সবুজ ক্ষেতে ঢেউয়ের দোলা
সোনা মাখা রোদের ঝিলিক
চুমোয় নরম ঘাস
শিশির কণা পাতায় পাতায়
জল ফড়িংয়ের বাস।
ভেসে আসে হাওয়ায় হাওয়ায়
দূর হতে ঐ দূর
প্রাণ ভরে দেয় রাখালিয়ার
করুণ বাঁশির সুর।
সজনে গাছে পিক পাপিয়ার
সুরের গুঞ্জরন
হনাল ফুলের হলদে রঙে
জুড়ায় সবার মন।
কাশের বনে মুচকি হেঁসে
নাড়ায় মাথার চুল
নীলাকাশে মেঘের জোয়ার
নিঝুম নদীর কূল।
বন বনানী প্রাণের ছোঁয়া
ধানের ক্ষেতে ক্ষেতে
উছাল হাওয়া ঢেউ দিয়ে যায়
পালিয়ে যেতে যেতে।
ঝড়ের তোড়ে ওড়ে যেন
পাগলি মেয়ের কেশ
সবুজ ক্ষেতের ঢেউয়ের দোলা
আমার সোনার দেশ।
স্মৃতির মিনার
ভালোবাসি ফুল নদী
পাখিদের গান
বিলে ঝিলে সাঁতরানো
আউশের ধান।
ধানে ধানে গোলা ভরা
জলে ভরা খাল
শাপলা শালুক ফোটে
গাছে গাছে তাল।
কাশফুলে ভরে যায়
নদীর কিনার
মায়ের আদর যেন
স্মৃতির মিনার।
কিশানের ভালোবাসা
সবচেয়ে খাঁটি
সোনালী ফসলে ভরা
স্বদেশের মাটি।
কাশের বনে জোনাক জ্বলে
দিনের শেষে আবছা আঁধার
যখন নামে রাত
কাশের বনে জোনাক জ্বলে
বাতাস বাড়ায় হাত।
মন চলে যায় অন্তবিহীন
দূর আকাশের গাঁয়
একটি চাঁদের অবাক করা
লক্ষ জোছনায়।
নীলের স্রোতে ময়ূরপঙ্খী
চলছে ভেসে ভেসে
আপন ভোলা মন চলেছে
কোন সে নিরুদ্দেশে।
সবাই যখন ব্যস্ত কাজে
স্বপ্নে দেখি আমি
লাল কমল আর নীল কমলে
নীরব অনুগামী।
স্বপ্ন আমার স্বাধীনতা
আমি যখন ছোট্ট ছিলাম অতো
এই ধরো না ঠিক তোমারই মতো
ঘুমিয়ে যেতাম স্বপ্ন দেখে দেখে
বকুলফুলের গন্ধ মেখে মেখে।
দূর গাঁয়ের ঐ তাল সুপারির সারি
ছোট্ট কুটির আমার গাঁয়ের বাড়ি
পুকুর পাড়ে সানবাঁধানো ঘাট
ঢেউয়ের তালে কোমর দোলায় পাট।
বিলের পানি টলোমলো ছায়া
লুকিয়ে থাকে আমার গাঁয়ের মায়া
সেই গাঁয়েতে করবো বসবাস
থাকবে নাতো মায়ের দীর্ঘশ্বাস।
ইচ্ছে শুধু শান্তি সুখে থাকা
রংতুলিতে স্বপ্ন ছবি আঁকা।
স্বপ্ন আমার স্বাধীনতা
সুখ নেবো যে কতো
কিন্তু আহা আজকে তাহা
কেন যেন- রূপকথারই মতো।
উদাস বনে
ছোট্টবেলার স্মৃতি আমার
মন ভোলাতে চায়
বকুল তলায় বউ সাজাতাম
ধান সিঁড়ির ঐ গাঁয়।
দীঘির জলে ঢেউয়ে ঢেউয়ে
বাজতো কলতান
পদ্ম ফুলের নাচন দেখে
জুড়াইতো পরান।
বিলের মাঝে চলতো মাঝি
পানসি নৌকা বেয়ে
গাঁয়ের বধূর ভিজতো আঁচল
পথের পানে চেয়ে।
কোথায় গেলো রাখাল ছেলের
হারিয়ে যাওয়া গান
দুঃখ ভরা বিষাদ যে তার
কাঁদতো অফুরান।
সেসব স্মৃতি কেমন করে
হারিয়ে গেলো হায়
এখন কেন দুঃখরা সব
উদাস বনে যায়।