আড্ডাপত্র

৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১; ২১ নভেম্বর, ২০২৪;দুপুর ১২:২০

সরদার ফজলুল করিম এর সাড়া জাগানো ‘দর্শনকোষ’ ll পর্ব-১

আড্ডাপত্র

অক্টো ৬, ২০২০ | দর্শনতত্ত্ব

[সরদার ফজলুল করিম এর সাড়াজাগানো ‘দর্শনকোষ’ প্রথমে বাংলা একাডেমী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে। পর্ববর্তীতে বাংলা একাডেমী গ্রন্থাকারে বের করে ‘দর্শনকোষ’। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। ১৯৭৩, ৮৬ ও ৯৫ সালে বের হয় তিনটি সংস্করণ। এরপর অন্যান্য প্রকাশনী থেকেও ‘দর্শনকোষ’ বের হয়। গত অর্ধশতাব্দীকাল ধরে ‘দর্শনকোষ’ এর গুরুত্ব এতটুকু কমেনি। বরং এর পাঠক সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। পাঠকের চিন্তাকে নাড়া দিতে দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম এর অবদান অপরিসীম। তাঁর দর্শনকোষ আড্ডাপত্র’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে]

Abelard, Pierre: পিয়ারে আবেলার্দ (১০৭৯-১১৪২ খ্রি.)

একাদশ ও দ্বাদশ খ্রিষ্টাব্দের ফরাসি দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ববিদ। ‘ইউনিভার্সাল’ বা অনন্য-নির্ভর ভাবের অস্তিত্বের প্রশ্নে আবেলার্দ মন-নির্ভর ভাবের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। যুগের পরিপ্রেক্ষিতে আবেলার্দের মন-নির্ভর ভাবের মতবাদ ভাবাদর্শের অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছিল। তাঁর ধর্মব্যাখ্যাও খ্রিষ্টান ধর্মের ‘গোঁড়া ক্যাথলিক মতের’ বিরোধী ছিল। আবেলার্দের ‘সিক এট নন’ ‘হাঁ এবং না’ নামক গ্রন্থখানি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে। এই পুস্তকে তিনি যাজক সম্প্রদায়ের প্রচারিত ধর্মীয় ব্যাখ্যার পরস্পর-বিরোধিতা প্রতিপন্ন করেন এবং ধর্মের প্রশ্নে যুক্তিকে অগ্রাধিকার দান করেন। প্রশ্নের ক্ষেত্রে সমাধান না থাকলেও তাঁর আলোচনার দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি মানুষের যুক্তিকে তীক্ষ্ণ এবং যুক্তিমূলক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবেলার্দের অভিমত ছিল, ধর্মীয় বিশ্বাস-বহির্ভূত যে-কোনো সমস্যার সমাধানের জন্য দ্বন্দ্বমূলক যুক্তিবাদী পদ্ধতি হচ্ছে একমাত্র পদ্ধতি। আবেলার্দের জীবনকালে তাঁর অভিমত অধিকাংশ দার্শনিকের নিকট গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত না হলেও যুগের বিভিন্ন প্রকার কুসংস্কারের মোহ থেকে মানুষকে মুক্ত করতে বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছিল। আবেলার্দ বলতেন, ‘ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা বাদ দিলে এমন কিছু নাই যাকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করা যয়ি। ধর্মযাজক কিংবা প্রেরিত পুরুষ কেউই ভুলের উর্ধ্বে নয়’।

আবেলার্দের এরূপ যুক্তিবাদী মতের জন্য গোঁড়া ক্যাথলিক সম্প্রদায় তাঁকে সমাজচ্যুত করেছিল।

Absolate: পরম বা চরম সত্তা

ভাববাদী দর্শনে ‘পরম সত্তা’ একটি মৌলিক ধারণা। এই দর্শনের ব্যাখ্যানুযায়ী পরম সত্তা হচ্ছে চরম সম্পূর্ণ এক অস্তিত্ব। সমস্ত খণ্ড অস্তিত্ব পরম সত্তার প্রকাশ। কিন্তু কোনো খণ্ড অস্তিত্ব আপন শক্তিতে পরম সত্তার কোনো হানি বা অপূর্ণতা ঘটাতে পারে না। পরম সত্তা স্বয়ংসম্পূর্ণ। খণ্ড অস্তিত্বের সাধারণ সম্মেলনও পরম সত্তার সৃষ্টি নয়। পরম সত্তা সমস্ত সৃষ্টির মূল শক্তি। পরম সত্তা নির্বিশেষ সত্তা। সর্বপ্রকার বিশেষ-প্রকাশ-নিরেপেক্ষ সে। বস্তুবাদী দর্শন খণ্ড অস্তিত্ব বা বিশেষ-নিরপেক্ষভাবে কোনো পরম এবং নিরাকার অস্তিত্বকে স্বীকার করে না। পরম সত্তাকে বিভিন্ন ভাববাদী দার্শনিকের তত্বে বিভিন্ন নামে অবহিত হতে দেখা যায়। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর দর্শনে পরম সত্তা ‘দি আইডিয়া’ বা বস্তু নিরপেক্ষ ভাব বলে ব্যাখ্যাত হয়েছে। ফিকটে অহংবোধ ‘আমি’কে পরম সত্তা বলেছেন। হেগেলের দর্শনে পরম সত্তাকে এক সার্বিক এবং পরম ভাব বলে প্রকাশ করা হয়েছে। শপেনহার ‘ইচ্ছা শক্তি’কেই পরম সত্তা বলেছেন। বার্গসাঁ একে ইনটুইশন বা স্বজ্ঞা বলেছেন। ধর্মের ক্ষেত্রে সর্বশক্তিমান স্রষ্টাকে পরম সত্তা বলে অভিহিত করা হয়।

Absolute and Relative: নিরপেক্ষ এবং সাপেক্ষ

যুক্তিবিদ্যায় যে পদ অপর কোনো পদের উপর নির্ভরশীল নয় তাকে নিরপেক্ষ পদ বলে।, যেমন- মানুষ, পানি, মাটি। অপরদিকে যে পদের অর্থ অপর কোনো পদের উপর নির্ভরশীল তাকে রিলেটিভ আ আপেক্ষিক পদ বলে। যেমন- ছাত্র কিংবা শিক্ষক ছাত্র-শিক্ষককে যুক্তভাবে পরস্পর নির্ভরশীল পদ বা ‘কোরিলেটিভ টার্মস’ বলে। দর্শনে অনন্য- নির্ভর সত্তাকে এ্যাবসোলিউট এবং কোনো সত্তার উপর নির্ভরশীল নয়; অপর কোনো সত্তার সঙ্গে সে যুক্ত নয়। অনন্য-নির্ভর সত্তা স্বয়ংসম্পূর্ণ; তার কোনো পরিবর্তন নাই।

আপেক্ষিক সত্তা অপর সত্তার সঙ্গে সংযুক্ত। পারস্পারিক নির্ভরতা এবং সম্পর্কের ভিত্তিতেই সামগ্রিক সত্তা অপর সত্তার সঙ্গে সংযুক্ত। পারস্পারিক নির্ভরতা এবং সম্পর্কের ভিত্তিতেই সামগ্রিক সত্তার উদ্ভব। সামগ্রিক সত্তার প্রতি অংশ অপর অংশের সঙ্গে সংযুক্ত। সেই সংযোগের ভিত্তিতেই প্রতিটি অংশ বা খণ্ডের বৈশিষ্ট্য নির্দিষ্ট হয়। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের মতে অনন্যনির্ভর স্বাধীন এবং অপরিবর্তনীয় চরম বলে কিছু নাই এবং তেমন কোনো অস্তিত্বের কল্পনা করাও চলে না। অস্তিত্বমাত্রই আপেক্ষিক। আপেক্ষিকের জটিল সম্মেলনে সে সামগ্রিক সত্তা সে তার অংশসহ নিরন্তর পরিবর্তমান ও বিকাশশীল।

Absolutism: নিরঙ্কুশতা

শাসনের অবাধ ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ শাসন বলা হয়। নিরঙ্কুশ শাসনে জনসাধারণ প্রত্যক্ষভাবে কিংবা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে সরকারে কোনোরূপ অংশগ্রহণ করার অধিকার ভোগ করে না। নিরঙ্কুশ শাসনের বিপরীত হলো গণতান্ত্রিক শাসন।

গণতান্ত্রিক শাসন-পদ্ধতিতে কোনো এক ব্যক্তি বা সম্রাট শাসনের একচ্ছত্র অধিকার ভোগ করে না। নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণকে শাসন করে। গণতান্ত্রিক বা প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার আধুনিককালের সর্বজন স্বীকৃত এবং কাম্য ব্যবস্থা বলে পরিচিত। প্রাচীন গ্রিসে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। অবশ্য প্রাচীন গ্রিসের এই গণতন্ত্রে দাসদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। গ্রিক সভ্যতার ধ্বংসের পরবর্তীকাল থেকে আধুনিক পুঁজিবাদী বিপ্লব পর্যন্ত ইউরোপে এবং অন্যত্র সমন্ততান্ত্রিক যুগে রাজা বা সম্রাটদের একচ্ছত্র অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাই প্রচলিত ছিল।

Abstract and Concrete: বিমূর্ত এবং মূর্ত

যুক্তিবিদ্যায় যে পদ দ্বারা বস্তু-নিরপেক্ষভাবে কোনো গুণ বুঝায় তেমন পদকে গুণবাচক বা এ্যাবসট্রাক্ট পদ বলে। যথা, মনষ্যত্ব, দয়া, অন্ধত্ব। অপর পক্ষে যে পদ দ্বারা কোনো বস্তু বুঝায় তাকে বস্তুবাচক পদ বা কনক্রিট টার্ম বলে। যথা, গাছ, রহিম, ঢাকা শহর ইত্যাদি।

দর্শনে যা ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য নয় তাকে বিমূর্ত এবং যা ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য তাকে মূর্ত বলা হয়। মূর্ত এবং বিমূর্তের প্রশ্নে ইতিহাসে মত পার্থক্য দেখা যায়। ভাববাদী দর্শনে বিমূর্তকেই পরম বলে মনে করা হয়। বস্তুবাদী দর্শনে মূর্তের গুণাগুণকে মানসিকভাবে বস্তু থেকে বিচ্ছিন্নভাবে চিন্তা করাকে বিমূর্ত ক্ষমতা বলা হয়। উনবিংশ শতকে জার্মান দার্শনিক হেগেল মূর্ত এবং বিমূর্তের জ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুনতর ব্যাখ্যাসহ প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন। হেগেল মূর্ত এবং বিমূর্তের একটি দ্বন্দ্বমূলক এবং নিত্য বিকাশমান সম্পর্কের কল্পনা করেন। হেগেলের নিকট বিমূর্ত মূর্তের বিপরীত কোনো ভাব বা বস্তু নয়। নিরন্তর বিকাশে মূর্ত বিমূর্তে পরিণতি লাভ করে। এই বিমূর্ত আবার মূর্তেও প্রকাশিত হয়। হেগেলের চরম বিমূর্ত অবশ্য একটি ভাববাদী ধারণা। সে ব্যাখ্যায় চরম বিমূর্তের আংশিক প্রকাশ। ইতিহাস, সমাজ, বস্তুজগৎ: সবই এরূপ ব্যাখ্যায় চরম বিমূর্তের মায়ারূপ প্রকাশ-স্থায়ী সত্য নয়। বস্তুবাদী দর্শন, বিশেষ করে মার্কসবাদী দর্শন হেগেলের মূর্ত-বিমূর্তের ব্যাখ্যায় পরস্পর-বিরোধিতা আরোপ করে। মার্কসবাদী দার্শনিকদের মত মূর্তের বিকাশ ও সামগ্রিকতাই যদি বিমূর্তের সৃষ্টি, তবে মূর্তবিচ্ছিন্নভাবে বিমূর্তের কোনো অস্তিত্ব নেই। তেমন ক্ষেত্রে মূর্তই চরম সত্য, বিমূর্ত নয়। এবং সমাজ, ইতিহাস, জগৎকে বিমূর্তের ভ্রান্তিকর খণ্ড প্রকাশ বলাও যুক্তিসঙ্গত নয়।

মার্কসবাদী দর্শনের মতে ইন্দ্রিয়াদি অর্থ্যাৎ মানুষের জ্ঞান-মাধ্যমের গ্রাহ্য বস্তু, ভাব এবং ভাবনা অর্থ্যাৎজ্ঞান সাপেক্ষ জগৎই সত্য। জ্ঞান-সাপেক্ষ জগতের সামগ্রিক ধারণাই বিমূর্ত ধারণা। জ্ঞেন-জগতের উধ্বে কোনো অজ্ঞেয় বিমূর্ত সত্তা নেই। জ্ঞান-সাপেক্ষ-মূর্ত জগতের প্রতিটি অংশের সঙ্গে পারস্পারিক সম্পর্কে সম্পর্কিত।

সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘এ্যাবষ্ট্রাক্টের’ অর্থ হচ্ছে কোন কিছুর আংশিক বা অপূর্ণ ধারণা। ‘সাধারণ জ্ঞান’, ‘সাধারণ ধারণা’ এরূপ কথা দ্বারা এই ভাবটি ব্যক্ত করা হয়। এর বিপরীত ভাবে ‘কনক্রিট’ কথাটি ব্যবহৃত হয়। কনক্রিট বলতে কোনো কিছুর বস্তুগত বা নির্দিষ্ট ধারণাকে বুঝায়।

Abdul Gaffar Khan: আব্দুল গফফার খান (১৮৯১-১৯৮৮)

‘খান আব্দুল গফফার খান’রূপে ইনি পরিচিত। আফগানিস্তানের পার্শ্ববর্তী ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত এলাকার অধিবাসী। উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের আন্দোলনকালে গান্ধীজির অহিংস নীতির অনুসারী বলে ‘সীমান্ত গান্ধী’ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। পুশতুভাষী এই অঞ্চলের অধিবাসীগণ নিজেদের একটি বিশিষ্ট জাতি বলে বিবেচনা করে। ভারত বিভাগের ফলে পাকিস্থানভূক্ত হলেও খান আব্দুল গফফার খান তাঁর এলাকার আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ‘পাখতুনিস্তান’ আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। তিনি ‘খোদাই খেদমতগার’ নামক সেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা। ইংরেজ শাসনের কাল ব্যতীত পাকিস্তান আমলেও তাঁর স্বাধীনচেতা এবং পাখতুনদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবির কারণে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। সীমান্ত অঞ্চলের অধিবাসীবৃন্দ প্রকৃতিগতভাবে দুর্ধর্ষ বলে পরিচিত। তাঁদের জনপ্রিয় নেতার মৃদুভাষণ, নম্র আচরণ এবং আপন নীতিতে অনমনীয়তা খান আবদুল গফফার খানকে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন করেছে। বয়সের দিক থকে শতবর্ষ পূরণের নিকটবর্তী বয়সেও তিনি রাজনৈতিক জীবন যাপন করেছেন এবং পাখতুনদের আত্মনিয়ন্ত্রনের সংগ্রামী জীবনের স্বীকৃতি হিসাবে তাঁকে নেহেরু অ্যাওয়ার্ড (১৯৬৭) এবং ভারত রত্ন (১৯৮৭) প্রদান দ্বারা সম্মানিত করে। ১৯৮৮ সনে তাঁর মৃত্যু হয়।

Abul Kalam Azad, Maolana: মৌলানা আবুল কালাম আজাদ (১৮৮৮-১৯৫৪)

ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম জাতীয়তাবাদী নেতা এবং ইসলাম ধর্মের প্রাজ্ঞ পণ্ডিত। পিতা মওলানা খায়রুল দীন এবং পিতামহের সূত্রে মৌলানা আজাদের পরিবারের আরবের হেজাজ এবং মক্কার সঙ্গে সংযোগ ছিল। তাঁর পিতা একজন প্রখ্যাত পির ছিলেন এবং বোম্বে, কলকাতা এবং রেঙ্গুনে তার প্রচুর সংখ্যক মুরিদ ছিল।

আবুল কালামের শিক্ষা প্রধানত গৃহের মধ্যে পারিবারিক প্রথায় পরিচালিত হয়। কিন্তু কিশোরকাল থেকেই আবুল কালাম ছিলেন বিষ্ময়কর প্রতিভার অধিকারী। “প্রাচীন শিক্ষা পদ্ধতির পাঠক্রমের সবগুলি শিক্ষণীয় বিষয় তিনি পিতার শিক্ষকতায় পূর্ণভাবে আয়ত্ত করেন। ইহার পরে আজাদ গভীর ব্যক্তিগত অধ্যয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদ্যায় অসাধারণ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। ভাষাগুলির মধ্যে তিনি প্রথমে ফরাসি এবং পরে ইংরেজি শিক্ষা লাভ করেন।” কিশোরকাল থেকেই তিনি কবিতা রচনা করতেন। এবং ‘আজাদ’ তাঁর কবিনাম। উর্দূ ভাষায় তিনি ক্ষমতাবান বাগ্মী ছিলেন। কিশোর বয়সে মাসিক সাহিত্যপত্র ‘লিসানাল সিদক’ সম্পাদনা করেন। ১৯১২ সনে কোলকাতা থেকে সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘আল হেলাল’ তাঁর সম্পদনায় প্রকাশিত হয়। প্রথম মহাযুদ্ধকালে যুদ্ধ সম্পর্কে ‘আল হেলালের’ ব্রিটিশ সরকার বিরোধী মতের কারণে ব্রিটিশ সরকার প্রথমে পত্রিকা থেকে জামানত তলব করে এবং জামানত বাজেয়াপ্ত করে। মৌলানা আজাদের মতামত সর্বদাই ইংরেজ সরকারের বিরোধী এবং ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে সংগ্রামী চরিত্রের ছিল। তাঁর রাজনৈতিক মতের জন্য ১৯১৬ সনে তাঁকে কলকাতা থেকে বহিস্কার করা হয় এবং রাঁচিতে নজরবন্দি করে রাখা হয়। ১৯২০-এ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে মৌলানা আজাদ বঙ্গীয় প্রাদেশিক খেলাফত কনফারেন্সের সভাপতি হন। আমৃত্যু ভারতের সকল সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে ‘ভারতীয় জাতি’মূলক জাতীয়বাদী চেতনায় তিনি উদ্বুদ্ধ ছিলেন এবং ত্রিশের দশক থেকে সাম্প্রদায়িক হানাহানি এবং বিভেদ বৃদ্ধি পেলে এবং মুসলিম লীগ মুসলমানদের একমাত্র প্রতিষ্ঠান বলে মুসলিম লীগ নেতা মি. জিন্নাহ দাবি করলেও মৌলানা আজাদ সাম্প্রদায়িক চিন্তা প্রবাহের বিরুদ্ধতা করেন এবং অবিচলভাবে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ইংরেজের সঙ্গে স্বাধীনতার আলোচনাকালে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতিত্ব করেন। ১৯৪২-এর আগষ্ট মাসে ‘ইংরেজ, ভারত ছাড়’ আন্দোলন শুরু হলে গান্ধীসহ কংগ্রেসের অপর সকল প্রখ্যাত নেতার সাথে মৌলানা আজাদ কারারুদ্ধ হন। “রাঁচীর নজরবন্দি থেকে জুন ১৯৪৫ পর্যন্ত তাঁর বন্দি জীবনের দৈর্ঘ্য মোট দশ বৎসর সাত মাস হয়।” স্বাধীনতার পরে ১৯৪৭ সনে তিনি ভারতের শিক্ষামন্ত্রী হন এবং মৃত্যু পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। ধর্ম এবং রাজনীতিক অভিমতমূলক যে সকল গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন তার কোন সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা সহজ নয়। তাঁর মৃত্যুপূর্বকালে আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘ইণ্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’ বা ‘ভারতের স্বাধীনতালাভ’ গ্রন্থ তাঁর নির্দেশমতো মৃত্যুর পরে একটা নির্দিষ্টকাল অতিক্রম শেষে প্রকাশ করা হয়। এই গ্রন্থে তাঁর রাজনৈতিক নানা অভিমত নিঃসঙ্কোচে প্রকাশিত হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্থান রাষ্ট্র যে অধিককাল দ্বন্দ্বহীনভাবে বজায় থাকতে পারবে না, এ ভবিষ্যদ্বাণীও তিনি উক্ত পুস্তকে প্রকাশ করেন।

Academy of Plato: প্লেটোর একাডেমী

গ্রিক ‘একাডেমীয়া’ শব্দ থেকে ইংরেজি একাডেমী শব্দেরউৎপত্তি। প্রাচীন গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের একটি বাগানকে একাডেমাসের বাগান বলা হয়। খ্রি. পূ. ৩৮৭ সনে প্লেটো এখানে দার্শনিক আলোচনার একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা করেন। পূর্বে এই বাগানে গ্রিক দেব-দেবীদের উদ্দেশে পশু উৎসর্গ করা হতো। এথেন্সের একাডেমীর ইতিহাসে তিনটি পর্যায়ের কথা জানা যায় (১) প্রথম পর্যায় বা প্লেটো পর্ব। প্লেটো পর্বে প্লেটোর পরে স্পুসিয়াস, জেনোক্রাটিস এবং পলেমনকে একাডেমীর সঙ্গে যুক্ত দেখো যায়। (২) দ্বিতীয় পর্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে আরসেসিলাস পরিচিত। এটাকে একাডেমীর মধ্যযুগ বলেও অভিহিত করা হয়। এই যুগে আলোচনার লক্ষ্য ছিল প্রাচীন স্টোয়িক বা প্রতিরোধহীন সমর্পণবাদকে খণ্ডন করা হয়। আরসেলিলাসের পরে আসেন ল্যাসিডিষ। (৩) তৃতীয় পর্যায়কে একাডেমীর নবপর্যায় বলেও অভিহিত করা হয়। এই পর্বের প্রধাস উদ্যোগী চিন্তাবিদ ছিলেন কারনিয়াডিস। কারনিয়াডিসের চিন্তাধারা পূর্বতন সন্দেহবাদের প্রকারবিশেষ।

প্লেটো ৩৪৭ খ্রি.পূ. অব্দে মারা যান। প্লেটোর মৃত্যুকাল পর্যন্ত দার্শনিক এ্যারিস্টটল একাডেমীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই সময়ে অন্যান্য দার্শনিক যাঁরা একাডেমীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে জ্যোতিৃর্বিদ ইউডোক্সাস এবং ফিলিপাস, গণিত শাস্ত্রবিদ থিটিটাস এবং একাধারে সমাজতত্ত্ববিদ, ভূগোলবিদ এবং বৈজ্ঞানিক হিরাক্লিডিস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রথম যুগকেই একাডেমীর স্বর্ণযুগ বলা যায়। এই যুগে একাডেমীর সদস্যগণ প্রতিষ্ঠানটিকে একটি মুক্তবুদ্ধি গবেষণা এবং দর্শন সম্পর্কিত আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন। এই যুগে মতামতের দ্বন্দ্বে দেখা যায় যে, স্পুসিপাস প্লেটোর বস্তুনিরপেক্ষ ‘পরমভাব’-এর ধারণাকে খণ্ডন করে ‘আংকিক সংখ্যাই হচ্ছে একমাত্র নিত্যসত্য’- পাইথাগোরীয় সম্প্রদায়ের এই অভিমতকে সমর্থন করেছেন। পুসিপাস আরো দাবি করেন যে, ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই আমরা সত্যজ্ঞান লাভ করতে পারি। প্রাকৃতিক জগতের ইতিহাস বর্ণনাতেও স্পুসিপাসের আগ্রহ ছিল। একাডেমীর আদি যুগের অন্যতম দার্শনিক জেনোক্রাটিস প্লেটোবাদ এবং পাইথাগোরীয়বাদের মধ্যে একটি সমঝতোতা স্থাপনের চেষ্টা করেন। তিনি একদিকে প্লেটোর নিকট থেকে সমস্ত অনিত্য প্রকাশের পেছনে এক নিত্য সত্তার অস্তিত্বকে গ্রহণ করেন, অপরদিকে নিত্য এবং অনিত্যের সংঘাতে সংখ্যার উৎপত্তি হয় বলে অভিমত প্রকাশ করেন। খ্রিষ্টাব্দের চতুর্থ এবং পঞ্চম শতকে একোডেমীর মতাদর্শ নব-প্লেটোবাদ বলে পরিচিত হয়। ৫২৯ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ান একাডেমীর আলোচনা নিষিদ্ধ করে প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধ করে দেন। ইউরোপে নব জাগরণের যুগে (১৪৫৯-১৫২১) ফ্লোরেন্স শহরে ‘একাডেমী’ নামে আলোচনা ও গবেষণার নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়। এই পর্যায়ে প্লেটোর রচনাবলীর উদ্ধার এবং অনুবাদ এবং এ্যারিস্টটলের দর্শনের নতুনতর ব্যাখ্যা গুরুত্ব লাভ করে।

‘একাডেমী’ বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত শব্দ। একাডেমী শব্দ দ্বারা সাহিত্য, শিল্প এবং বিজ্ঞানের আলোচনা ও গবেষণার কেন্দ্রে বা প্রতিষ্ঠানকে বুঝান হয়। এই অর্থে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই ‘একাডেমী’ নামক প্রতিষ্ঠানকে কার্যরত দেখা যায়। বিশ্বের বিখ্রাত একাডেমীগুলির মধ্যে ফরাসি একাডেমী, ইংল্যাণ্ডের ব্রিটিশ একাডেমী, গ্রিসের একাডেমীয়া এথেন্স, জাপানের দি ন্যাশনাল একাডেমী অব জাপান, আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের দি নিউইয়র্ক একাডেমী অব সায়েন্সস এবং রাশিয়ার একাডেমী অব সায়েন্সস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের বাংলা একাডেমীও একটি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান।

Accident, Accidens: অবান্তর লক্ষণ

যুক্তিবিদ্যায় বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত একটি শব্দ। একটি পদের গুণ যদি এমন হয় যে, গুণটি কিংবা গুণসমূহ উক্ত পদের জাত্যর্থ বা কানোটেশনের অন্তর্ভূক্ত নয়, জাত্যর্থ থেকে উদ্ভূতও নয়-অর্থ্যাৎ উক্ত গুণকে পদের জাত্যর্থ থেকে অনুমান করা চলে না; কিন্তু গুণটিকে পদের মধ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে দেখতে পাওয়া যায়, তা হলে এরুপ গুণটিকে পদের মধ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে দেখেতে পাওয়া যায়, তা হলে এরূপ গুণকে উক্ত পদ বা টার্মের এ্যাকসিডেন্ট বা এ্যাকসিডেন্স বলা হয়। বাংলাতে এক ‘অবান্তর লক্ষণ’ বলা যায়। অনেক মানুষের ‘চুল কালো’, এই দৃষ্টান্তে চুল কালো বা কালো চুল থাকার গুণটি মানুষ পদের অবান্তর লক্ষণ। এ গুণটি ‘মানুষ’ হওয়ার অপরিহার্য গুণ হচ্ছে ‘জীবন্তু এবং যুক্তিবাদিতা’। অবান্তর লক্ষণ একটি পদের বিচ্ছেদ্য কিংবা অবিচ্ছেদ্য গুণ বলেও বিবেচিত হতে পারে। যে অবান্তর লক্ষণ পদের মধ্যে স্থায়ীভাবে দেখা যায়, তাকে অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ বলে। যেমন কবি নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহন করেছিলেন। একটি বিশেষ সনে জন্মগ্রহণ করার গুণটি উপরোক্ত পদটি অবিচ্ছদ্য অবান্তর লক্ষণ।

দর্শনশাস্ত্রেও ‘এ্যাকসিডেণ্ট’ বলতে অস্থায়ী, অনিত্য এবং অপরিহার্য গুণকে বুঝায়। এদিক থেকে নিত্যসত্তা বা পরম সত্তার বিপরীত হচ্ছে অনিত্যসত্তা বা এ্যাকসিডেণ্ট। পদের গুণের ক্ষেত্রে অপরিহার্য এবং অপরিহার্যের পার্থক্য প্রথম প্রকাশ করে দার্শনিক এ্যারিস্টোটল। ‘এ্যাকসিডেন্ট’ শব্দের ব্যবহার তার রচনাবলীতেই প্রথম দেখা যায়। পরবর্তীকালে মধ্যযুগের স্কলাসটিক বা ধর্মীয় দর্শনের মধ্যে ‘এ্যাকসিডেন্ট’-এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতকের দর্শনেও বস্তুর অপরিহার্য এবং অপরিহার্য গুণের আলোচনার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। কিন্তু দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের মতে কোনো বিশেষ বস্তুই যেমন অপর কোনো বিশেষ বস্তু থেকে চরমভাবে বিচ্ছিন্ন নয়, তেমনি বস্তুর কোনো গুণকে অপর কোনো বিশেষ বস্তু থেকে চরমভাবে বিচ্ছিন্ন নয়, তেমনি বস্তুর কোনো গুণকে অপর কোনো গুণের সঙ্গে তুলনাক্রমে চূড়ান্তভাবে বিচ্ছেদ্য গুণ বলা চলে না।

Accidental Evoluation: আকষ্মিক বিকাম, আকষ্মিক বিবর্তন

জীবন এবং প্রকৃতির ক্ষেত্রে ডারউইনের বিবর্তনবাদ এবং বস্তুবাদের বিরোধীতা হিসাবে ‘আকষ্মিক বিবর্তনবাদ’-এর উদ্ভব দেখা যায়। এ মতের প্রধান ব্যাখ্যাদাতাদের মধ্যে স্যামুয়েল আলেকজাণ্ডার, এস. লয়েড মরগান, সি. ডি. ব্রড প্রমুখ দার্শনিকের নাম উল্লেখযোগ্য। এই সমস্ত দার্শনিককে ‘নব বাস্তবাদী’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু এ ভাবধারা মূলত ভাববাদী দর্শনের প্রকারবিশেষ।

চার্লস ডারউইনে তাঁর ‘অরিজিন অব স্পিসিস’-গ্রন্থে বলেছিলেন, জীবন ও প্রকৃতির ইতিহাস হচ্ছে ক্রমবিকাশের ইতিহাস। বাস্তব পরিবেশের সঙ্গে জীবনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্ত প্রকার প্রাণীর বিকাশ ঘটেছে। জীবনের বিবর্তনে অতীতের সঙ্গে সম্পর্ক-শূন্য কোনো নতুনের আবির্ভাব সম্ভব নয়। ডারউইনের এই মত বস্তুবাদী মত। উল্লিখিত দার্শনিকগণ বিবর্তনবাদের এই তত্ত্বকে জীবনের ব্যাখ্যায় যথেষ্ট মনে করেন না। এঁদের মতে জীবনের বিকাশের ইতিহাসে এমন সমস্ত পর্যায় এবং সৃষ্টির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়, যাকে বিবর্তনবাদের ধারাবাহিকতা দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। সৃষ্টির ধারা অনির্দিষ্ট। সে ধারার অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ কোনো নির্দিষ্ট করা যায় না। সৃষ্টি অগ্রসর হয় আকষ্মিক নতুন সত্তার উদ্ভাবের মাধ্যমে। সৃষ্টির অগ্রগতির বৈশিষ্ট্য ক্রমবিকাশ ক্রমবিকাশ নয়।, আকষ্মিক উদ্ভব এবং উৎক্রমণ। জগতের কোনো নতুন অস্তিত্বের সঙ্গে অতীতের কোনো অস্তিত্বের সাদৃশ্য নাই। জীবনের বিকাশের এই ব্যাখ্যা আকষ্মিক বিবর্তনবাদের একটি দিক। এ ছাড়া সমগ্র অস্তিত্বের নতুনতর ব্যাখ্যাদানের চেষ্টাও এই দর্শনের অনুসারীগণ করেছেন। এই দর্শনের অন্যতম প্রবক্তা আলেকজাণ্ডার তাঁর ‘স্পেস, টাইম এণ্ড ডিটি’ গ্রন্থে এরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, অস্তিত্বের মূল হচ্ছে ‘স্থান-কাল’ এই ধারণা। ‘স্থান-কাল’ ধারণাই সমস্ত অস্তিত্বের সৃষ্টি করেছে; বস্তু বা অস্তিত্ব থেকে ‘স্থান-কাল’ ধারণার সৃষ্টি হয় নি। মর্গান মনে করেন, জগতের অস্তিত্ব মাত্রই সপ্রাণ। প্রাণ ব্যতীত আদৌ কোন বস্তু বা অস্তিত্ব নাই।

[চলবে]

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০