প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে
জন্মের দক্ষিণা
মাহবুব তালুকদার
আনন্দময় সরোবরে আমাকে নিয়ে ফেললে হে ঈশ্বর
আমি মোটে সন্তরণ জানি না। পূণ্যবান পুরুষেরা
পুনর্বাসনের জন্য চিরকারল স্বর্গীয় সেবায় নিয়োজিত
সকলেই এক বাক্যে কোরাস দিচ্ছিলেন, ‘ঐ দ্যাখো টসটসে
আনন্দের আঙ্গুর ঝুরছে তোমার সামনে, শুধু ঠোঁট নাড়লেই
রসের আস্বাদ পাওয়া যাবে, চুম্বনের মত পাবে একটু
কষ্টাকষ্টা ভাব’—এই সব প্রিয় বাক্য ঝাঁপি ছিল কানের কোটরে।
আত্মবিশ্বাসের জন্য নানীমা আমার কণ্ঠে বাল্যকালে
মাদুলী দেননি, জন্মের দক্ষিণা তাই হাতে নেয়া
সুসাধ্য ছিল না। মিথ্যা নয় সুলেমান নবী যথাযথ
পাখিদের ভাষায় ডিপ্লোমা করেছিলেন; মুসার যষ্টিটি
অলৌকিক সাপ হত। এঁরা সবে কৃতিমান রাজহংসের মত
সন্তরণে পারদর্শী, পৌঁছে গেছেন স্বর্ণময় পদ্মের নিকেটে।
জন্মদান দিয়েছিলে হে বিধি, দাও-নি তো জন্মের দক্ষিণা!
…………………………………………………………….
[মাহবুব তালুকদার আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত কবি ও শিশু সাহিত্যিক। তিনি ১৯৪২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব মিরাস উদ্দীন তালুকদার ও মাতার নাম: সালেহা খাতুন।স্ত্রী নীলুফার বেগম। তিনি দুই কন্যা ও এক পুত্রের জনক।
মাহবুব তালুকদার নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক (১৯৫৭), ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (১৯৫৯) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক (১৯৬২)দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান, স্নাতকোত্তর (১৯৬৩) দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
তিনি কর্মজীবনের প্রারম্ভে দৈনিক ইত্তেফাকে সাংবাদিকতার মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তিনি তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিভাগে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেন।
১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুজিবনগর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে চাকুরিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি সরকারি চাকুরির ধারাবাহিকতায় বঙ্গবভনে ৫ বছর অবস্থানকালে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বিশেষ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহর জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় তিনি তার সহকারী প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে মাহবুব তালুকদার, কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মাহবুব তালুকদার একজন সৃজনশীল লেখক। ৬০ বছরের অধিকাল যাবৎ তিনি কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক ও শিশু সাহিত্য রচনা করছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৪০ এর অধিক।উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: জন্মের দক্ষিণা- ১৯৭৩; আত্মসমর্পণ- ১৯৮৭; কেয়া সনি হ্যায়- ১৯৯৪। ছড়া : অন্তর মন্তর- ১৯৭৭; উপন্যাস: ক্রীড়নক- ১৯৬৮; অবতার-১৯৭৪; অপলাপ-১৯৮৫; আরেকজন আমি- ১৯৮৭; পলাশ ও শিমুলের গল্প- ১৯৮৮; চার রাজাকার-১৯৯৩; বধ্যভূমি-১৯৯৭; সব পাখি ঘরে আসে-২০০৪।গল্পগ্রন্থ: অরূপ তোমার বাণী-১৯৮০। সম্পাদনা: A Selection of Contemporary Verse from Bangladesh-1989
ছোটগল্প: অরূপ তোমার বাণী-১৯৮২; সুবর্ণ জয়ন্তী-১৯৯৯ স্বপ্ন জড়ানো মানুষ-২০০৫; ইতির ইতিকথা-২০০৫। । প্রবন্ধ-গবেষণা: অফিস আদালতে বাংলা ভাষার প্রচলন- ১৯৮৮। ভ্রমণকাহিনিী : সুপ্রভাত আমেরিকা-২০০১ । শিশুসাহিত্য : স্বনামধন্য-১৯৭৪; সে এক সোনার ছেলে-১৯৭৭; পরীর নাম রূপশরী-২০০৫। স্মৃতিকথা: বঙ্গভবনে পাঁচ বছর-১৯৯২। সম্পাদনা: Poems from Bangladesh-১৯৮৯।
শিশু সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন।