আড্ডাপত্র

১২ পৌষ, ১৪৩১; ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪;রাত ৩:৪৩

আড্ডাপত্র : প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা— ৬৮

প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে।

কুকুর

সমুদ্র গুপ্ত

রাস্তার মধ্যিখানে শুয়ে আছে নির্বিকার একটি কুকুর
গাড়ী ঘোড়া ছুটে যাচ্ছে এদিক ওদিক
পাশ কেটে কুকুরের মাথার, ছায়ার।
প্রাণহীন কুকুরের হৃদপিন্ড কুঁকড়ে গেছে
খামচে ধরে রাজপথ কোঠাবাড়ী নাগরিক বিশাল শহর
বড়লোক গাড়ীর নীচে চাপা পড়ে মানুষ আর
মানুসের সরল জীবন—এটাই নিয়ম, অথচ
কি তাজ্জব! সমস্ত বিত্তশালী গাড়ী ঘোড়া
সতর্ক স্টিয়ারিংয়ে পাশ কাটছে
শুয়ে থাকা কুকুরের লাশ
যেন, এই লাশটাকে বাঁচাতেই হবে।
পৃথিবীর রাজপথে চিৎপাত শুয়ে থাকা
এরকোম কুকুরের লাশ যেন বাংলাদেশ।
আসলে তো, বাংলাদেশ মানেই হলো
জীবনের মুখোমুখী বুলেটের অসভ্য চিৎকার

শোকচিহ্ন কালোব্যাজ পৃথিবীর শহীদ মিনার।

কবি সমুদ্র গুপ্ত সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানার হাসিল গ্রামে ১৯৪৬ সালের ২৩ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম আব্দুল মান্নান হলেও বাল্যকালে তিনি বাদশা নামে পরিচিত ছিলেন। ষাট দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে কবিতা, গল্প, সমালোচনা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, সাহিত্যের বিষয়ক -বৈচিত্র্য ও সৃজনশীল রচনায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
সমুদ্র গুপ্ত প্রচণ্ড আড্ডাবাজ ও টগবগে মনের অধিকারী মানুষ ছিলেন। বোহেমিয়ান জীবনধারায় অভ্যস্ত কবি চলনে বলনে ছিলেন পরিপাটি। কোনো পেশাতেই থিতু হননি তিনি। তাই নানা পেশায় কেটেছে তাঁর জীবন। ছিলেন প্রেসের কমর্চারী, করাতকলের ম্যানেজার, জুটমিলের বদলি শ্রমিক, উন্নয়ন সংগঠনের নিবাহী, ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবসা, প্রুফ রিডার, সাংবাদিকতা, কবি ও পেশাদার লেখক।
বর্ণাঢ্য সাহিত্যজীবনে সমুদ্র গুপ্তের ১৩টি কাব্যগ্রন্থ, ১টি গদ্য, একাধিক সম্পাদিত গ্রন্থ ছাড়াও বহু অনুবাদ ও সৃজনশীল লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কবিতা ইংরেজি, ফারসি, হিন্দি, সিংহলি, চীনা, জাপানি, নেপালি, নরওয়েজীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
কাব্যগ্রন্থ: রোদ ঝলসানো মুখ (১৯৭৭); স্বপ্নমঙ্গল কাব্য (১৯৮৭); এখনো উত্থান আছে (১৯৯০; চোখে চোখ রাখে (১৯৯১); একাকী রৌদ্রের দিকে (১৯৯২); শেকড়ের শোকে (১৯৯৩); ঘাসপাতার ছুরি (১৯৯৮); সাত সমুদ্র নদীও বাড়িতে ফেরে; ছড়িয়ে ছিনিয়ে সেই পথ; চলো এবার গাছে উঠি; হাতে হাতে তুলে নিলে এই বাংলার মাটি রক্তে ভিজে যায়; তাহলে উঠে দাড়াবো না কেন; খালি হয়ে গেছে মাথা শুধু ওড়ে;
প্রবন্ধ-নিবন্ধ : ডিসেম্বরের রচনা (শত্রুতা চিহ্নিতকরণ ও শত্রুতা বিকাশ প্রকল্প)।
সম্পাদনা: বাংলাদেশে বঙ্কিম।
পুরস্কার ও সম্মাননা: হুমায়ুন কবির পুরস্কার, যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, কবি বিষ্ণু দে পুরস্কার (ভারত)।, ভারতের ত্রিপুরা সরদার প্রদত্ত ভাষা দিবসসহ অসংখ্য সম্মাননা সংবর্ধনায় ভূষিত হয়েছেন কবি সমুদ্র গুপ্ত।
মৃত্যু: মৃত্যুর আগে তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে।৩ জুলাই ২০০৮ তারিখে ভারতের ব্যাঙ্গালোর নারায়ণী হৃদয়লয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জুলাই ২০০৮ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬২ বছর।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১