একলা থাকার কাব্য
কতটা বেদনার্ত, কতটা অশ্রুশিক্ত বিদীর্ণ হলে
রক্তাক্ত হৃদয়ে হয় ভূমিকম্প, নামে ভূমিধ্বস!
একদিন কিছু বলার আগেই বুঝে নিতে সব!
আজ বুঝতে চাও না!
সমাজ-সংসার, রীতি-রেওয়াজের কথা সেদিন
মাথায় ছিল না কারও; না তোমার না আমার!
আজ এত বছর পর সমাজ-সংসারের অজুহাতে
অদৃশ্য দেওয়াল তুললে দুজনের মাঝে!
এখন কোন মোহে আবিষ্ট করছো অবহেলা!
ঠেলে দিচ্ছো দূরে!
একদিন বলেছিলে,তাবিজ করে রাখবে গলায়
সেই তুমি ভাসিয়ে দিলে কাগজের নৌকার মতো!
আজ রাজকন্যা পদ্মাবতী ভেসে যায়, ভেসে যাচ্ছে
উত্তাল অথৈ তরঙ্গে একা!
হৃদয় পদ্মাবতী, মনটা প্রজাপতি আর জীবন
ধু-ধু প্রান্তরে নীল আকাশে একাকী চেয়ে থাকা
ঊর্ধ্বমুখী ন্যাড়া এক বট বৃক্ষ!
ঘুণপোকা
হঠাৎ পাঁচমুখে প্রশংসা
শোনাচ্ছো পাশের কাউকে
এখনও মাঠে সবুজ ধানের শীষ
খেলছে হাওয়া
চোখে লেগে আছে
সুতোয় বাঁধা ফড়িঙের ওড়াওড়ি।
ডাকছে মা
ভাপ উঠছে এখনও গরম ভাতে
আলু ভর্তা আর ধনেপাতার চাটনি!
ওরা মানুষ নয়
সম্পর্কের ভেতর ছেড়ে দেয়া ঘূণপোকা
কাটছে জীবনের পাটাতন!
স্মৃতির পাণ্ডুলিপি
বালিকার স্মৃতির পাণ্ডুলিপিতে এখন
উঁইপোকার ঢিপি, বালিকা তার সুখে-অসুখে
তোমাকে ছাড়া কিছু জানে না, বুঝে না কিছু!
বালিকা তার হৃদয়ের সব সুরে বেঁধেছে
তোমার হৃদয়তান; ভুল নেই, নেই অস্বচ্ছতা
কালিমার পদধ্বনি নেই; নেই অ-সুবাস!
শোন বলি, বালিকা কখনোই কষ্ট দিতে চায়নি
সে শুধু তাঁর করতলে মেলে ধরতে চেয়েছিল
অভিমানের খসড়া! ভুল বুঝলে তুমি!
বালিকার উজ্জ্বল ঝলমলে সহাস্যগোলাপ মলিন
আকাশ মেঘলা, বহমান তটিনী আজ নিরব নিঃস্তব্ধ!
প্রতীক্ষাপুঁতির মালা ছিড়ে গেছে তাঁর, পড়ে আছে
আনন্দহীন হৃদয়ের মেঝেতে!
বালিকা শুধু তোমারই জন্য
ছেড়ে এসেছে জীবনের এতটা পথ; ছিঁড়ে ফেলে
জীবনভ্রান্তি মালা, বাঁধতে চেয়েছিল স্বচ্ছতার আবাস
তোমারই সুরে তোমারই সূর্যনিলয়ে!
ভুল বুঝলে তুমি!
আজ বালিকার কিছু নেই, আনন্দহীন সে!
বিজ্ঞাপন
কখনো মনে হয় অবজ্ঞা
কখনো অবহেলা
কখনো সখনো ভালোবাসাহীন নিরুত্তাপ!
ইচ্ছা করে বিজ্ঞাপন দেই
‘ফিরে এস
তোমার অদর্শনে ভালোবাসা মৃতপ্রায়’
একটু পরেই
মনে হয় থাক না, যাক না সময়
সে বেড়ে উঠুক তারই নির্ধারিত অবকাশে!
প্রেমের পৃথিবী
প্রেমের পৃথিবীতে
যা নয় তাই চেয়ে-পেয়ে উৎরে যায়
দুঃখ কষ্টকথা, হৃদয়ে থাকে
টগবগে তারুণ্য!
তারপর
হিম হয়ে আসে হৃদয়ের আগুন
নিষ্ফলা পৃথিবীতে ঝরে যায়
পত্র-পুষ্প-শাখা!
বাবলা বনে থাকে না হলুদ ফুল,
বনের ধারে বাজে না আর বাঁশি
মাছরাঙা রঙ নিষ্প্রভ!
শৈবলিনী স্তব্ধ
তেজপাতা রঙ কষ্ট বুকে নিয়ে
সবুজ শ্যাওলাতে স্থির!
আকাশে থাকে না তারাদের জটলা!
হৃদয়প্রিয়া টানে
তুমি আছো স্বদেশ, বুকের মধ্যিখানে
ফুলে ফলে শস্য শ্যামলে তোমাকেই
হৃদয়প্রিয়া টানে।
তোমার মাঠে খেলে দখিন হাওয়া
শস্য ভরা সবুজ ক্ষেতে তাদের
আসা যাওয়া!
এইতো তোমার স্বরূপ দু’চোখ ভরে পাওয়া!
আকাশ বিছিয়ে জাগে অগণিত গ্রহ, তারা
সঙ্গে চাঁদ ছড়ায় জোছনা হয়ে আপনহারা
নীলাকাশে চলে মেঘের স্বদল মহড়া!
তোমার ফুলে, তোমার বৃক্ষ-পাতার ফাঁকে
ওড়ে ফড়িংবউ কালো কোকিল ডাকে
প্রজাপতির রঙিন পাখা পুষ্পপত্রে নাচে।
তোমার নদী ডাকে তারই ঢেউয়ে জলে
পাড়ের হাওয়ার কানাকানি
নাম না জানা ফুলে!
স্বদেশ তোমার
সুন্দরতা দেখি শুধুই নয়ন মেলে।
মানুষ আমি
নারী আমি,
মেঘের মতো কৃষ্ণ চুলে আমার
শতাব্দির উন্মীলন, আমার প্রকাশেই
পৃথিবীর অহংকার!
পুরুষ তুমি, তোমার কর্মক্ষেত্রে
চিরস্থায়ী অমলিন প্রথম পদক্ষেপ
এই আমার-ই!
আমি নারী,
তোমার পুরুষ হৃদয়ে প্রেমময় চেতনার
প্রথম উন্মেষ ঘটিয়ে তোমার নিরাবরণ
নিষ্কলংক অপার্থিব স্বরূপ
আমিই করেছি ধারণ!
আমিই তোমার প্রথম গন্ধকুসুম!
নারী আমি,
হৃদয় প্রান্তিকে কখনো বকুল কখনো গাঁদা
কখনো রজনীগন্ধ্যার সুরভিত প্রতীক্ষায়
আমারই জন্য হয়েছ ব্যাকুল;
পরক্ষণে তুমি পুরুষ
পদদলিত করেছ আমার ইচ্ছে, আমার
অমলিন তৃষ্ণার আকাঙ্খা!
তুমি জন্মলগ্ন থেকেই শোষক!
শোষণ করেছ আমাকে!
চেয়ে দেখ, অনুধাবন করো
যাকে নিয়ে এতো হৈচৈ, এতো কথার লড়াই,
আমি সেই নারী
মানুষ হওয়ার আকাক্সিক্ষত হৃদয়ে দাঁড়িয়ে
বিশ^ প্ল্যাটফর্মে প্রকৃতির হাতে নির্মিত
তোমারই মতো অন্য এক মানুষ!