কিছু বলার ছিল
পিছন ফিরে কী দেখলে ?
দেখলে কিছু !
যাবেই যদি, না-হয় যেও
একটিবারই ডাকব ফিরে,
শোনো-
আমার কিছু বলার ছিল !
আঁচলে আর করতলে
ছিল বুঝি
অহংকারের তীব্র আগুন ;
চলে যাচ্ছ, না-হয় যাবেই
কিন্তু শোনো –
পিছন ফিরে একটিবারই
আমার কিছু বলার ছিল !
যাচ্ছ যাও, নির্দ্বন্দ্বে।
শুধু একটু সময় পেলে
ভেবে দেখো
এমন কিছুই রইল না তো
ফেলে-যাওয়া, ভুলবশত !
ইচ্ছে আমার
ইচ্ছে আমার ইচ্ছে আমার বনকাপাসী মাঠ
ইচ্ছে যেন শৈশবেরই বর্ণমালার পাঠ।
ইচ্ছে আমার বাউল বাতাস ভুবনডাঙার চর
একটি ইচ্ছে বাহির যেন একটি ইচ্ছে ঘর
ইচ্ছে যেন শুধুই প্রণাম যুদ্ধজয়ী ক্রোধ
ইচ্ছে যেন সকালবেলার ঘুমভাঙানো রোদ।
কখনো সে সমুদ্র বা পাহাড় হয়ে হাসে
কখনো সে হাওয়ায় ভাসে দুরন্ত উচ্ছ্বাসে
ইচ্ছে ভীষণ নির্জনতা ইচ্ছে কলরব
ইচ্ছে আমার ভাঙাগড়া ইচ্ছে আমার সব।
পদ্মদিঘির মতন গভীর ইচ্ছে যেন রাগ
ইচ্ছে যেন জলাসয়ে ঢিলছোঁড়া এক দাগ।
চৈতি হাওয়া নদীর দু’কূল ইচ্ছে বনের পাখি
ইচ্ছে যেন জানলাপারের আকুল দুটি আঁখি।
একটি ইচ্ছে ভীষণ আপন একটি ইচ্ছে পর
ইচ্ছে আমার উথালপাথাল বিশ্ব চরাচর।
ইচ্ছে আমার ইচ্ছে আমার শূন্য স্মৃতির হাট
ইচ্ছে আমার উদার উদাস বনকাপাসী মাঠ।
যদি সময় আসে
আজকে তবে এই কথাটাই থাকল প্রাণেশ
এই কথাটাই থাক। কখনো যদি সময় আসে
বলা যাবে পরের কথা, এটুকুই থাক। বেশ –
শিশির যেমন শুয়ে আছে ঘাসে ঘাসে
এসো এখন আমরাও ঐ ঘাসের আলে
অনায়াসী ভ্রমণ করি। ঠিক কথাটি বলার সময়
এলেই বরং বলা যাবে ; এখন না হয়
ডুবে থাকি পরস্পরের দুর্বিনীত বদখেয়ালে।
আসল কথা – খেয়ালও নয়, সময়ও নয়
ঠিককথাটি ঠিক সময়ে বলার মত সাহসও চাই
এইটুকু থাক, পরেরটুকু বলা যাবে নিরুচ্চারে ;
সময়টাকে নাগাল মাঝে ফের যদি পাই।
মেলা
সেবার চৈত্রের মেলায় বেলিফুলের মালা কিনে
রাণুদির খোঁপায় পরিয়ে দিয়েছিলাম।
আমার অস্থির চোখের দিকে চোখ রেখে
রাণুদি হেসেছিল শুধু –
এতদিন পর উত্তর ষাটের আর্দ্র বিকেলে আজও
সেই স্মৃতি অমলিন আছে।
সেই সব মেলা, আমাদের নড়বড়ে দিনগুলোর মাঝে
কী মোহন উৎসব হয়ে ফিরে আসত !
এখন প্রায়শই মেলা বসে এখানে ওখানে
মেলায় ভিড় করে অজস্র মানুষ
মেলার মানুষ কেন চোখে পড়ে না !
মেলার মানুষেরা কেন এভাবে হারিয়ে যায় ?
রাণুদি এখন কোথায় ? সে কি তবে শুয়ে আছে
স্মৃতির অলস শাদা বিছানায় ?
চৈত্রের মেলায় বেলফুলের মালা, মেলার মানুষ
আর রাণুদির সেই অমল হাসি
আজ এই নিরুৎসব দিনে কেন এভাবে
স্মৃতি হয়ে পলকে জলোৎসব ডাকে !
দূরত্ব
নেমে এসো নিচে। এই মাটির দাওয়ায় বসো।
যদি ক্লান্তি আসে
মেটেকলসিতে তোলা আছে পাতকুয়ো-জল
হাতমুখ ধুয়ে দু’দন্ড জিরিয়ে নাও।
নেমে এসো। তার আগে কোন কথা নয়।
যদি শুনতেই চাও, যদি শোনাতেই চাও
উচ্চতা ভেঙে নেমে এসো …
আসলে দূরত্বে কেবল অস্বচ্ছতা বাড়ে,
ভালোবাসা শিথিল হয় নষ্ট অহংকারে।
যদি জানতেই চাও
নেমে এসো এই মাটির দাওয়ায়
এসো, বরং কিছু মন-উজাড় গল্প করা যাক।
এইখানে না এলে জানবে কীভাবে
নৌকোর গলুইয়ে কেমন ঘনিয়ে ওঠে অন্ধকার,
জানবে কেমন করে উপোসি দিনের শেষে
গরম ভাতের গন্ধ হয়ে ওঠে কী ভীষণ স্বপ্নময় !