লাল খবর / কালো খবর
এখন আমরা শুধু বাঁচার জন্যই বসে থাকি
এখন আমাদের প্রার্থনায় যোগ হয়েছে
কতগুলো রক্তে ভেজা হাত।
এখন আমাদের চিৎকারগুলো বধির
দিনশেষে শূন্যে দিয়ে কান্না শুরু
অযথা ব্যস্ত কুকুরের মতো হাঁপাতে থাকে
আমাদের সকালের দৌড়।
আমরা সময়কে সম্মান করি
জিউসের বজ্রের মতো
অপ্রতুল অপেক্ষা নিয়ে বসে থাকি বটতলায়
লাল খবরগুলো পেলেই
আমরা কালো খবরগুলো ভুলে যাই নিমিষে।
২০.১০.২০
জাল
নদীর নীরবতার ব্যাখ্যা জানেন দীপেন মাঝি
কিন্তু আমি অন্য কারণে
মোহন জেলের কাছে যাই।
জালের মতো ছিদ্র চাদর গায়ে জড়িয়ে
মোহন আমাকে দেখায় তার ছেঁড়া-ফাঁড়া জাল।
জলহীন মাছের জীবন সংসারে
ঠান্ডা বালিতে ঘুমায় জমাট অন্ধকার
গাঙের হাড়ভাঙা বাতাসে শুকায়
মোহন ভাবীর শীতল সীসার মতো শীত।
মোহন বলেন, বাফে মরার আগে কয়ছিলো
“শীত আর জাল সেলাই করাই জেলেদের ধর্ম”
কিন্তু আমার মোন চায়
কোদাল দিয়ে কুপিয়ে-কুপিয়ে
জালটাকে টুকরো টুকরো করে
হাঁটু জলে নেমে চিৎকার করে বলি
আমার কোন জাল নেই , আমার কোন শীত নেই।
২৫.১১.২০
তৃষ্ণা
একগ্লাস ঠাণ্ডা জলের মতো আদর্শ
তৃষ্ণার্ত পাখি হয়ে ওড়ে যায় রঙের শহরে
অলিতে-গলিতে গজিয়ে ওঠে নির্বাক মানুষের চারা
চোখের নদীতে চাষ করা আবেগের সবজি
একদিন নিলামে ওঠে ভার্চ্যুয়াল বাজারে
করুণার সাথে বিক্রি হয় মানুষও।
ইট কংক্রিট রড সিমেন্টও
রসগোল্লার চেয়ে মিষ্টি কথা কয়
বাস্তবতার আয়নায় ঝলমল করে
হায়েনার মতো শীত।
০২.১২.২০
হেমন্ত ছাড়া বড়ো কোন ক্ষতো নেই
হেমন্ত ছাড়া আমার কোন বড়ো ক্ষতো নেই
আমি তো হেঁটে যেতে চাই সে ধান কাটা মাঠ সন্ধ্যা
রাতভর আকাশের নীরব কান্না শান্ত শিশিরের জল
বঙ্গ-বধূর আঁচল ভরা ক্লান্তির অনল।
হেমন্ত ছাড়া আমার কোন ভালো স্মৃতি নেই
আমি তো খুঁজি বিজন মাঠে সে শালিকের রাণী
দীঘির মাংসে মিশে যায় কুয়াশার অন্ধ অসীম
আমি বহন করি হিম হেমন্তের শুধুই হিমে কাঁপা ডিম।
হেমন্ত ছাড়া আমার বড়ো কোন কষ্ট নেই
ঘাসফড়িংয়ের মাথায় শুয়ে সেই হেমন্ত রাত
রজনী ফুঁড়ে ঢেলে দিয়েছে পূর্ণিমা ধবল দুধ
আজও ভেতরে হেমন্ত নেয় প্রবল প্রতিশোধ।
আকাশ ফুঁড়ে ওড়ে যায় পাখি
ডানামাখা অন্ধকার নিয়ে
পাখিটি ওড়ে যাচ্ছিলো বনের উপর দিয়ে
পাখিটি ওড়ে যাচ্ছিলো লেজের পেছনে
টেনে ঝড়
জলায় দাঁড়িয়ে মুখ তোলে তাকায়
বিপন্ন পৃথিবীর নিঃসঙ্গ ভোঁদড়
দেশ-ছেড়ে অরণ্যে ছেড়ে কোথায় যাস পাখি
এই আকাশের তলে তোর নেই কী’রে মাটি
নেই নেই কী’রে ঘর ?
পাখিটির দৃষ্টি দৃষ্টি ভরা ভয়
পাখিটির বাঁচা নিছক ফাঁকি
পাখিটি ওড়ে যাচ্ছে
যেভাবে আকাশ ফুঁড়ে ওড়ে যায় পাখি।
১৫.১১.২০
বাঁশি বাজায় রেফারি ও ইঞ্জিন ড্রাইভার
শীত এলে জলভারনত
চোখগুলোকে খুব মনে পড়ে
হৃদয়দীর্ণ করে ওড়ে যায় হাড়ভাঙা হাওয়া।
শীত এলে সেই বিষন্ন সঙ্গীত
জলের তলদেশে ঢুকে শান্ত করে দেয়
অশান্ত নদীর বিম্বিত ঢেউ।
একমাত্র শীতেই লজ্জার বাম্পার-ফলন
নিজের ভেতরে প্রবেশ করে
তলোয়ারের মতো তীক্ষ্ণ হয় নীলাজ কাপড়।
প্রগতির সাইনবোর্ড মাথায় নিয়ে
কাঁপতে-কাঁপতে কুয়াশার বাঁশি বাজায়
রেফারি ও ইঞ্জিন ড্রাইভার।
১২.১১.২০
পৃথিবীর ভ্রমগদ্য
রোজ রাতে রাস্তায় ঘুমিয়ে থাকা
বৃদ্ধকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম
দুনিয়ায় এতো জায়গা থাকতে
এখানে ঘুমিয়ে আছো কেন?
অন্ধের মতো বিড়বিড় করে বৃদ্ধটি
পারাপারের ঘাট দেখিয়ে বলেন
তুমি যাতায়াতের পথে ঘর বেঁধেছো কেন?
তার আঁখি ঝেরে আনন্দ বাতাস
ভাগ হয়ে যায় পুরোনো কবরের দিকে
তিনি একটি অস্পষ্ট আঙুল তাক করে বলেন
সমগ্র পৃথিবীর পথ ভ্রমগদ্য
একদিন অন্ধকারকে প্রশ্ন করো
তুমি জন্মেছিলো কেন ?
২০.১০.২০
তৃষ্ণার্ত লাশ
আদর্শের দুধ খেয়ে বড়ো হওয়া
একটি কালো ইঁদুর
একদিন হয়ে ওঠে ঈশ্বরের পবিত্র পাখি।
যে কি-না প্রতিটি মৃত্যুর দাগ মুছে
জ্বলন্ত পাহাড়ের পাদদেশে ফেলে যায়
তৃষ্ণার ডিম।
একদিন আগুন হয়ে তার বাচ্চারা ফুটে
তৃষ্ণার্ত পাখি হয়ে ওড়ে যায়
পায়ের নিচের পৃথিবী সরে চৌচির হয় মাটি।
শহরে-বন্দরে গ্রামে-গঞ্জে পড়ে থাকে
আমাদের তৃষ্ণার্ত লাশ।