আড্ডাপত্র

১৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১; ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪;রাত ১১:২৪

ভ্রমণ কবিতা | সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল

আড্ডাপত্র

নভে ২৩, ২০২২ | গুচ্ছ কবিতা

[কবিতার এক অনবদ্য বিষয় ভ্রমণ কবিতা। কবিতা পাঠের সাথে সাথে মনের সিনেরিলেও ভেসে ওঠে ওইসব স্থান যাতে কবির পর্যটন। পাঠকের মনের ভিতরও পঙক্তির পর পঙক্তি পাঠের সাথে সাথে দৃশ্যের পর দৃশ্য ভেসে ওঠে। এতে কবিতা পাঠের পর ভ্রমণগদ্যেরও স্বাদ নেয়া যায়। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এর ভ্রমণ কবিতা পাঠককে নিয়ে যায় অন্য এক ভুবনে, নতুন এক মাত্রায়। পাঠক সেখানে আবিষ্কার করে নিজেকে যেখানে তার পায়ের ছাপ পড়েনি কখনো। দেশকে ছাড়িয়ে অন্যদেশ, অন্যভুবনে পাঠকের যাত্রা শুরু।]- সম্পাদক

স্বর্গীয় দূতাবাস এবং ৩০ মে, ১৯৫৮

বিশ্বের দীর্ঘতর ইয়াং স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে প্যাচানো পথে
শা শা করে একুরা-CLXR 724 উড়ে যাচ্ছে উড়োজাহাজ,
হাইওয়ে ফোর-ও-ওয়ানে
উত্তরের বিপরীত দিকে, শহর থেকে দূরের শহরে, ক্রামাহির দিকে
আমাদের আকাশ নিয়ে যাচ্ছে তোমাদের স্কাইয়ের কাছাকাছি।
একশ’ কুড়ি কিলোমিটার বেগে একুরা শা শা করে ছুটছে দূতাবাসে
৩০ মে’র দিকে, উনিশ শ’ আটান্ন’র দিকে!
.
৪০১ হাইওয়ে থেকে হাইজাম্পে নেমে যাচ্ছি নিচে
রেড লাইট, ইয়লো লাইট, গ্রিন লাইটে নিয়ন্ত্রিত।
এখনো রাস্তার পাশের জলাশয়ে বরফের দাগ, শীতের স্মৃতি।
এফ এম রেডিও গাইছে মিউজিক:
‌”Driving down a corduroy road
Weeds standing shoulder high…”
কালারফুল ফলঋতু নেই; খোলা স্কাই রুফ দিয়ে দেখি:
ওয়ান্ডারফুল সবুজ সামার, বিউটিফুল খামার!
.
টিম হর্টনস থেকে আইস ক্যাপ নিয়ে যাচ্ছি
অথবা একুরা নিয়ে যাচ্ছে নৈঋতে
লিটল লেকের পাড়ে সেভেন এস্পেনডাল ড্রাইভের
স্বর্গীয় দূতাবাসে যাচ্ছি…
যে ডেরা এক সময় আমাদের গ্রামে পৈতৃক ভিটা ছিলো।
দেঝা ভ্যু! দেজা ভ্যু, দেযা ভ্যু!
এখন দখলসূত্রে বা ক্রয়সূত্রে ওসমানীর কটেজীয় দূতাবাস।
দেজা ভ্যু! পূর্ব পুরুষের বাড়ির বুৎপত্তি παρα এবং μνήμη.
.
অবসরপ্রাপ্ত স্বর্গীয় দূতাবাসে-
রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, শেলী, কিটস কেউ আসেন নি।
তাঁরা দেখেন নি- লেকের বুকে বকপাখির মাছ শিকার
এবং দেখেন নি হিজলের মতো willow tree’র নুয়ে পড়া
জল ছুঁই-ছুঁই পাতার তির তির কম্পন,
থির থির করে কাঁপছে মৃদু জলস্রোত, জলছায়া
বাতাসের ঘ্রাণে তিরতির থিরথির জলপাতার প্রণয়চুম্বন!

আফটার নুনের পর বিদেশি বিকেলগুলো ঘাটে বসে বিয়ার খাচ্ছে,
কমন লুন বার্ড লেকজলের ওপর হাঁটছে, দৌঁড়াচ্ছে, সাঁতরাচ্ছে-
ব্যাকইয়ার্ডে হরিণ, হুইস্কি জ্যাক, ম্যাগনোলিয়া।
বারবিউকি; অগ্নিদগ্ধ জলন্ত মাংস থেকে তৈরি হচ্ছে-
ত্রিশ মে, নাইনটিন ফিফটি এইট!

টরন্টো, জুন ০৩, ২০২২

অর্জিতার সাথে লং ড্রাইভ

হাইওয়ে ধরে আমরা যাচ্ছি বিদেশি বিকেলের দিকে, রংধনুর দিকে। যেতে যেতে ওয়েস্ট একজিট নিয়ে ইয়াং স্ট্রিট ধরে নেমে যাই শহরের দিকে। ড্রাইভ থ্রো থেকে চা আর আইচ ক্যাপ নিয়ে ট্রাফিক জ্যাম আর দুটি ইন্টার সেকশন ক্রস করে আবার ইস্ট একজিটে উঠে যাই, ফিরে আসি ফোর-ও-ওয়ানে।
দীর্ঘপথে ইংরেজি রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজল। তাতে আমি এবং অর্জিতা দুজনেই গানে গানে ভেসে গেলাম। নদীর পাড়ে একটি পার্ক। পার্কের একটি আপেলগাছের নিচে ব্যাঞ্চি। আমরা যাত্রাবিরতি করে হালকা স্ন্যাক্স খেলাম, পাখিদের সাথে। প্রাকৃতিক সূত্রে পাখিরা আমাদের আত্মীয়।
আবার আমরা রওনা দেই ভিন্ন পথে। আমাদের সাথে হিন্দি রবীন্দ্রসঙ্গীত। হঠাৎ গান থামিয়ে অর্জিতা বলল— বাবা, আমরা পথ ভুলে ভুল পথে যাচ্ছি। এখন আর গুগোল-ম্যাপ কাজ করছে না। চলো, আমরা বরং কুড়িগ্রাম ঘুরে আসি। দাদাকেও দেখে আসি। দাদা তো আমাদের এক জাদুঘর!
ঐ দেখা যায় তালগাছ (গাছে তাল নেই), তারপর একটু এগুলেই ডান দিকে একটা মসজিদ (মসজিদে আজান হয় না), মসজিদের দক্ষিণ দিকে ধানখেতের পাশ দিয়ে একটা কাঁচাপথ মিশেছে চৌরাস্তায়। সেখানে একটা পুকুর (পুকুরে মাছ নেই), পুকুরের উত্তর পাড়ে একটা আমগাছ। গাছের নিচে ভাঙ্গা টিনের ঝাপড়ার চায়ের দোকান। সামনে বাঁশের ব্যঞ্চি। কিছু কিছু লোক হাট থেকে হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যার দিকে যাচ্ছিল।
আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অর্জিতা ড্রাইভ করছে। কাঁচারাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে আমরা বাপ-বেটি বেঞ্চিতে পা দুলিয়ে দুধচা খাচ্ছি। স্টারবার্কসের চেয়েও ঘনসরের চায়ের স্বর্গীয় স্বাদে পা দোলাচ্ছি। সেই সময় দোকানদারের রেডিওতে বাংলা রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজতেছিল। আমাদের কাছে বাংলা টাকা ছিল না। ক্রেডিড কার্টেও বিল দেওয়া হলো না!
তখন একটি পুলিশের গাড়ি এলো। আমাদের মতো আগন্তুক দেখে তাদের সন্দেহ হচ্ছিল। কিছু উল্টাপাল্টা প্রশ্নের প্রস্তুতি নিচ্ছিল আবার ভয়ও পাচ্ছিল। পরে দোকানির কাছে রেডিও’র লাইসেন্স চাইল। তার লাইসেন্স নাই অথবা লাইসেন্স নবায়ন না থাকার কারণে পুলিশ জরিমানা করল।
তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। রেডিও থেকে ঘোষণা করা হচ্ছে—আজ থেকে লকডাউন। আজ থেকে অন্য রকম এক কার্ফ্যু। আমরা সেই লকডাউনের জালে আটকা পড়ে রইলাম!
টরন্টো, জুলাই ১৪, ২০২০

‘উঠোনে দু’টি চাঁদ’

লাবণ্য দাশের চেয়ে বনলতা সেন জনপ্রিয়,
তাহলে আমরা কি জলের বদলে রাকীবের সাথে ভদকা খাবো?
ঘরে না ফিরে জামানের সাথে ম্যাক্সিকোতে মাছ ধরবো!

দু’দণ্ড শান্তি। শান্ত। অন্ধকার।
দীর্ঘ জীবনের অশান্তি। অস্থির। ক্লান্ত। ক্লান্তি।

দুই দূরত্বের মাঝখানে মনিকার সাথে অন্ধকারে ছবি তুলবো,
নাকি নাড়া ক্ষেতে নক্ষত্র কুড়াবো!

শাহাব সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে বরিস ইয়েলৎসিনের সাথে হাত মিলিয়ে
সেই হাতে এখন গল্প লিখে- ‘উঠোনে দু’টি চাঁদ’…
হায় লাবণ্য দাশ! হায় বনলতা সেন!!

ম্যাক্সিকো, ২ সেপ্টেম্বর ২০২২

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১