ক্যাফে বর্ষা
০১.
বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ—
চায়ের টংঘরে ভেসে আসে
পুরনো রেডিও গান!
০২.
বৃষ্টি নয় জল সংক্রমণ—
জানি তুমি ডুবে যাচ্ছ
হারানো ভায়োলিনের মতন!
০৩.
কুঠুরিতে বেড়ে ওঠা কাঠগোলাপ—
সেও আজ জেগে ওঠে
শুনে নেয় জলের প্রলাপ!
০৪.
কোভিড শ্রাবণে কাটে রাত—
মড়কলাগা এ নরকে
ফিরবে কি প্রেমের প্রপাত?
০৫.
বৃষ্টির ক্লিনিকে তবু যাব—
তোমার হাতই বুঝি থার্মোমিটার
মারি শেষে তোমাকে কি পাব?
বেহালা
হাওয়ায় উড়ছে শুধুই হাহাকার
কোভিড ছড়ানো এ সন্ধ্যায়—
গোধূলির লালাভ আলোতে গান গায়
এক বিষাদ ময়ূর!
দূরের ছড়ানো ঝিমপথে আমি হেঁটে যাই
দীপাবলি জ্বলে ওঠা দেবীর ডেরায়—
ধীর বেজে ওঠা ঘুম কানাড়ায়
মৃদু হাতে কড়া নাড়ি বন্ধ দরজায়!
হাওয়ায় উড়ছে শুধুই হাহাকার
কোভিড ছড়ানো এ সন্ধ্যায়—
শুনি, শহরের শেষ বাড়ি জুড়ে
হালকা জড়ানো স্বরে
বাজছে, বেজেই যাচ্ছে এক বিভোর বেহালা!
বীণা
বৃষ্টির ছড়ানো সুরে বেজে ওঠে এই রাতে
বীণা ও বেহালা!
জানি, এ বৃষ্টিতে কেউ নাড়বে না কড়া দরজায়
অধরা বাগদেবীর মতন!
তোমার নাভিতে আঁকা আছে এক প্রজাপতি;
এ বৃষ্টির রাতে আমি তা ছুঁতে যেতেই
হাওয়া আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়
ভ্রম সরোবরে—
সরীসৃপ ছুটে চলা ঘুম পরিখায়!
তোমার নাভিতে আঁকা প্রজাপতি উড়ে যেতেই
চেরাকাঠে বেজে ওঠে ঘুমঘোর বীণা!
প্রেম : সীমিত আকারে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে
এ বর্ষায় কদম ফুলের সাথে সুগন্ধি রুমাল নিয়ে বসে আছি! হাওয়ায় ভেসে আসছে শুধু হাহাকার—জলের রোদনে ভিজে যাচ্ছে চারিধার—আর আমি বৃষ্টিতে ভিজছি একা—বসে আছি যেন মাস্কপরা আকাশের নিচে! রিকশায় আঁকা প্রজাপতি, উড়ে আসা ভাঁটফুল, পুরনো রেডিও গান বেজে চলা চায়ের টংঘর আমাকে জানিয়ে দিচ্ছে তুমিও ভিজছ খুব রাস্তায়, আসছ আমার দিকে—ভিজে যাচ্ছ জমাট বর্ষায়! এ করোনাধারা জলে বাগদেবী মনে হয় লুকিয়ে রয়েছে কোনো কোভিড ডেরায়! সোনালি দস্তানা পরা হাতে তুমি ভিজে যাচ্ছ—তোমার শাড়িতে ছাপা আছে এক কেয়াবন যার মাঝে নেচে যাচ্ছে এক নিঝুম ময়ূরী! এ বর্ষায় কদম ফুলের ঘ্রাণ না হলেও আজ এসো; না হয় তোমার কাছ থেকে কিছুটা দূরেই বসে থাকব, হাত দুটোও গুটিয়ে রেখে বসে থাকব! শোনো, কীভাবে দূরত্ব বজায় রেখে পাশাপাশি বসে থাকতে হয় এ লকডাউনে আমি দিনরাত সেই প্র্যাকটিসই করেছি! এ বর্ষায় তবু আজ প্রেম হোক; সীমিত আকারে হলেও তা হোক, স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলেও তা হোক!
শ্রাবণ মাতম
হাওয়া ও হাহাকার ঘেরা এ বর্ষায়
দূরের ছড়ানো পথ ছেয়ে গেছে
কোভিড ও কদমে!
তবু জলের অপেরা থেকে ভেসে আসে
মেঘ সারগাম—
ঘাসের ঘুঙুরে শোনো বেজে ওঠে
শ্রাবণের গান!
মারি ও মড়ক লাগা এ বর্ষায়
নদী ও নারীর ঢেউ থেমে গেছে
ব্যাধির মাতমে!
দ্যাখো ঝিম কেয়াবনে ছুটে যায়
নিঝুম ময়ূরী—
ছাতিম ফুলের ঘ্রাণে নেচে ওঠে
বৃষ্টির কিন্নরী!
কান্না ও দহন চেরা অঝোর শ্রাবণে—
আমি তবু জেগে উঠি জল সংক্রমণে!
টংঘর কবিতা-১
এই দূর ধূলিপথে—ছায়া ও ছাতিমতলা পার হয়ে—
আমাকে ডাকছে শুধু
চায়ের টংঘর, ডাহুকের মৃদু স্বর, হুইসেলে জংশনের সুর!
টংঘর কবিতা-২
দ্যাখো ছাতিমতলায় কোনো লকডাউন নেই—
ছায়া এসে গান গায় পথিকের ধূলিচেরা মনে!
টংঘর কবিতা-৩
শারদ আমাকে ডেকে নিচ্ছে দ্যাখো রাধার ডেরায়
কোভিড উনিশ-এর কী সাধ্য আজ আমাকে ফেরায়!
টংঘর কবিতা-৪
শোনো, এ দহনকাল শেষ হলে
গহন অরণ্য পথে
আবার শুনতে যাব পাখিদের নোটবুক!
শোনো, এ আঁধারকাল শেষ হলে
নিঝুম গোধূলি পথে
আবার দেখতে যাব ঝরাপাতা চিরকুট!
ও হাওয়া
ও হাওয়া
তবে কি এটা স্বপ্ন থেকেই পাওয়া?
হালকা রথে তোমার কাছে যাওয়া!
আমার শুধু শুকনো পাতা ধাওয়া—
রাতপহরে রূপার তরী বাওয়া!
ও হাওয়া
বুঝিবা এটা ভ্রান্তি থেকেই পাওয়া?
হিজল পাতা বরষা জলে নাওয়া!
ছাতিম কাঠে নীল ময়ূরীর মায়া—
শাওন দিনে আলতো এ গান গাওয়া!
ও হাওয়া
বলছ এটা গল্প থেকেই পাওয়া?
হাতটি তাহার অল্প ধরতে চাওয়া!
কাঠের বাসর গোলপাতাতে ছাওয়া—
বাদল দিনে তাহার কাছে যাওয়া!