শালুক সুখের দিনে
স্বপ্নগুলো উড়ছে আমার উড়ছে আকাশ জোড়া
দু:খগুলো জ্বলছে জ্বলুক কেয়ার করি থোড়া
থোড়াই আমি আমার ভেতর করি বসবাস
আমার আমি যাই হারিয়ে গোমতী নদীর পাশ
গোমতী নদীর আ’লের ওপর গন্ধ শুঁকি নীলের
নীলের কাছে গল্প বলি বাড়ির পাশে বিলের
বিলের গায়ে রূপের বিভা সাজে নিরবধি
শীতের দিনে পাতার সবুজ বর্ষা এলে নদী
নদীর বুকে কলার ভেলায় শাপলা তোলার ধুম
শালুক সুখের দিনে আমার পালায় চোখের ঘুম
পালায় আমার দু:খগুলো সর্ষে ফুলের ঠোঁটে
ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা বেলির মতো ফোটে
ফোটে সবুজ তিতির ডগায় কল্পলোকের মুখ
চোখে-মুখে দুষ্টু হাসি স্বপ্ন পুষে বুক
বুকের সাহস দেখে যখন আকাশ নামে পাশে
আমি তখন যাই মিশে যাই শ্যামল দুর্বা ঘাসে।
উড়োরিক্সা
একটি নগর একলা ভীষন ঝাক মানুষের ভিরে
মানুষগুলোর নিত্য চলা পথগুলোকে ঘিরে
পথের পরে পথের পাশে দালান সারি সারি
এসব ঘিরেই ট্রাফিক জ্যামের আজব বাড়াবাড়ি
অবাক হলাম এই নগরে খোঁড়াখোঁড়ি দেখে
রাস্তাগুলোর বেহাল দশা এ হাল কবে থেকে!
কেউ কি জানে মুক্তি কোথায় দু:খ বলি কাকে
রাস্তাগুলো ক্ষুদ্ধ ভীষণ, জ্বালায় যাকে তাকে।
পথগুলোর এই কষ্ট দেখে ভাবছি যখন বসে
রিক্সাগুলোর ডানা হলে উড়তো শহর চষে
যেই ভেবেছি অমনি দেখি কাঁপছে আমার শরীর
রিক্সাগুলো দু’দিক থেকে মেলছে ডানা পরীর।
দুলছে ডানা রিক্সাগুলো উড়ছে শহর জোড়া
ট্রাফিক জ্যাম আর খোঁড়াখুড়ি নাথিং কেয়ার থোড়া
উড়ছে মানুষ উড়োরিক্সা জ্যামের ধকল রেখে
একটি নগর একলা ভীষন অবাক হলাম দেখে।
শীত সকালে লেপের ওমে
শীত সকালে লেপের ওমে কি যে মধুর ঘুম
সূর্য হেসে জানলা ঘেষে দেয় কপালে চুম
ঘুমের ঘোরে বিভোর যখন আম্মা বলেন জাগ
ভাল্লাগে না কিচ্ছু তখন বাড়তে থাকে রাগ
রেগেমেগে জেগেই আবার প্রাণ ফিরে পাই প্রাণে
যায় পালিয়ে রাগগুলো সব ভাঁপা-পুলির ঘ্রাণে
হুরমুড়িয়ে ভোঁ দৌড়ে চুলার ধারে যাই
পিঠার পেটের পুরটা আমার সবার আগে চাই
ওই দিকে সব হল্লা করে মাঠের দিকে যায়
আমি কি আর থাকি ঘরে কে আমাকে পায়!
হাতের তালু ভিজাই কোমল ধানের চাড়ার ওশে
ঘাসফড়িংয়ের ছানাপোনা লাফিয়ে ওঠে কোশে
লাফিয়ে ওঠে পতঙ্গরা যেই দিকে দেয় ছুট
সবুজ মাঠের সবটা জুড়েই আমার করপুট
করপুটেই তুলে আনি সর্ষে ফুলের রেণু
শীতের প্রেমে বুদ হয়ে ফের বাজাই সুখের বেনু।
উদাস রাতের রহস্যটা
বৃত্ত ভেঙে বৃত্ত গড়ার নিত্য আয়োজনে
মন পাখিটা উড়াল দিলো ঘনসবুজ বনে
অরণ্য তার উদার হৃদয় উদোম করে রাতে
মুক্ত হৃদয় ভিজতে থাকে জোসনা ধারাপাতে
ব্যালকনিতে তাকিয়ে দেখি বুড়ি চাঁদের মুখ
কেমন যেন উথাল-পাথাল দুলতে থাকে বুক
দুলতে থাকে আকাশটাও খলবলানো তারা
আকাশ থেকে হৃদয়টাকে হাতছানি দেয় কারা
উদাস রাতের রহস্যটা বাড়তে থাকে ঢের
বন্ধু পাখির কোলাহলে বৃত্ত ভাঙি ফের
অনেক আকাশ আমার বুকে সবুজ পাতার ঘর
রাত্রি-আমি-জোনাক সবাই বন্ধু পরস্পর।
রংধনু
আকাশ যেনো ফুলের বাগান মেঘগুলো সব ফুল
বৃষ্টি রোদের ডানায় ওড়ে পুলসিরাতের পুল
গ্রহান্তরের শিল্পী এসে রঙ মাখে তার গায়
এই পৃথিবীর চোখগুলো নীল আকাশ ছেড়ে যায়
দূর আকাশের ওপাশ নাকি ফুল পরীরা থাকে
তারাই বুঝি রংতুলিতে রাঙায় আকাশটাকে!
তাইতো খুজি রঙের ভুবন ফুলপরীদের ঘর
কোন সিঁড়িটা পেড়িয়ে পাবো কয়টা আকাশ পর?
আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে যখন খুঁজছি পরীর হাত
তখন দেখি রংধনুটা হচ্ছে ভীষণ কাত
মুচকি হেসে যাচ্ছে ছুয়ে গাছের সবুজ পাতা
ভাবছি ওটা কিসের মতো, বিশাল কোনো ছাতা?
ছাতার হাতল ধরতে গিয়ে খাচ্ছি কেবল ধোকা
যতই কাছে যাচ্ছি ওটার হচ্ছি অমন বোকা
এগুই যত রংধনুটা পালায় ততো দূর
ঘোর কাটে না আমার তবু ঘোরটা সুমধুর।