আড্ডাপত্র

৭ কার্তিক, ১৪৩১; ২৩ অক্টোবর, ২০২৪;বিকাল ৪:২৭

আড্ডাপত্র : প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা— ৫৮

প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে।

কিং জর্জ ব্রিজে

সাযযাদ কাদির

১.
একটি অসম্ভব পাখি
মরমে পশেছে নাকি—
গান গায়, শুধু গান গায়,
খ্যাপা এই রাত্রিকে নাচায়,
সে-ও নাচে নাকি
একটি চরম পাখি!
২.
মেঘনা পায় না বুকে
বিম্বিত আমার মৃত্যুকে;
পাখিটি জানে কেবল
নৃত্যে তার অবিরল
একটি মুদ্রা কি বিভোল কৌতুকে

মেঘনা পেয়েছে বুকে!

সাযযাদ কাদির বহুমাত্রিক লেখক। কবিতা ছাড়াও নানান বিষয়ে ছিলো তাঁর আগ্রহ। গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ, প্রবন্ধ গবেষণা—বহু বিষেয়ে কাজ করেছেন ষাট দশকের এই কবি। ১৯৪৭ সালের ১৪ই এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলার মিরের বেতকা গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন কবি সাযযাদ কাদির। তার পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় ও স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়ায়। তাঁর পিতার নাম এস.এম. আবদুস সালাম ও মাতা মাহমুদা বেগম। স্ত্রী আফরুনা বাবলি।
তিনি ১৯৬২ সালে টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৬৬ সালে মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ১৯৬৯ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।
দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালে তিনি করোটিয়া সা’দত কলেজ-এ বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি কলেজের চাকুরী ত্যাগ করে সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালে রেডিও বেইজিং-এ যোগ দেন। ১৯৮০ সালে রেডিও বেইজিং-এর চাকুরী ছেড়ে দেন এবং ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপর ১৯৮৫ সালে থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কাজ করেন আগামী-তারকালোক পত্রিকায়। এরপর যোগ দেন দৈনিক দিনকালে। ১৯৯৫-২০০৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ইনিস্টিটিউটে । ২০০৪ সাল থেকে মৃত্যুপর্যন্ত দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কবি সাযযাদ কাদির কবিতা গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ-গবেষণা, শিশুতোষ, সম্পাদনা, সঙ্কলন, অনুবাদ সহ বিভিন্ন বিষয়ে ৬০টির বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:
কাব্যগ্রন্থ: যথেচ্ছ ধ্রুপদ (১৯৭০) ; রৌদ্র প্রতিধ্বনি(১৯৭৬); দূরতমার কাছে(১৯৮৫); দরকাজর কাছে নদী(১৯৯২); আমার প্রিয়(১৯৯৫); এই যে আমি(১৯৯৮) ; কবিতা সমগ্র(২০০১); জানে না কেউ(২০০৩); আলো আমার(২০০৫); বৃষ্টিবিলীন (২০১২) ; আমার ভুলবাসা (২০১৭) ।
গল্পগ্রন্থ: চন্দনে মৃগপদচিহ্ন (১৯৭৬) ; অপরবেরায় (১৯৯৭);
উপন্যাস: অপর বেলায়; অন্তর্জাল (২০০৮) ; খেই (২০১২) ;
প্রবন্ধ-গবেষণা: ভাষাতত্ত্ব পরিচয় (১৯৯৫); রবীন্দ্রনাথ : শান্তিনিকেতন (২০১২; রবীন্দ্রনাথ : মানুষটি (২০১২); রাজরূপসী; নারীঘটিত (২০১২) ; পৃথিবীর প্রিয় প্রণয়ী, হারেমের কাহিনী (২০১৫); রমণীমন (২০১৬)
শিশুসাহিত্য: তেপান্তর (১৯৯১); মনপবন (১৯৯০); রঙবাহার (১৯৯১); বীরবল নামা (২০০২); এফ ফেনতি (২০০২); উপকথন (২০০৩); উপকথন আরও (২০০৫); উপকথন আবারও (২০০৬)
স্মৃতিকথা: নানারঙের দিন (১৯৯৭);
অনুবাদগ্রন্থ: লাভ স্টোরি (১৯৭৭); রসচৈনিক (২০০৪)
সংকলন-সম্পাদনা: বাংলার লোককথা (২০০৫); বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধসমগ্র; বেগম রোকেয়া প্রবন্ধসমগ্র; প্রেমপাঁচালী (২০০৮)।
পুরস্কার ও সম্মাননা: একুশে স্মৃতি স্বর্ণপদক (১৯৯৪); কবি জসীমউদদীন পুরস্কার (১৯৯৭); নন্দিনী সাহিত্য পুরস্কার (২০০১); কবি সুকান্ত সাহিত্য পুরস্কার (২০০২); সৈয়দ আবদুল মতিন স্বর্ণপদক (২০০২); বাচসাচ পুরস্কার (২০০২); ট্রাব এ্যাওয়ার্ড (২০০৩); সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার (২০০৪); এক নুরুল কাদের পুরস্কার (২০০৪); টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী স্কুলের ‘গুণী সম্মাননা’ (২০০৫); জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (২০১৯)।
মৃত্যু: ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১