আড্ডাপত্র

৬ কার্তিক, ১৪৩১; ২২ অক্টোবর, ২০২৪;সকাল ১১:৫৮

গুচ্ছকবিতা | কামরুজ্জামান

আড্ডাপত্র

মে ৮, ২০২১ | গুচ্ছ কবিতা

পদ্মা মেঘনা যমুনা

প্রেয়সী নেই কাছে তাই বই আছে চারপাশে
যখন তখন খুলে পড়ি ভালো লাগে যতক্ষণ,
কখনো কবিতা, উপন্যাস, গল্পের রহস্য নিয়ে যায়
দূরে আরো দূরে চন্দ্রনাথ চূড়া বনবীথি ছায়ে
শংখ নদী খরস্রোতা উচু নিচু পাহাড়ের গায়ে
চলেছে বয়ে মাদলে নৃত্যে অঙ্গ শোভা বুনোফুলে।

স্মৃতিকথা হৃদয়ে রেখে যায় গাঢ় নীল বেদনায়
যেভাবে বেড়ে উঠি থেকে নিরুদ্দেশ হলে আলকি
আর কোনো দিন কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না যাকে
মানুষ কিভাবে আসে সংসারে মায়াজালে
কোথায় চলে যায় অদৃশ্য ছায়া হয়ে…

ভিনদেশি কাব্য শরীর থেকে অফেলিয়া ভাসে
আসে প্রথম রাত, প্রোজ্জ্বল ক্লেদ, আলবাট্রস
ক্লেদজ কুসুম, নরকের এক রাত, প্রোফেটের জলযান
ফাউস্ট, ডা.জিভাগো, আন্না কারেনিনা, পুনরুত্থানে
নি:সঙ্গতার শত বছরের নীরবতা ভাঙ্গে টিন ড্রাম
শীতের স্বর্গোদ্যানের জ্যোৎস্নায় ঘুমিয়ে পড়ার আগে
আমাদের যেতে হবে দূরে আরো অনেক দূরে…

সঞ্চয়িতা সঞ্চিতা সোনার তরী থেকে প্রলয়োল্লাসে
শিল্পবোধ ও শিল্প চৈতন্যে আসে সোনালী কাবিন
পানকৌড়ির রক্তে লজ্জা নত লতাগুল্ম জুলেখার মন
প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে রোদ্র করোটিতে
সান্নিধ্যের আর্তনাদে খুলে যায় অবিনশ্বর দরজা।
রক্তের অক্ষরে দ্বিতীয় ভাঙ্গনের নির্মম পরিহাসে
পৃথক পালঙ্কে রাজা যায় রাজা আসে –
সন্ন্যাসীর বাঁশির আগুনে জাগে শিস দেয়া রাত
দাগ থেকে যাবে জ্যোৎস্না রোদ্রের চিকিৎসায়
জলের কারুকাজে কথা কবে পদ্মা মেঘনা যমুনা।

বৃষ্টির প্রার্থনা

বৃষ্টির জন্য কাতর প্রার্থনা এই তীব্র তাপদাহে
পুড়ে যাচ্ছে সব, যেনো তাপদাহ নয় দাবদাহ
আগুন লেগেছে গ্রিনহাউজ আমাজনে –
বৃষ্টির প্রতীক্ষায় সরল কৃষক দাঁড়িয়ে মাঠে
কারখানার শ্রমিক, পোশাক শিল্পীরা, হকার
ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বাসের কন্ডাকটর
ড্রাইভার, বাজারের মুটে মিন্তি, ইট ভাঙার মজুর
প্লাটফর্ম হাটে ঘাটে ঘুরে বেড়ানো বেওয়ারিশ কুকুর
সবার বৃষ্টির বড় প্রয়োজন আকাশ উজাড় করা
ঝমঝম অঢেল জলের ধারা শীতল প্রস্রবণ।

আকাল করোনা মহামারি প্রতিদিন মৃত্যুর সারি
শব শোভাযাত্রা শুধু সমাধিস্থল আভিমুখি
অবিশ্রাম খননে ব্যস্ত অসংখ্য গোরখোদক-
তবু তস্কর বাটপার লুটেরা ডাকাত লুটে নিচ্ছে
অগণন গরীবের হক যাবতীয় সহায় সম্বল
হত্যা গুম খুনে খুনে ভিনদেশী গুপ্তচর হন্তারকের
চারণভূমি হয়ে উঠছে নদীমাতৃক সোনার স্বদেশ।

সামান্য স্বার্থে অন্ধ আজ তারুণ্যদীপ্ত যুবতী যুবক
দিকশূন্য কে যাচ্ছে কোথায় কোন লেলিহান শিখায়
বেঘোর আত্মহননে জল রক্তের পঙ্কিল লাভায়।
কঠিন ঠুলি চোখে চোখে বুদ্ধিজীবী কুটিল সমাজ
কুলুপ আঁটা, ঠক,বলা ভালো তারা ক্ষৌর চর্মকার
মগজ বিকিয়ে দিয়ে উদর পূর্তি করেছে মরারক্ত পুঁজে,
মুক্তবুদ্ধি, মুক্তিযুদ্ধ, একুশের চেতনার ব্যবসাদার।

খরতাপে পুড়েছে সব নেই কথা বলার ঈষৎ অধিকার
বৃষ্টি দাও প্রভু, দাও অকুল প্লাবি নূহের জোয়ার
ধুয়ে মুছে যাক যত অসত্য লাঞ্ছনা অত্যাচার-
দূর হোক অমানিশা মহামারি করোনার
দাও রহমতের অবিরল বারিধারা প্রভু ঝমঝম
শীতল কর ধরণীতল সিক্তকর সবুজ স্বদেশে আামার।

পাহাড়ের কাছে

পাহাড়ের কাছে এলে পাহাড় কথা বলে ওঠে
আমি চাই সে তার নীরবতা নিয়ে নিশ্চুপ থাকুক
অজস্র অবাধ্য ঝর্ণাধারায় পাহাড় কেঁদে চলে
আমার সামনে মেলে ধরে তার অঙ্গহানির ক্ষতচিহ্ন
কত আঘাতে আঘাতে জর্জরিত জীবন যৌবন।

সহস্র প্রশ্ন রেখে স্ব বাক হয়ে ওঠে প্রগাঢ় সবুজ

দ্যাখ আমি কী ফুলে ফলে সুশোভিত করে –
রুপ লাবণ্যে বিচিত্র বৈভবে সাজিয়ে তুলিনি মায়া কুঞ্জ?
যেন ব্যথিত দুই নয়নের জ্বালা জুড়িয়ে নিতে পার
তৃষ্ণার উৎকন্ঠিত অস্থির হৃদয় লাভ করে প্রশান্তি।
মহা পরাক্রমশালী বিজ্ঞানময় আল্লাহর অপার অনুগ্রহ
বৃষ্টির জলের প্রবাহে স্রোতস্বিনী নেমে আসে জনপদে
কত প্রাচীন সুউচ্চ হরিৎ সাকিন থেকে…
যাতে তোমরা জীবন ধারণ করতে পার সহজে
শস্য দানা পরিপুষ্ট, সাথে পরিপক্ব হয় বীজ
পশু গুলো হ’য়ে ওঠে বলবান দুগ্ধ বতী রিস্টপুষ্ট
রাঙ্গিয়ে তুলতে পার সময় রকমারী বর্ণ বিভায়।

অথচ কী নিষ্ঠুর নির্দয় নির্বোধ তোমরা
তোমাদের শ্রবণেন্দ্রিয়ের বধিরতা এত প্রকট
আমার রোদনের শব্দ সনাক্ত করতে পারে না,
বাতাসের তরঙ্গের মধ্যে ছড়িয়ে আছে আমার বিলাপ।
করুণ বিউগলে সংখ্যাতীত আহত পাখিরা যেন
দিকশূন্যহীন হয়ে মেঘের খিলানে অদৃশ্য হয়ে যায়।

পাহাড় কথা বলে ওঠে সর্বাঙ্গে আত্মায়-

কত ধারালো হিংস্র তোমাদের ইস্পাতের অস্ত্র গুলো
ভয়াবহ বিধ্বংসী যাবতীয় মারণাস্ত্র সমূহ
আমাকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে এফোড় ওফোড় চলে যায়
বারবার আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়
পাহাড়ের কাছে এলে দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনি তুলে
শত সহস্র প্রশ্ন কেবলই অপার শূন্যতায় উঠে যায়-
বেদনার ভারে আর কত নীল হবো বল আমি?

চা’য়ের পেয়ালাগুলো

একটু আগেও সরব ছিলো চা’য়ের পেয়ালাগুলো
চুমুকে চুমুকে মায়াবী টুংটাং শব্দে শব্দে
তারা গেয়েছিল জীবনের প্রিয় গান
নিত্যদিনের পাওয়া নাপাওয়ার হিসেব।

এখন পেয়ালাগুলো পড়ে আছে শব্দহীন
ভাষাহীন নীরব নিথর ঠান্ডা-
নিঃসঙ্গ টেবিলে ছড়ানো -ছিটানো
যেন অনন্তকালের শূন্যতা করেছে গ্রাস
এই সামান্য আগেও শব্দ ছিল
তারুণ্যের জয়গান ছিল
যাত্রা ছিলো স্বপ্নের ভেতর।

পেয়ালাগুলোকে ছেড়ে আমরা ছড়িয়ে গেছি
বাসের হাতলে কেউ কেউ বা রিক্সায়
রাত্রির আঁধার, কিংবা দিনের আলোর বিভায়
আসলে কোথায় ফিরেছি আমরা
জীবনের কাছে, না অপার সংগ্রামের মধ্যে?

শ্রাবণী মল্লিক

কবিতার উৎসবে কথা হয়েছিল আপনার সাথে
বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছিল খুব, তবু শ্রোতারা ছিল
কবিতার আয়োজনে এর বেশি লোক কী প্রয়োজন।
খুব মৃদু স্বরে কথা চলছিলো আমাদের
মাঝে মাঝে মুখ তুলছিলেন আপনি কবিতার দিকে।

কবিতা আপনার ভালোলাগে লিখেনও এক আধটু
ভালোলাগে জিব্রান,নেরুদা, রিলকে,বোদলেয়ার
জীবনানন্দ, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, আবুল হাসান।

দিন খারাপ ছিলো বাহিরে বৃষ্টি ঝরছিল খুব
কথা বলছিলেন ভ্রুভঙ্গিতে সুনিপুণ নিমগ্নতায়
যেন বহুবার আপনাকে আগে কোথাও দেখেছি
কতবার কথা হয়েছে এমন ঘোরলাগা সন্ধ্যায়।

কত প্রগাঢ় উচ্চারণে বলেছিলেন কবিতা আপনার ভালোবাসা…

জানি না কেনো আমার আগ্রহ জমেছিল অন্যদিকে
না মিডিয়ার ক্যামেরা, না চিত্র গ্রাহক,না বৃষ্টি, না কবিতা

শ্রাবণী মল্লিক কেনো কাজল পড়েননি আজ বিকেলে…

সিটি গোল্ড

স্বপ্নের মতো মেয়েটি উদয়াস্ত বিপণী বিতানে
বিক্রি করে চলে মেকি সোনার গহনা।
ঝকমক করে,চকচক করে,চমকায় ঠিক
বাল্যশিক্ষার পাঠ,চকচক করিলে সোনা হয় না।

সহসাই ফিকে হয়ে যাবে পানির প্রলেপ
তবু আমাদের প্রয়োজন সোনালী এমনই রঙ।

এক টুকরো মুক্তোর হাসি লাগিয়ে রেখে
সারাক্ষণ ড্রাই লিপস্টিকের শুকনো ঠোঁটে
দিনদিন কেমন মলিন হয়ে যাচ্ছে –
স্ফটিক কাঁচের ওপাশে স্বপ্নের মতো সোনার মেয়েটি।

অবিরাম গ্রামোফোনে

এ্যাভিনিউর ফুটপাতে সন্ধ্যায় ঝলমল করছে আলো
আপনার ভালো লাগতো এমন সুন্দর উজ্জ্বলতা
আলোর অন্বেষা ছিলো নিরন্তর বাইরে ভেতরে।
নিপুণ সেকরার মতো নিমগ্ন থেকে জ্ঞান পিপাসায়
আচমন করে সুধা, প্রাণ খোলা মতামতে –
উচ্ছ্বাসে কলহাস্যে নগরের অলিগলি, রামপুরায়
ছোট বড় টি স্টল কফিশপ বর্ণাঢ্য রেস্তোরাঁয়
কত প্রিয় সান্নিধ্য কেটেছে আমাদের মুগ্ধতায়।

পল্টনে পুরনো বইয়ের যত বিক্রেতা তারাও
আপনাকে জেনেছিল জানি কাছের মানুষ।
গ্রন্থের স্তুপ থেকে তুলে নিতেন কত অমূল্য রত্ন
তারই রস ছড়িয়ে দিতেন জনে জনে আত্মায়
মৃদুস্বরে বলতেন পাঠের বিকল্প নেই অন্য কোনো…

আর কোনো দিন কোথাও এভাবে পাবোনা আপনাকে
উজ্জ্বল ফুটপাতে,প্রেসক্লাবে, উৎসবের কোনো দিনে।
কী অসামান্য সাধারণ নির্মোহ জীবন করেছেন যাপন-
জ্ঞান তৃষ্ণা ছাড়া কোনো কিছুই স্পর্শ করেনি প্রাণ।
এত সমসাময়িক প্রাগ্রসর ছিলেন মননে চিন্তায়
প্রতীক উপমা শব্দালংকারে সাজিয়ে ছিলেন
সহস্র পংক্তিমালা অবিরাম গ্রামোফোনে প্রজ্ঞায়।

কামাল এর জন্য এলিজি

জন্মের আনন্দে মৃত্যুকেও এনেছিলে সাথে সাথে
কত কথা তোমার দিয়েছ ছড়িয়ে দিবা রাতে।

কবিতা কবিতা করে নিবদিত অন্ত প্রাণ তুমি
সাজিয়ে দিতে চেয়েছ বহুবর্ণ ফুলে মনোভূমি।

গ্রাম গঞ্জ মাঠ ঘাট শহর নগর পথে পথে
কুড়িয়ে নিয়েছ একটু একটু করে সুধা কাব্য রথে।

ছিল সৌন্দর্য পিয়াসা তোমার আকন্ঠ তৃষ্ণায়
উপমা অনুপ্রাস শব্দের নিপুণ ছন্দে কলায়।

ছুঁয়ে ছিলে কত শত প্রাণ শান্ত স্নিগ্ধ প্রেমে
অশ্রু ঝরে যাবে বলে হৃদয় অন্দর হেরেমে।

প্রস্তুত ছিলনা কেউ নিতে বিদায়ের ব্যথা ভার
সহসা যাত্রা তোমার কোনো ডাকে ফিরবেনা আর।

জীবনের সাথে সাথে মৃত্যু এনেছিলে এত কাছাকাছি
শুভেচ্ছা জানাতে এসে সবাই শোকে মূক হয়ে আছি।

নখ মরে যাচ্ছে

কখন কোথায় কবে কার দুয়ারের কপাটে
লেগেছিল এমন ব্যথা আঙ্গুলের নখে
মনে নেই কার দুয়ারে দুঃখ হয়েছিল সঙ্গী।

ব্যথা ছিল খুব, রক্ত জমে নীল হয়েছিল কিছুদিন –
কেবলই শুধু এইতক মনে আছে
একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল সকল দুয়ারের কপাট
ফিরে ফিরে যাচ্ছে আমার মুখ
আমার চোখ, আমার হাতের স্পর্শ…

এখন দেখি কালো হয়ে আঙ্গুলের নখ যাচ্ছে মরে।

রাত্রি যাপন

একটা পরিত্যক্ত ভবনের ছাদে শীত রাত্রি কাটে
কিছু শুকনো খড়িতে দিয়ে আগুন আমরা –
বসে ছিলাম চক্রাকারে রক্তাভ হয়ে উঠলো
আমাদের মুখ, কত প্রাচীন এই লেলিহান শিখা।

ভাঁজ করে দিতে দিতে ছোট কাঠের টুকরো গুলো
কোনো কিছুই তেমন মনে আসছিলোনা আর
রাতের গভীরতা কত, না মনে ছিল সংসার…
ঘণ কুয়াশা গ্রাস করে নিলো নিওনের আলো।

লহু বরণ অঙ্গার আগুনের পাখা মেলে
উড়ে যাচ্ছিলো শত সহস্র ফিনিক্স
যখন আবার চোখ তুলে তাকালাম পরস্পর
চারিদিকে ঘণ অন্ধকার যেনো কুয়াশা ঝড়…

ভূমি দস্যুদের জড়ো করে তোলা চতুরধা
বিপুল বিশাল বালুকা রাশির স্তর
নতুন শহর গড়ে তুলছে তারা ঢেকে দিয়ে
গ্রাম গঞ্জ হাট ঘাট প্রগাঢ় সবুজ সমারোহ।

কালো জল নিয়ে পাশে বয়ে যাওয়া নদী
আহত বেদনা জরজর অপলক নিরুত্তর।

আধখানা চাঁদ যা – ও ছিলো সামান্য আলো
তা -ও মুছে গেল আঁধার চাদরে নিরন্তর
আরো গভীর হলো রাত দূর থেকে শব্দ –
ভেসে চলে এসকো মিটার বুলডজার দুর্মদ দুস্তর।

নদীর রুধির

অগ্রজ কবি সরকার মাসুদ ভাই কে

সোমেশ্বরী নদীর জলে সিক্ত পথে যেতে যেতে
মনে হলো একি কান্না অশ্রু ঝরে ফোঁটা ফোঁটা
স্ফটিক বিন্দু বিন্দু বারিধারা বেদনার্ত সৈকতে।
ধাতব কোদাল নেমে গিয়ে নিচে নাড়ি ছিন্ন করে
দিবানিশি তুলে আনে মৃত্তিকা মর্মমূল –
সহসা আবার মনে এলো এ জল নয় নদীর রুধির।

লাল মাটি রঙে রঙে রক্ত পঙ্কিল জমেছে থৈথৈ
আঁকাবাঁকা বহু পথে গ্রাম গঞ্জ হাটে ঘাটে
কুয়াশার ঘণ অন্ধকারে কিছু সুঠাম শ্রমিক
প্রচন্ড শৈত্য প্রবাহে যন্ত্রের মতো ক্রিয়াশীল
মসৃণ করে দিতে পথ ব্যস্ত জঞ্জাল সরাতে।
নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এসে লরি ট্রাক গুলো
উদর পূর্তি করে আবার ফিরছে গন্তব্যে।

কিছু জীবাশ্ম অঙ্গার তাও মিলছে একটু গভীরে
কতকাল আগে কোন জনপদ গিয়েছে ঢেকে
বিশাল বালুকা রাশির শীতল অতলে-
কে জানে তার খোঁজ, আরো কোনো
দুঃখের নদী গিয়েছিল কি বয়ে ভূতলে?

নিষ্প্রদীপ নিশুতি রাতেও নিষ্কৃতি নেই বক্ষ খননে
ঘরঘর ঝনঝন শব্দে চলে বলগেট ড্রেজার ইঞ্জিন
ফোঁটা ফোঁটা ঝরে যাচ্ছে জল অবিরল পথে পথে
মেঘ পাহাড় চুম্বনে নেমে আসছে ধারা অপার
নদীর উদর থেকে উঠে আসছে প্রাচীন মুদ্রা কান্নার।

ধান কলে গান

দূর বহু দূর থেকে মিষ্টি সুবাস ধান কলে উষাকালে
বিস্তৃত চাতাল জুড়ে সোনালী সোনালী শস্য দানা
মেলে দিতে হয় রোদ্রে, সেই মধ্যরাতে জ্বলে ওঠে উনুন
যারা শ্রমিক এখানে নারী পুরুষ ফারাক গ্রাম থেকে
ধান কলে স্বর্ণ রঙ শস্য নিয়ে দিবানিশি খেলা করে।

বাতাসে উড়িয়ে সরিয়ে নিতে হয় ফাঁকা চিটা
পক্ষি দঙ্গল পড়ে খুঁটে নিতে আহার বিহার
বহুবর্ণ পায়রা গুলো নামে উপর থেকে সুন্দর
সবারই আছে অধিকার নির্মল খাদ্য প্রাণে।

নুন ঘামে বৃষ্টি রোদে পুড়ে পুড়ে যারা তৈরী করে
আমাদের অন্ন পুষ্টি শক্তি স্নেহ মায়া প্রেম,
কোনো বড় স্বপ্ন নেই দু’চোখে তাদের
ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে বয়ে যায় পিঠে
তাবত ব্যথা ভার, আর মায়ার সংসার।

ধান কলে শ্রমে ঘামে দূর থেকে দূরে
আলপথ ফসলের জমি গ্রাম থেকে গ্রাম
পার হয়ে এসে প্রসস্ত বিশাল চাতালে
দিবানিশি মেলে দিয়ে ধান আবার গুটিয়ে তোলে
তাদের প্রত্যেকের বুকের ভেতর আরো –
প্রসারিত অবারিত দুঃখের চাতাল আছে।

হররোজ তারা রোদে মেলে দেয় যাবতীয়
অপ্রাপ্তি ক্ষুধা অপমান অব্যক্ত জ্বালা যন্ত্রণা
দিন শেষে আবার কুড়িয়ে জড়ো করে দুঃখের কণা।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১