আড্ডাপত্র

১৫ মাঘ, ১৪৩১; ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫;রাত ৪:০৮

জন্মদিনে স.ম. শামসুল আলম এর দশ কবিতা

আড্ডাপত্র

আত্মচরিত

বিষকাঁটা ঈর্ষার সুঁই ও সুতোর সূক্ষ্ম সীবনে
গাঁথো যদি কখনো আমাকে আরো বেশী দুঃখ দিতে
অমন দুঃখের ভয় একবারও করি না জীবনে
আমার অনাদি সুখ দেখে তোমরাই বুঝে নিতে

ঊষর মাটির মত ধূসর করে আমাকে যদি
করো শুধু সে-মাটিতে সুগভীর কূপের খনন
হৃদয়ে রয়েছে দেখো নিধেয় ভালবাসার বোধি
শরীরে উত্তাপ আমার মেধায় রয়েছে মনন

কৃষ্ণাগ্নি জ্বেলে কৃষ্ণের মত কালো করে যদি বলো
ও মানুষ তুই পাথর হয়ে যাÑ আমি হবো তাই
দেখবে সবাই আমার কালোয় অন্ধকার হলো
কাল মহাকালও- কালো ছাড়া ভালো আর কিছু নাই

আমি পরাজিত শুধু ভালবাসা চুম্বনের কাছে
কারণ এ-জাতীয় শব্দ আমারই বেশী জানা আছে।

দাঁড়াবার পা কোথায়

দাঁড়াবার পা কোথায় লোকে বলে চলি
বয়স সমান দুঃখ ধরে আছি হাতে
ভিত নেই ভীতি শুধু কী করে তা বলি
বৃথাই দাঁড়িয়ে আছি সাহস দেখাতে

অহংকার ঘুণে ধরা হৃদয়ে ফাটল
কালিক ভাবনাগুলো ক্ষত করে বুক
জন্মাান্ধ জটুল-চোখে জল না অনল
মনস্বী মানুষ বটে না প্রেম না সুখ

এক কাঁধে স্বপ্ন-ভাঙা ঘানির জোয়াল
অন্য কাঁধে প্রেম-হত্যা হুলিয়া-সমন
জীবন সীবন করে কাটে কত কাল
ভালবেসে ঘৃণ্য হয় প্রথম মরণ

দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে শোনাব কী গান
ঘাতকের তরবারি মানে না মহান।

একদিন বুকজলে নেমে

একদিন বুকজলে নেমে আমন ধানের ক্ষেতে ডাহুকের ডাকে
সাড়া দিতে হেঁটে হেঁটে খুঁজেছি ডাহুক
তখন আগত সন্ধ্যা, লাল সূর্য দিগন্তে হারিয়ে গেছে আর
তার রক্তিম আভায় পশ্চিমাকাশ উঠেছে মেতে
কাদায় পা রেখে সন্তর্পণে পানিতে হাঁটছি যেন শব্দ না হয়
ডাহুক ধরার নেশা আমাকে উতলা করে, সম্মুখে এগোই
সাবধানে, সাবধানে- এই তো আর একটু দূরে
ম্লান হয়ে আসে আভা বুঝি আজ আর পাব না দেখা
সবুজ ধানের পাতা খসখস শব্দ হলে চমকে উঠি
দেখি তোমার ডিঙিটা আমাকে ছুঁই ছুঁই করছে
একগাল হেসে ফেলি তোমার লগি ঠেলার ধরন দেখে
তুমি তারও চেয়ে আরো মিষ্টি সুরে ভুবন ভোলানো হাসিতে
মাতিয়ে দিলে আমন ক্ষেত, টলটলে জল, ডাহুকের বাসা
বললে, ডিঙিতে ওঠো- যেন আমাকে নিয়ে ভেসে যাবে সন্ধ্যার আঁধারে
তুমি সদ্য কৈশোর পেরোনো আর আমি যৌবনের সীমানায় দাঁড়ানো পুরুষ
আবারও আহ্বান, উঠে এসো
গ্রামের ঘরে ঘরে তখন সন্ধ্যাবাতি জ্বালানোর ধুম
এই মাঠ থেকে কিছু দূরে একে একে বাড়িগুলো চেরাগের আলোয় চিহ্নিত ক্রমশ
আমি বুকজলে দাঁড়িয়ে তোমার ডিঙিতে রাখি হাত
ডিঙি দুলে ওঠে, দুলে ওঠো তুমি, দোলে জল, জলের আমন
আর, তার চেয়ে বেশি দোলে বুক- কোথায় কী ক্ষত বুঝি না তবুও
হাতে ভর রেখে উঠে পড়ি, তুমি খিলখিল হেসে দিলে অব্যক্ত কথায়
ডিঙিতে বাঁশের মাচা যা দিয়ে আমার ভেজা শরীর থেকে জল চুইয়ে পড়ে পাটাতনে
আর, তুমি সেই মুহূর্তে নিকটে সরে এসে ওড়নাটা খুলে দিলে শরীর মুছে নিতে

তোমার দু’বুক দেখে কেঁপে ওঠে বুক, তুমি খিলখিল হাসো আবছা আঁধারে
গতরের গেঞ্জি খুলে চিপে নিয়ে গা মুছি, তখনো লুঙ্গিটা কাছা দেওয়া, শুধু সেই কাছার
অংশটুকু ভেজা, কিছু কিছু জিনিস ভিজলে ছোট হয়, কিছু কিছু ফুলে ওঠে
এর বিপরীতও হতে পারে এটা জানা ছিল না আমার, আজ জানলাম
তুমি ইশারায় ওড়নাটা পরে নিতে বললে আমি অবাক
বাঁশের চাটাই ভিজে গেছে আমার শরীর চোয়ানো জলে
এবার কোন জলে তোমাকে ভেজাবো
তুমি মুখটা গুঁজে দিলে আমার বুকে, বললাম, এসো বুকজলে নামি
আমার নৌকোটা লগি গেড়ে বাঁধা ছিল ক্ষেতের পাশে
একমাত্র সাক্ষী সেই নাও হেসেছিল নাকি মুখ ফিরিয়ে লজ্জা ঢেকেছিল কে তা জানে
বহুদিন আগে একদিন বুকজলে নেমে ডাহুকের খোঁজে আমি তোমাকে পেয়েছি
আজ বহুদিন পরে আমি ডাহুক দেখি না, আমন দেখি না, দেখি না স্বচ্ছ জল
ঘরে ঘরে চেরাগ দেখি না, সাঁঝের মায়াকে দেখি না, দেখি না আবছা আঁধার
বিজলি বাতিতে আজ ছেয়ে গেছে সারা গ্রাম, সারা মাঠ, সারাটা শহর
এমন আলোয় আমি তোমাকে দেখি না।

আমার ভুল ছিল বিশ্বাসে, ভালবাসায়

সকল বৈজ্ঞানিকের সূত্র অবহেলা করে
আমি হয়ত নিজস্ব সূত্রের প্রতিফলন ঘটাতে চেয়েছিলাম
কিন্তু আমার সূত্রগুলো ভুলে ভরপুর ছিল বুঝতে পারিনি
তাই এত অকস্মাৎ অঘটন

হয়ত আমার গদ্যরীতির মাত্রায় মাত্রাতিরিক্ত ভুল ছিল
যাকে বলে ছন্দপতন
আর এই পতনের বিচ্ছুরণে আমার জীবন আজ বিপর্যস্ত
স্বজনেরা দূরে সরে গেছে
আকাশ বাতাস নদী পাখি ফুল শস্যক্ষেত সকলেই দূরে
যেন কবিতায় আর না লিখি তাদের কথা

প্রাণের স্তুতিবাদ শোনাতে বুকে হাত রেখে বিস্ময়ে বিমূঢ়
আহ্! প্রাণটাই নেই
আমি ক্ষত-বিক্ষত নাকি আমার বিশ্বাস
আমি নিঃশেষিত নাকি আমার ভালবাসা

আমার ভুল ছিল বিশ্বাসে
আমার ভুল ছিল ভালবাসায়
এ কথা কাউকে বুঝাতে পারি না তাই বড় একা বড় নিঃসঙ্গ
এখন অন্তরের কান্না দুচোখ বোঝে না
চোখের পানিও অন্তর বোঝে না
আমি কী নিয়ে বেঁচে থাকি কাকে নিয়ে
আমিও বুঝি না।

এলোমেলো

আমার হাতে আর দিও না ভালবাসার নাইট কুইন
রক্তকমল নীল-তারা-ফুল আর দিও না আর দিও না
আমার এখন কষ্ট অনেক কষ্ট অনেক বুকের ভেতর
বুকের ভেতর মনের ভেতর দহন জ্বালা, পালা পালা যতই বলি
পালায় না সে কষ্টগুলো কষ্টগুলো দহনগুলো
সকল কিছু এলোমেলো, সয় না কারো ভালবাসা
আদর খাতির চুমো-টুমো সয় না কিছু সয় না এখন
দুঃখ ছাড়া অন্য কেউ আর বন্ধু হতে চায় না আমার
সারাটাকাল দুঃখ নিয়েই কাটিয়ে দিলাম কাটিয়ে দিলাম
এই ভাবে আর যায় না কাটান, ইচ্ছে করে ইচ্ছে করে
সবকিছু দেই ছেড়ে-ছুঁড়ে, পদ্য লেখা কিংবা বাকির হিসাব রাখা
হিসাব রেখে কী হবে আর, শোধ করে না কেউ কখনো দেনা-টেনা
ভালবাসার দেনা ভুলে সবাই এখন নেশার ঘরে নষ্ট মাতাল
নষ্ট মাতাল ল্যাভেনডারের পাত্র হাতে, হেরোইন কী প্যাথেড্রিন
কোকেন-টোকেন এসব নিয়ে মত্ত থাকে নষ্ট মানুষ মত্ত থাকে
তার ভেতরে সরল মানুষ কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকি বেঁচে থাকি
এই ভাবে আর যায় না বাঁচা
তার চে’ বরং তুমি এসে বুকের ওপর বোমা ফাটাও
বোমা ফাটাও শব্দ করে, চূর্ণ হোক এ জীবন-টীবন
জীবন-টীবন ভাল্লাগে না ভাল্লাগে না ভাল্লাগে না…

ব্যর্থতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে

ব্যর্থতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ক্ষয় মাংস মজ্জা নাড়ি
সপক্ষে সবুজ ছাড়া নির্লিপ্ত সবার স্পষ্ট কথা
ঘুরে দাঁড়ানোই ভাল ছিল মাথায় পড়েছে বাড়ি
দুঃখদেশ কেঁদে অন্ধ দায়ভার নিতে ব্যাকুলতা

কালের কুঠার পায়ে কর্তিত বৃক্ষের মৃতসার
কী করে যৌবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে প্রেমে মগ্ন হই
হৃদ্পি- ছিদ্র হয়ে রক্ত ঝরে সম্পূর্ণ নির্ভার
স্বেচ্ছাচারী মন বলে প্রেম ছাড়া অন্য কারো নই

এখানে জীবন শুধু দ্বন্দ্ব ক্ষুব্ধ মহাযুদ্ধ নিয়ে
ধাতব কৃপাণ হাতে বিরোধের বিরুদ্ধাচরণ
রক্তপাত নিষ্পেষণ অরাজক বিবেক বিকিয়ে
বাঁচার ব্যর্থতা দেখে অস্তিত্ব শিকড়ে প্রক্ষালন

আমার অন্তর পানি ছিটিয়েছি মাতৃকুল মাঠে
শস্য হবে শিশু হাসে সাড়া পড়ে কাড়া হাটে হাটে

কাবিন

আদুরে বউটার মুখে
নেই আর গোলাপের ঘ্রাণ,
চুলে নেই আয়ুর্ব্বেদীয় বাসনার তেল;
পরনের কাপড়টা ছিঁড়ে গেছে
গতবারের ভাদরে।
কাবিনে দিয়েছিল সেই কবে বৃদ্ধাঙ্গুলে
বাঁ হাতের টিপ-
তাই বুঝি ঝুলে থাকা
এখনো আমাকে নিয়ে।
আমারও লুঙ্গিটা ফেটে গেছে পাছার উপর,
ফুটো পাছায় যেতে হয় মাঠে-ঘাটে
বাজার কি জনসভায়।
কেন যে করেছিলাম ও কাবিনে স্বাক্ষর
‘স.ম. শামসুল আলম’-
তাই বুঝি বোঝা টানা
এখনো বউ-কে নিয়ে।

কাবিন কি যায় না ছেঁড়া?
মুছা কি যায় না সেই আঙুলের টিপ,
সেই আমার তেরছা স্বাক্ষর?
ঘরের মেঝেতে শুয়ে
দুইজন দুই দিকে ফিরে
নিরিবিলি ভাবি-
সিথেনে মাটির চেরাগ
টিপ টিপ জ্বলে যায়
আলো দিয়ে দিয়ে।

সোনার বাসর

তোমার কাজল ভুরু নীলের লাহান
মোনালিসা হাসিমুখ সহজ সরল
গেয়ে যাও স্মৃতি-সুরে ভাটির গাহান
রঙিন হৃদয় যেন নধর তরল
তোমার কাজল আঁখি নীলের লাহান
আমারও কণ্ঠে তাই প্রেমের গাহান।

দেখিনি পাতার শোকে গাছের কাঁদন
কেঁদেছে তুচ্ছ দাহে প্রেমিক মানুষ
পৃথিবীর এ কেমন সেতার বাদন
মহাকাশে উড়ে যায় দেহের ফানুস
দেখিনি পাতার মোহে গাছের কাঁদন
জীবনে চেয়েছি শুধু মিলন বাঁধন।

তোমার আমার আজ চাঁদের জমক
পেয়েছি অনেক সুখে বিজন বাসর
এখানে কোথাও নেই বাধার ধমক
ঘর জুড়ে কবিতার বসাই আসর
তোমার আমার ঘিরে চাঁদের জমক
সারারাত ঝিলিকের নতুন চমক।

গঙ্গাফড়িঙ বসে ঘাসের মাথায়
আমার গ্রীবায় চাপে তোমার আদল
ভালবাসা পিষে যায় জীবন যাঁতায়
চোখে নামে আষাঢ়ের করুণ বাদল
গঙ্গাফড়িঙ ওড়ে ঘাসের মাথায়
নড়ে ওঠে মরা প্রেম স্মৃতির পাতায়।

ছুঁয়েছি তোমার ভীরু অধর আঁচিল
কেঁপেছে বুকের তলে রাতের নগর
ডিঙিয়েছি জীবনের বিশাল পাঁচিল
ফুটেছে হাতের কাছে গোলাপ টগর
ছুঁয়েছি তোমার প্রিয় অধর আঁচিল
হয়েছে মনের মত সে-কাজ হাসিল।

চোখের ডগায় কাঁপে কঠিন হাশর
জীবনের সাথে থাকে মায়ার মরণ
কিছুদিন হাসি খুশি গানের আসর
তবুও করেছি সুখে বধুর বরণ
চোখের ডগায় ভাসে কঠিন হাশর
তোমার আমার আজ সোনার বাসর।

শেষকৃত্যের আগে

হৃদয়ের উত্তাল তরঙ্গ হিমালয়ে আছড়ে ফেলব
ধ্বনিত ঢেউয়ের আঘাতে গঙ্গা গর্ভবতী হবে
পূণ্যতোয়া গঙ্গা-জলে প্রাণ পাবে অকালপ্রয়াত পদ্মা
বালুমহালের ধস দেখে আনন্দিত হবে রুপোলি ইলিশ
অশ্রু মুছে উল্লাসে গেয়ে উঠবে মানিকের পদ্মা নদীর মাঝি

মৌলবাদ-স্বৈরাচার-সন্ত্রাস-ধর্মান্ধ-ধর্ষণ-অপহরণ
এসব শব্দগুলোকে চিহ্নিত করে দিয়ে যাব নতুন প্রত্যয়ে
যেন আর উচ্চারিত না হয় কখনো
‘ভালবাসা’ শব্দটিকে মর্যাদার শ্রেষ্ঠ আসনে বসাব
বারবার উচ্চারিত হবে আদবে শ্রদ্ধায়

আমার মাটিকে বুকে নিয়ে
ফলাব ফসল, স্বর্ণলতা, সুখবৃক্ষ, সমৃদ্ধ সমাজ-সংসার
অথবা মাটিতে বিছাব বুক যদি পার আমাকে ফলাও
আমার সম্ভাবনাকে
আমার স্বপ্নকে, চেতনাকে, বোধ ও বিবেক সবকিছু সব-কিছু

আমার না-লেখা কবিতার শব্দাবলী
জন্মস্বরে থরে থরে সাজাব গোছাব
সোনার মানচিত্র টাঙিয়ে দেব ইচ্ছের শব্দগুচ্ছের সাথে
বাংলাদেশ নামের একটি কবিতাই কি যথেষ্ট নয়
আমার অচ্ছেদ্য প্রাণ রঙিন পোস্টার
ঝুলে থাকবে অনন্তকাল অনন্তকাল

শেষকৃত্যের আগে
আমি হাসতে হাসতে আমার প্রাণকে স্পর্শ করে যাব
রবীন্দ্রনাথ যেখানে শত বছরের সন্দেহ কাটাতে ব্যর্থ
আমার সাহস লক্ষাধিক বর্ষ-
পৃথিবীর সর্বশেষ কবি এভাবেই ঘোষণা করেন।

আমাকে মুছে ফেলা সহজ!

আমাকে মুছে ফেলা সহজ!
জলে মুছতে, না-অশ্রুজল না কোনো নদীর জল
আঙুলে থুতু জড়িয়ে মুছে ফেলা যায়
পৃষ্ঠা গোনার মতো
সামান্য থুতুর কাছে আমি অস্তিত্ববিহীন

মনে হবে আমি লেখা আছি বিস্তৃত বালুকাবেলায়
চাই শুধু একটি ঢেউ-
সনির্বন্ধ সাগরের এক ঢেউয়ে মুছে যেতে পারি
আঙুল-কলমে লেখা ভালোবাসা যেভাবে বিলীন
অথবা বালিতে গড়া বালিঘর যেমন বালিতে মিশে যায়

মনে হবে আমি অসংবৃত ঝুলকালি পরিত্যক্ত ঘরে
বহুদিন পর ফিরে আসা মালিকের হাতে
অথবা তার চাকরবাকর কর্তৃক পরিষ্কার হয়ে যাব
দেয়ালে নতুন রং লাগলে আমার চিহ্নটুকুও থাকবে না
যেভাবে মিশে যায় দৃশ্যমান ময়লার দাগ

হয়ত ভাবছ কেউ
আমাকে মুছে ফেলা তার চেয়ে সহজ
কী এমন জ্বেলেছি আলো, এক ফুঁতে নেভানো যায়
অথবা নিজেই আলো হলে
সূর্যের সমুখে মেলে ধরা, যে আলোতে সবই আলোহীন

এমনও ভাবতে পারো আমাকে মুছে ফেলতে এত কসরত কেন
শুধু একবার বিবক্ষিত মুখ থেকে উচ্চারিত হবে, ‘না’
কেউ কোনোদিন এই নাম মুখেও আনবে না
আপনাআপনি মুছে যাবে মন থেকে, পৃষ্ঠা থেকে।

আমিও তাহলে বলে রাখি-
আমাকে মুছে ফেলা সহজ?
আমি আছি মাতৃভূমি-মৃত্তিকায় প্রতিটি ধূলিকণায়
কোন ধূলি থেকে কতটুকু মোছা সম্ভব?
আমি আছি বাংলাদেশের নাব্য-জলে প্রতিটি জলকণায়
জল ছাড়া এই দেশ ভাবা কি সম্ভব?

আমি আছি হাজারো ক্ষেতের আলে প্রতি ঘাসে ঘাসে
সবুজে সবুজ হয়ে মিশে আছি বাঙ্ময় চিহ্ন
আমাকে মুছতে পারে অতটা সাধ্য কার?
আমি আছি আজীবন গল্পে আমরণ কবিতায়
আমি আছি পাখিদের গানে ফুলের ছড়া কাটায়
সুবাসিত পৃথিবী আমার স্বপ্নময় সুখ
আমাকে মুছে দেবে সাধ্য কার?

আমি আছি স্বর্গদেবী জন্ম-জননীর বিশ্বসমান বুকে
আদরে আদরে জন্মজন্মান্তরে লালিত পালিত
আমি আছি স্নেহময় পিতার বিবৃত পক্ষপুটে
ভালোবাসা আর মায়াময় জড়াজড়ি
এই মমত্ব-বন্ধন ছিন্ন করে
আমাকে মুছে দিতে পারে সাধ্য কার?

আমি আছি প্রিয় শঙ্খিনীর শীতল ওষ্ঠযুগলে
অবিরাম অনুক্ষণ প্রেমে মাখামাখি
প্রিয়তমার সুমিষ্ট ঠোঁট থেকে আমাকে মুছে দেবে
অতটা সাধ্য কার? অতটা সাধ্য কার ঐ গোপন ঠোঁটে
প্রকাশ্যে আঙুল ছোঁয়ায়?
আমাকে মুছতে পারে অতটা সাধ্য কার?

অনেক কষ্ট করে ঘষে ঘষে মোছা যেতে পারে আমার নাম
আমাকে মুছে ফেলা সহজ নয়।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১