প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে।
নিরন্তর আলোক বর্তিকা
মুনীর সিরাজ
আমার চিন্তাগুলো বিমূর্ত হোক
শব্দ সম্ভারে,
গম্ভীর বেদনা হোক কালক্ষু্ব্ধ
রক্তিম প্রতীক।
অসংখ্য শব্দের তারা অন্ধকার
মনের আকাশে,
নিগর্সের চক্ষু হয়ে সারারাত
নিঃশব্দে ফুটুক।
আমার ইচ্ছাগুলো চিত্রময়
বিচিত্র ভুবনে
নিয়ত নৈরাশ্যে হোক নিরন্তর
আলোক বর্তিকা।
…………………..
ফেব্রুয়ারী/১৯৭১
মুনীর সিরাজ সত্তর অন্যতম কবি। প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক হিসেবে তিনি পরিচিত।জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মাতুলালয় মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার ক্ষৈয়াগাঁও গ্রামে। পৈতৃক বাড়ি একই জেলার সিরাজদিখান থানার বাহেরঘাটা গ্রামে। তার পিতার নাম মোঃ নুরুল ইসলাম এবং মা রাবেয়া ইসলাম।
তিনি সরকারী বাংলা স্কুল, করাচী থেকে ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর তিন ১৯৭৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা শ্রাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।তিনি ১৯৮২ সালে এফসিপিএস (শিশু) ও ১৯৯৩ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিলো: বায়োইলেকট্রিক্যাল ইমপিডেন্স এনালাইজার পদ্ধতিতে শিশুপুষ্টির শ্রেণীকরণ।
পেশাগত জীবনে অধ্যাপক ডা. মো: সিরাজুল ইসলাম নামে পরিচিতি। তিনি বিশেষজ্ঞ শিশুরোগ চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদ। ঢাকা শিশু হাসপাতালে অবস্থিত, ঢাকা শিশুসাস্থ্য ইনস্টিটিউট-এর সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান এবং হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি Commonwealth Association for Health and Disabilities-এর প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ পল্লী শিশু ফাউন্ডেশনের অনারারি মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের বার্ষিকীতে ১৯৬০ সালে তাঁর কবিতা ‘পুতুল চিকিৎসক’ প্রকাশিত হয়।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাতেই তিনি বিচরণ করেছেন। কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ভ্রমণ, শিশুসাহিত্য মিলে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা বিশের অধিক।মুনীর সিরাজের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ—
কাব্যগ্রন্থ: বিরুদ্ধ স্রোতে যাত্রা (১৯৭৬); তিমিরে তরবারি (১৯৮৪); তিনটি শিশুর আত্মা (১৯৮৫); এখনো আদিম রাত (১৯৯৬); ঢাক গুড় গুড় (১৯৯৭); আঁধারে কণক প্রভা (১৯৯৯); অনত প্রদীপ শিখা (২০০০); ফোর্ট ওয়ার্থের ডায়েরি ( ২০০৯)।
অনুবাদ: কারাগারের কাব্য (হো চি মিন-এর প্রিজন ডায়েরি-১৯৮৮); নেপালের লেখক মণি দিক্ষিতের ‘সাংগ্রিলা উপাখ্যান’ (উপন্যাস-২০১৯); অ্যাডগার অ্যালেন পো’র কবিতা (২০০৯), আফ্রিকান-আমেরিকান লোককাব্য।
প্রবন্ধ-গবেষণা: কবিতা এবং সমাজ চেতনা (২০০৩), কবিতার শক্তি ও অন্যান্য রচনা (২০১৪), সমুদ্র গুপ্ত’র কবিতা: তুলনামূলক বিচার (২০১৪), আহমদ রফিক: জীবনবাস্তবতার নান্দনিক কবি (২০১৫)।
সম্পাদনা: জহুরুল ইসলামের কবিতা (২০০৮), সমুদ্রবচন (২০১৩)।
ভ্রমণসাহিত্য: ইয়েতির দেশ নেপাল (১৯৯০)।
শিশু সাহিত্য: শূন্য (২০১৪); রঙধনু (ছড়া, ২০২০)
পুরস্কার ও সম্মাননা: লেখক শিবির প্রদত্ত ‘হুমায়ূন কবির স্মৃতি পুরস্কার’ (১৯৭৬); ‘আলাউদ্দিন আহমেদ সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা’ (১৯৯৮), ‘কবি সুকান্ত সাহিত্য পুরস্কার’ (২০০১); ‘খুলনা রাইটার্স ক্লাব পদক (২০০২); ‘স্বপ্নকুঁড়ি সম্মাননা’ (২০১২); ‘নবগঙ্গা সাহিত্য পরিষদ-মাগুরা সম্মাননা’ (২০১২); অনুবাদ সাহিত্যের জন্য ‘নাট্যসভার’ আজীবন সম্মাননা (২০১৪)। পেশাগত: ১৯৯৬ সালে ইন্ডিয়ান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখা তাকে সম্মাননা প্রদান করেন। তিনি কমনওয়েলথ ফাউন্ডেশনের ১৯৯১ সালের ফেলো এবং ১৯৯৮ সালে WHO-এর ফেলো (জন হপকিন্স্ বিশ্ববিদ্যালয়)। ]
সংগঠন সংশ্লিষ্টতা: জীবন সদস্য, বাংলা একাডেমী; নির্বাহী সদস্য, জাতীয় কবিতা পরিষদ; সদস্য, উন্মেষ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদ।