শোক
দিবস গড়িয়ে যায়, ফের আসে রাত
নির্বাক বসে থাকি নিষ্প্রাণ চোখ।
মনে পড়ে চঞ্চলা দিনগুলো সেই।
কবে ফিরে পাবো সেই ডানামেলা দিন
ধোঁয়াটে ধূসর নয়, উতাল, রঙিন।
ভালোলাগা বোধগুলো চাপা পড়ে আছে
অনুভূতি নিশ্চল নিথর মনন
ভালো আর লাগছে না রঙহীন ছবি
ভাজা পাঁপড়ের মত ঝুরো এই ক্ষণ।
হারিয়ে ফেলেছি সব সূত্রের খেই।
আট.
একদিন তোমায় যেতে হবে
সকল মায়া ঝেড়ে
সোহাগছোঁয়া দিনের কাছে
যাবে তুমি হেরে
অসাড় দেহে চক্ষু বুঁজে
চলে যেতে হবে।
আপনজনের স্নেহে তোমার
উঠল দেহ বেড়ে
কতজনকে জায়গা দিলে
নিজের আসন ছেড়ে
তোমার আসার অপেক্ষাতে
প্রিয়জন কি রবে?
মরণের পর জায়গা হবে
মাটির বুকটা ফেঁড়ে
তোমার রবের আদেশ,বাণী
দেখেছ কি নেড়ে?
এত সম্পদ,মায়ার বাঁধন
রইবে পড়ে ভবে।
নয়.
একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে
স্বপ্নের হবে চাষ
দূর হয়ে যাবে ধরণীর যত
সংশয়, দ্বিধা,নাশ।
দু’চোখমণিতে স্বপ্ন কতই
পৃথিবীটা হবে আগের মতোই,
প্রিয় আবাসের বিনাশের দল
হবে মানুষের দাস।
শিশুরা ঘুরবে বাগানে আবার
প্রেমিক গাইবে গান
ঘরে ঘরে হবে উচ্ছ্বাসে ভরা
আনন্দ অফুরান।
মেনে নিয়ে আজ সব রীতিনীতি
পথচলা হোক,আর নয় ভীতি
আশার বৃষ্টি বয়ে যাক ভূমে
সকলের অভিলাষ।
দশ.
দুপুরবেলা সবাই ঘুমে
সূর্য আকাশ মাঝে
হলদে রোদের মাখামাখি
মেঘের ভাঁজে ভাঁজে
শালিক চড়ূই পাখিগুলো
করছে ডাকাডাকি।
আমার চোখে ঘুম আসে না
একলা বসে থাকি।
হঠাৎ কেমন আকাশমেয়ে
মুখটা করে কালো
সুয্যিমামা চলে গেল
সঙ্গে নিয়ে আলো
জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে
জলের ফোঁটা মাখি
আমার চোখে ঘুম আসে না
একলা বসে থাকি।
গাছের পাতায় জল ঝরিয়ে
বৃষ্টি গেল জুড়ে
খানিক বাদে তিনটে ঘুড়ি
আসল উড়ে উড়ে
লাল ঘুড়িটা চলে গেল
ছিঁড়ে সুতোর রাখি
আমার চোখে ঘুম আসে না
একলা বসে থাকি।