নোনা জল আর বোবা বাতাসের কাব্য
যৌবনের তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করলে
মশারির মায়ায় বৃষ্টির মত ঝরে অন্ধকার
পোষা মেঘ গলে গলে নেমে দীপের শিখা নেভায়
দরিদ্র শিশির গলা উঁচু করে দেখে-
কোন দিঘি তার জন্য জল নিয়ে আসছে,
হয়ত সেও ঝাঁপ দিবে নোনা উৎসবে।
উষ্ণ বৃষ্টির তোড়ে যখন কেঁপে ওঠে বোবা তরঙ্গ
তৃপ্তির শেষ লাইনটুকু দোদুল নাচে মাতে-
তখন জুয়াড়ির হাত থেকে খসে পড়ে কিশোরী বৃষ্টি
সুচিবাই সম্পর্কের বোবা সাক্ষি হয়ে থাকে বাঁশি,
বাতাসের অংশীদার পিচ্ছিল আকাশে
চুড়ির বৃত্ত ভেঙ্গে বালক পাখি পাখায় আঁচড় দেয়
বাকি পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে মায়াবী তেঁতুল
ঘামের গন্ধে স্বপ্ন ভাড়া করে মোমকাব্য লিখে
সূর্যমুখী উষা…
আলোর উসষ্কানী আর ঘামের কারুকার্যে
মই ছাড়াই উপরে উঠে আসে অন্ধ বাতাস
দিঘির শরীরে জলকেলি করে মাছের উনুন
উড়ন্ত আকাঙ্খায় দু’হাত মেলে ধরে শূন্যের সংসারে…
শূন্যের নাচঘর
নাচঘরে রসনার নামে ভিজে যায় পায়ের আলতা।
এখানে গাঢ় রঙ ছিল সাদা সন্ধ্যার
এখানে উত্তপ্ত জলে সংসার সাজাত চড়ুই
এখন এখানে হরিণ মাংসের ঘ্রাণ শোঁকে…
স্ববিরোধী মিথ্যায় অমরত্ব পেতে চায় নাচের মুদ্রা
নূপুর ঝরে পড়ে পাথরে লুকানো দুপুর, চোখে জাগে রক্ত
সামান্য ওমে মাথা পাতার পর খিলখিলিয়ে হাসে তাজা রোদ্দুর।
ঠোঁটের বিছানায় সুস্পষ্ট কান্নার ইচ্ছারা দোলা দেয়
আহত ইন্দ্রিয়গুলো প্রথম স্মৃতির দিকে ধাপ দিতে চায়
কাঁটাতারের চরিত্রগুলো ঘিরে রেখেছে ঘুঙুরের চারপাশ
ছদ্মবেশে জড়ানো জটিল জীবন…
মুখোশ খুলে মাংসের দলাগুলো নেতিয়ে পড়ে
নাচঘরের বারান্দায়, ওঝা চলে গেছে ঝাড়বাতির আড়ালে।
কে জানত নর্তকী শতাব্দীর চকচকে ছুরির উপর রসনার আসর বসাবে?
ধানের সংবিধান
এখানে যখন হা করে বাজেট পেশ করা হয়
আমি তখন কি করব ভেবে পাই না
দিশেহারা হয়ে ধান খেতের মধ্যে দিয়ে
ল্যাংটো হয়ে দৌড় দিই
যাতে আমার সহমরণ হয় উল্টে থাকা ভাতের সাথে।
ধানের সংবিধান যখন লিখা হয়নি চৌরাস্তার ঘরে
তখন সে পথে কালো বেড়াল যৌন সুখে হাঁটবেই,
তরুণ সাঁকোর উপর দিয়ে হাঁটতেও আজ গা শিউরে ওঠে
না জানি কে তলায় পড়ে পিষ্ঠ হবে,
মাঠের উপরে ঘাস বিছিয়ে শুয়ে থেকে ভাবি-
কে আমায় বেঁচে থাকার বাজেট পেশ করবে?
ক্লান্ত হলে কে আমার শরীরে একটু জল ঢেলে দিবে?
ঘুমের ঘোরে শরীরে নিম্নাংশের কাপড় উপরে উঠে গেলে
কে তা ঠিক করে দিবে ?
আজ চারপাশে নিষিদ্ধ বাজেট পেশ হচ্ছে অবলীলায়…
নেমে আসে উড়ন্ত জল
অপ্রেমের মূল ধরে টান দিয়ে সমুদ্র ছুঁইনি কোনদিন
ভূগর্ভ থেকে উঠে আসা জলে ভেজা ঠোঁটে
দৃষ্টি বুলাতে গিয়ে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বলে উঠে।
কাজলের বাঁধ ভেঙ্গে কপোল বেয়ে নেমে আসা জল
লোনা ছিল নাকি সবুজ-
পরখ করে দেখব বলে অঞ্জলি বেঁধে ছুঁলাম চিবুক
দেখলাম দু’হাতের তালুতে অন্ধকার ঝরে নামছে
পাতাহীন গাছ থেকে পাখিরা ছুটে চলেছে…
নেমে আসার শব্দে ঘুম ভাঙ্গছে নির্জন টিলার
নেমে আসছে মেঘ, নেমে আসছে মদ ও মদীর রঙ
আর নৈশ ঘ্রাণে নেমে আসছে অকালের ছায়া।
সবুজ জলে সমর্পিত কামনার ঘুড়ি দেখে
শূন্য ছাদ থেকে নেমে আসে টাঙানো জামা কাপড়।
সীমাহীন পথের ধারে রোদ ছুঁই
স্মৃতির পাতা উল্টাতে দেখে
ভীষণ বেগে নেমে আসে রাতের নুন নিঃশ্বাস।
রঙ
কত সাবলীল মায়াবি চোখে তীর মেরে অবিরাম ঝুলে থাকো
সরলতার ভঙ্গিমায় বুকের সাথে জড়িয়ে ধরো পুরোহিত পুরুষ।
বুকের ভাঙ্গা চেয়ার দৃষ্টিহীন ফুলদানি রেখে অভিমান নিয়ে বলি-
তুমি কোন মুদ্রার ইচ্ছে নারী? মানসিক সহবাসে সর্বাঙ্গে প্রতিনিয়ত
রমণপাত ঘটাও শুকনা অরণ্যের গহীনে…
মমতার চাদরে জড়িয়ে তুমি মানুষকে পাখি বানাও
হাতে ধরে রাখ লাটাই আর নি:শ্বাসে ওড়াও বিষ
ভালোলাগার চাদরে আগুন জ্বালিয়ে তুলে আন জনতার চোখ,
দেহের বিচিত্র কার্বন ছুঁড়ে মার সরল স্রোতে
মৃত্যু স্বীকার করো না বলে আঁকড়ে ধরে আছো ইহজীবন পিঞ্জর।
নীল বসন্তের এই মেলায় বয়স তোমার তেইশ
ঠোঁটের কোণে জেগেছে কামনার আগুন তিল
ফণা মেলে সৌরভ বিলাচ্ছ রঙিন পোশাকে,
নীরব যন্ত্রণায় আদ্যপান্ত সন্ধ্যেবেলায় আমার চব্বিশ!
মুক্তির আশায় এবার লাশ হতে চায় সীমাবদ্ধ চিল…