প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে।
রবীন্দ্রনাথ
মনজুরে মওলা*
নিজেই তো গোরা তুমি। ছ’ফুট শরীর ছায়া ফ্যালে
ছাড়িয়ে শালের বীথি, পেলে শান্তিনিকেতন, ফেলে
জোড়াসাঁকো, পদ্মাতীর—ছায়া ফ্যালে বাংলার প্রাণে,
আমার হদয়ে দ্যাখ ছায়া কাঁপে, গলা শোনা যায়
কত দূর দূরান্তর থেকে।
সব আছে, যথারীতি। লাবণ্য অমিত রায় রোজ
পাহাড়ে বেড়াতে যায়। সুচরিতা গান গায়। মিনি
সহসা বয়সে বাড়ে। কাবুলীওলার মন কত
আশা নিরাশায় দোলে। দিন যায়।
ক্যামেলিয়া ফোটে।
সব আছে, যথারীতি। এবং তুমিও আছো, তুমি।
অথচ এখানে দ্যাখ জল নেই, এক ফোঁটা জল
পাবে না কোথাও খুঁজে। আকাশের বুক চিরে—নেই।
কেবল পাথর আর শূন্যতার খেলা, নদী নেই,
নেই, কিছু নেই।
সোনার তরীর গান লেখা আর হবে না কখনো।।
(১৯৬১)
* প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদে মনজুরে মাওলা লেখা হয়েছে সম্ভবত ভুলক্রমে। ইনার পাতায় মনজুরে মওলা-ই আছে। তাঁর পরবর্তী গ্রন্থাদিতেও নামের বানান ‘মনজুরে মওলা’ দেখতে পাওয়া যায়।
[মনজুরে মওলা ষাট দশকের অন্যতম কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক। জন্ম ১ অক্টোবর ১৯৪০। তার পিতার নাম কাজী আম্বর আলী। পড়াশোনা করেছেন আরমানিটোলা হাই স্কুল ও ফরিদপুর জিলা স্কুলে। মাধ্যমিক পাশ করেছেন ১৯৫৬ সালে। উচ্চ মাধ্যমিক ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ১৯৬১ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে এমপিএ করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পদে চাকুরি করে সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক হিসেবে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। কিছুকাল পিপলস ইউনিভারসিটিতে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা করেন তিনি।
মনজুরে মওলা ১৯৫৮ থেকে নিয়মিত লিখছেন। রবীন্দ্র গবেষণায় তাঁর ভূমিকা ব্যাপক। ১৯৬১-তে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে ঢাকাস্থ ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত বিভিন্ন কবির কবিতার একটি সংকলন প্রকাশ করে। সেখানে তিনি ‘রবীন্দ্রনাথ’ কবিতাটি লেখেন। এই কবিতাটিই ১৬ বছর পর প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা হিসেবে জায়গা করে নেয়। তাঁর উদ্যোগ ও পরিকল্পনায় ‘ভাষা-শহীদ গ্রন্থমালা সিরিজ’-এ প্রকাশিত হয় ১০১টি বই এবং তাঁর সম্পাদনায় রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবর্ষে প্রকাশিত হয় ১৫১টি বইয়ের গ্রন্থমালা সিরিজ।
কবি মনজুরে মওলা’র প্রকাশিত গ্রন্থাবলি হলো:
কাব্যগ্রন্থ: নিমগ্ন, কি করে পার (১৯৭৭); মাটি হেরে যায় (১৯৮৩); শ্যাওলা ও ডিঙি(১৯৮৫); পুড়ে পুড়ে(১৯৮৫); এই দিন মিথ্যে(১৯৮৬); বন্দনা বৃষ্টির(২০০০); না হয়(২০০৩); খা খা(২০০৪); নির্বাচিত মনজুরে মওলা(২০০৫); সুচিত্রা সেনের জন্য (২০০৫); আকাশ যেমনই হোক(২০০৫); পেয়েছো কি?(২০০৬); কী উত্তর দেবো (২০১২); তুমি (২০১৫); সামান্য মানুষ আমি (২০১৬);
কাব্যনাটক: আমি নই(২০০০); জালিয়ানওয়ালাবাগ (২০০৫);
অনুবাদ: নাট্যকার হেনরিক ইবসেন-এর ব্রান্ড (২০০৫)।
প্রবন্ধ-গবেষণা: Comilla and U-J : A Comparative Study of Rural Development Policies (1980); এলিয়ট- এর সময় (২০১৯);
শিশুসাহিত্য: পড়তে চাই গোয়েন্দা গল্প (১৯৯৩); বাঘ, ভূত বেড়াল ও মশা;
সম্পাদনা: রবীন্দ্রনাথের নির্বাচিত কবিতা (১ম ও ২য় খণ্ড, ১৯৯২); অল্প একটু রবীন্দ্রনাথ; বাংলাদেশের কবিতা; পঁচিশ বছরের প্রেমের কবিতা।
সম্পাদিত পত্রিকা: ‘শ্রাবণ’ নামে ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্র (১৯৮৬-৮৭)।
পুরস্কার ও সম্মাননা: আহসান হাবীব স্মৃতিপুরস্কার (১৯৯৭)।