আড্ডাপত্র

৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১; ২৩ নভেম্বর, ২০২৪;রাত ১০:২৭

গুচ্ছকবিতা |অর্চনা দে বিশ্বাস

অৰ্চনা দে বিশ্বাস
অর্চনা দে বিশ্বাস ভারতের একজন প্রতিষ্ঠিত কবি ও লেখক। তিনি উত্তর ২৪পরগনার অশোকনগরে এক অভিজাত ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন। বাবা অচ্যুতানন্দ বিশ্বাস ও মা মুক্তা বিশ্বাস।পেশায় দুজনেই শিক্ষক ছিলেন। তারাও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী।অর্চনা দে বিশ্বাস উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ছোটবেলা থেকে লেখালেখি করে চলেছেন। নবকলেবরে ‘অন্বীক্ষা’ নামক মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক।দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে ভারত ও বাংলাদেশের অনেক সাহিত্য পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লিখে চলেছেন। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি যুক্ত আছেন। প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ: জীবন যে রকম, নীল আকাশের স্বপ্ন, আলো আঁধারে, তোমাকে মনে পড়ে, পরম্পরা, অমৃতস্য পুত্র, একমুঠো রোদ্দুর, এক চিলতে আলোর খোঁজে, জলতরঙ্গ, প্রণয়পরশ, ফুল ফোটাবো বলে, অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো, মেঘছায়া, বুকে বেহাগের সুর, মেঘ বৃষ্টি রোদ্দুর, গল্পগুচ্ছ প্রথমভাগ, প্রেম প্রকৃতি ও এইসময় ইত্যাদি। পুরুস্কার ও সম্মাননা: তিনি দাবদাহ সম্মান, মহাবঙ্গ কবি নজরুল ইসলাম স্মৃতি সম্মান, মহাবঙ্গ বিদ্যাসাগর স্মৃতি সম্মান, কবি জার্জিস আলি সম্মান, বঙ্গদেশ সাহিত্য রত্ন ও দুবার রৌপ্য সম্মান, ফুরফুরা শরিফ মোল্লাপাড়া বিশ্ব মনীষী কোষ পুরুস্কার, কলকাতা লোক সংস্কৃতি সরলা দেবী স্মৃতি সম্মান, শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরুস্কার, আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য পরিষদ থেকে রাজা রামমোহন স্মৃতি সম্মান, কবি আহাসান আলী স্মৃতি সম্মান, খোলা চিঠি কবি শঙ্খ ঘোষ স্মৃতি সম্মান, তিন বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌল্লা স্মৃতি স্মারক পলাশী সম্মাননা, ঊষসী সাহিত্য সম্মান, শেষ শতাব্দী সাহিত্য পুরুস্কার সমুদ্র জানালা সাহিত্য সম্মান, অভিব্যক্তি সাহিত্য পুরুস্কার, নিরদামোহন স্মৃতি পুরুস্কার, কবি জলধর সাহিত্য সম্মান, একুশের ডাক সাহিত্য সম্মান, সন্ধ্যাতারা সাহিত্য সম্মান, তোর্ষা তরঙ্গ সাহিত্য সম্মান ইত্যাদি বহু সম্মান লাভ করেছেন। বাংলাদেশ থেকে পাবনা কবিতা মঞ্চ রজনী কান্ত স্মৃতি সম্মান ২০১৮, কুস্টিয়া কাঙাল হরিনাথ স্মারক সম্মান ২০১৮, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক ঢাকা ২০২০, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি স্মারক ঢাকা ২০২০, কল্লোল সাহিত্য পুরুস্কার বরিশাল ২০২০, জসীমউদ্দীন সাহিত্য স্মৃতি সম্মান ফরিদপুর ২০২০ ইত্যাদি সম্মান অর্জন করেছেন

জুন ১৪, ২০২২ | গুচ্ছ কবিতা

ঝিলমিল আলোর নদী

ঐ যে নদীতে ঝিলমিল আলো খেলে সারা দুপুর
মাঝি খেয়া বায় ছুপছুপ ঢেউ ভাঙ্গে
জেলেরা জাল নিয়ে অবিরত মাছ ধরে
ওর পাড়েই দাঁড়িয়ে আছে বুড়ো বটগাছ
অনেক দিনের সাক্ষী
অশ্বথ গাছটি তাকে জড়িয়ে রয়েছে
অনেক কাল আগে কারা যেন বিয়ে দিয়ে ছিল
ফুল মালা চেলি চন্দনে বিস্তর বাদ্য বাজনা হল
ওরা পাশাপাশি থাকে
অশ্বথের ডাল জড়িয়ে ধরেছে বটের ডালপালা
বটের বাতাস লাগে অশ্বথের গায়।
আসেপাশে কদম আর কৃষ্ণচূড়া সারি সারি
আলো মেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে
বর্ষা আর বসন্তে ওরা আলো হয়ে ওঠে
কত পাখি আসে গান গায় ডালে বসে
পথিকেরা ছায়ায় দুদন্ড দাঁড়ায়।
নদী সব দেখে পাল তোলা নৌকা ভাঙা দাড়
পরিত্যক্ত ঘরদোর
সব ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়া অসহায় মানুষ
কত চোখের জল দেখেছে নদী
সব দেখে দুহাতে আগলে রাখে কিছুটা সময়
কিছুটা ভাসিয়ে নিয়ে যায় নদী অনাবিল স্রোতে…
কখনো বা লিখে রাখে গহীন শব্দ পাড়ে বসে কোন ব্যাথাতুরা নারীর
গোপন বেদনার কথা কিম্বা
ডিঙি বেয়ে যাওয়া কোন এক তরুনের অনন্য উপখ্যান।
নদী সব জানে
হাত বাড়িয়ে ডেকে নেয় রাখাল ছেলেকে
তার বাঁশিতে যে মেঘলা দুপুর সুর র্ওঠে,
কোন এক বিরোহী পুরুষ দুঃখগাথা শুনিয়ে যায় পঞ্চবেণীর থানে
নদী উত্তাল হয়।
নদী শোনে বট অশ্বথের ফিসফিস কথা
পাখির কূজন আর ভেসে যেতে থাকে আনমনে
অনাবিল ভাঁটার টানে…

চর্চিত জীবন

চলে যাব বৈকুন্ঠপথ পেরিয়ে
তারার আঁচলে বেঁধে নেবো কালপুরুষ
কাল রাত্রি থেকে খসে পড়বে একটা শুদ্ধ সকাল
যত নিয়মের দেওয়াল আছে
সেখানেই সিদ্ধ পুরুষেরা তপস্যারত
আমিও চেষ্টা করেছি যোগিনী হতে
নিয়মের আতিশয্যে শক্ত করে বেঁধেছি
কন্ঠে রূদ্রাক্ষের মালা কপালে রক্তচন্দনের তিলক
কমন্ডুলে স্রোতস্বিনী
নাভিকুণ্ড থেকে জেগে উঠেছে ইড়া পিঙ্গলা
কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীর চাঁদ অস্ত যেতেই
ঘিরে ধরেছে অমানিশা
আত্মযোনির ভ্রমণ পথ স্থির হয়
না আমার আর যোগিনী হওয়া হলো না
ধরিত্রির স্নিগ্ধ পালকে লিখে দিলাম জীবনকথা
কালপুরুষের উদ্ধৃত ধনুকে অমৃত
শুদ্ধ সকালে মেখে নিলাম অমৃতসুধা
চর্চিত জীবনে হৃদয় মন্থন করে অনন্ত দহন
দহনের মধ্য দিয়ে পবিত্র পরিশুদ্ধি
পৃথিবীর আনন্দ নিকেতন ।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ

অনেকদিন থেকেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধটা শুরু হয়ে গেছে
আর একটা ভয়ংকর যুদ্ধ
পৃথিবীর সব মানুষ বেরিয়ে পড়েছে পথে
সোজা পৌঁছে যাচ্ছে রাজপ্রাসাদ
ভেঙে চুড়ে গুড়িয়ে দেবেই বাস্তিল দুর্গ
মানুষের কণ্ঠরোধক ইমারত
পৃথিবীতে শোষণাগার একটা নয়; অসংখ্য
সকলের জেগে ওঠা প্রয়োজন
জেগে ওঠাটা বেঁচে থাকার একমাত্র ওষুধ
প্রাতঃক্রিয়া খাদ্য ঘুম ভালোবাসার মতো অত্যাবশ্যকীয়
তৃতীয় শ্রেণির মানুষদের ঘুম ভাঙ্গছে
জেগে উঠেই নামিয়ে আনবে জাত-পাত
ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের উচ্চতার মুকুট
বিত্তশালীর অহঙ্কারী বৈভব।
এবার হবেই বাস্তিল দুর্গের পতন
পৃথিবীটা সমান হবে
থাকবে না কোন বৈষম্য
কোন শ্রেণী সংরক্ষিত থাকবে না
দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণী নয় সবাই প্রথম শ্রেণী প্রথম সারি।
পৃথিবীর কোনায় কোনায় পৌঁছে যাবে ভালোবাসা
ভেদাভেদ হীন মানুষ একটা ভালোবাসার পৃথিবী।

আতপ্ত হৃদয়ের গান

ছেলেটি সারেঙ্গীতে সুর তুলেছে
আমি পিয়ানোটা ছুঁতেই বেজে উঠল আশাবরী রাগ
অনন্ত প্রত্যাশা মিশে গেলো খুশির প্রবল ধারায়।
জীবনে তো চাওয়ার কম নেই
যা ইচ্ছে চাইতেই পারো
আহার পরিধেয় মণিমানিক্য প্রাসাদ
ভোগবিলাস অধিকার সঞ্চয়
নিদেনপক্ষে একটা সাম্রাজ্য
চাহিদাগুলি বড় ক্ষুদ্র সীমিত।
অনন্ত গগনের কতোটুকুই বা দেখা জানা
বিপুলা ধরিত্রীর কেবল একটা ছোট্ট জীবন
পার্থিব কামনায় আরক্ত প্রাণ।

যদি কালস্রোত বয়ে যায় অনন্তের আরাধনায়
বল্মীকি রচনা করেন দীর্ঘ আল্পনা
সকল সত্তার ক্ষয় হয়
দস্যু রত্নাকর বাল্মীকির জন্ম নেয়।
আমাদের ছোট্ট খুশি সুখদুখ নিত্য আলাপ
পরিবার পরিজন বন্ধু ব্যাকুল প্রলাপ
প্রতিদিন ক্ষয় হয় ক্ষণিক কল্পনা
গার্হস্থ্য জীবনের যতেক যন্ত্রণায়।

আছে স্বপ্ন ভালোবাসাবাসি হৃদয়ের গান
আমাদের ছোট্ট বাবুয়ের বাসায়
আতপ্ত খুশির স্বর্গ রচনা।

কী বলতে এসেছিলে

বলো কী বলতে এসেছিলে
জীবনের চরম কিছু কথা
যন্ত্রণা , বুকের রক্তক্ষরণ।
অথবা অপমান
ক্রোধে রক্তচোখে স্পর্ধায়
অক্টোপাসের মতো বেঁধে ফেলা উত্তাল সমুদ্র ঢেউ
নাকি ভালোবাসা ,
নদীর সুমধুর সঙ্গীতে ভাসিয়ে দেওয়া বাঁকা চাঁদ
নীল আকাশে তারার আল্পনা
বলো কী বলতে এসেছিলে
হৃদয়ের সব জড়ানো অভিযান
শূন্যতার ভয়!

তবু তো এসেছিলে চোখে চোখ রেখে নির্নিমেষ দৃষ্টি
কিছু আবেগ উদ্বেলিত উচ্ছাসে
নিতান্তই আপনজন ।

নাই বলা হোক তবু তো এসেছিলে …
আর তো কেউ আসে নি কখনো
রাগতমুখ কিম্বা মুগ্ধ চোখে চায়নি মুখে
দেখেনি চেয়ে অশ্রু সজল চোখ।

ফেলেনি দৃষ্টি বুকের গভীরে
যেখানে লুকানো হাহাকার
কিছু পাপ কথা ফল্গুস্রোত
আর ভয়ংকর প্লাবন।

উড়কি ধানের খই

ভোর হতেই আজ রোদ্দুরটা ঝিলমিলিয়ে উঠল
মনের মধ্যে সোহাগী মেঘ
উড়কি ধানের খই ফোটায়,
চারদিকে সবুজে সবুজ সবুজ
গাছের উপর বৃষ্টির ফোঁটায় মেঘের আবার মুখভার
ধানের ক্ষেতে ঝিলমিল আলো
কচি ধান গাছেরা আলতো আলোতে দোলে
অঘ্রাণের বাতাস পেয়ে ধানের শীষে নূপুরের শব্দ
লক্ষীকে ঘরে তোলার আয়োজন
চাষিরা সারাদিন মাঠে কাজ করে
আলপথে ঘুরে ঘুরে দেখে
সন্তান স্নেহে আগলে রাখে ধান
ভালোবাসা শুধু মানুষের সঙ্গেই হয় না
প্রাণ পেলেই প্রাণে স্পন্দনের অনুরণন
গভীর প্রেম বয়ে যায়।

ঝমঝম বৃষ্টিতে বাঁশির শব্দ
বাতাসে ভাসে মালকোষ রাগ
বাঁশি বেজে চলে বুকের ভিতর;
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চাষি স্বপ্ন দেখে –
একদিন গোলা ভরে যাবে ধানে
নবান্নের গন্ধ
উড়কি ধানের খই ফুটবে ছড়িয়ে পড়বে বাতাসে।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০