আড্ডাপত্র

২৭ ফাল্গুন, ১৪৩১; ১২ মার্চ, ২০২৫;রাত ১২:৪০

গণঅভ্যুত্থানের কবিতা : পর্ব ৩৬

আড্ডাপত্র

মার্চ ৯, ২০২৫ | Uncategorized, কবিতা, গুচ্ছ কবিতা

শহীদ সিরাজী

অনন্য ইতিহাসে ঝলমলে দেশ

অনন্য এক ইতিহাসের ঝলমলে এ দেশটা
স্বৈরাচারে খেলো দেশের রক্ত মাংস শেষটা

দেশটা হলো গুম ধর্ষণ খুনের অভয়ারণ্য
‘সরকারি মাল’ বাজেট হল লুটেরাদের জন্য
দেশটা তাদের বাপ-দাদাদের ভাবটা শাসকগোষ্ঠীর
অন্যরা সব রাজাকার যার নাই ঠিকানা কোষ্ঠীর
তেলবাজিতে সেরা জনই স্বাধীনতার পক্ষের
বিরোধিদের তকমা ছিল স্বাধীনতা বি-পক্ষের

এলো দেশে হীরক রাজা দানব শাসন চললো
‘গিনিপিগের ভাগ্য’ প্রজার অষ্টপ্রহর মিললো
‘সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল’ নিখুঁতভাবে চললো
মনখেয়ালি বিবির মনের ‘খাই’ ‘খাই’টা বাড়লো
সাথের চ্যালাচামুন্ডাদের বাড়তে থাকলো লুটপাট
মনে কেউটে গোখরা বসত উপরটাতে ফিটফাট !

মহান বেদীর রাজ্য শাসন জন্ম দিল আয়নাঘর
বললো মীরজাফর চেতনা বিরোধীদল কি দরকার?
রুখো প্রতিবাদী কন্ঠ! বলল গদি হুংকারে
প্রয়োজনে ‘আবরার’ ডোজ দাও, মাথা তার কার ঘাড়ে?
কূটকৌশল জালটা ফেলে সুযোগ বুঝে স্বৈরী দাস
করল গুম-খুন সালাদীন টুকু আরো ইলিয়াস
আরমান আর আযামীদের আয়না ঘরের সুরতহাল
বলল, বিশ্বনাথ হলেও ‘শিবির’, উঠাও গায়ের ছাল
জাতির ঐক্য! সখ্য নিয়ে আমরা ছাড়া পক্ষ নাই
গণতন্ত্র রাখো, দাবি একটায় ক্ষমতা চাই।

রাজার কথা মিথ্যা কি হয়? সত্য এবং নির্ভেজাল!
আমার রাজ্যে আমি রাজা তোমরা সবাই ভৃত্যপাল
রাজ্য শাসন করতে রাজার নিত্য কাজ
ইচ্ছেগুলো মনটাতে হয় দিলদরাজ
লাগবে টাকা! ছাপাও টাকা, ব্যাংক পাড়াতে যাও তবে
দেশটা বাবার ইচ্ছে আমার যা বলবো তাই হবে
যত প্রজেক্ট তত টাকা ভেলকি খেলার খেলুড়ে হও
উন্নয়নের জোয়ার দিয়ে চোখ ধাঁধানো নৌকা বও!

হবু রাজের গবু মন্ত্রী সাথে যত দরবারী
সংগোপনে করলো ধারাল মীরজাফরী তরবারি
আসলো প্রজেক্ট আসলো ঘুষ
দরবারীরা হলো বেহুশ
কড়কড় নোট ভরলো পকেট হাসলো হাসি ছন্দতে
ফাইভ স্টারে বেহুশ হলো পরকীয়ার গন্ধতে

এসব টাকার ধাঁধা দেখে হাজির হলো বেনজির
ঠান্ডা মাথায় লুটলো এদেশ ঘটনা তার বে নজির
ছাগল মতিউরও নেচে উঠল বেশ
বউ, পোলা, নিজের নাচন কি আবেশ!
করল চুরি বাড়ল ভুড়ি, হলো স্ফীত পেট বিবর
ঘুষের, লুটের টাকার সুখে কাটতে লাগলো সুখ যাবর
জন্ম নিলো ভয়ংকর এক ব্যাংক ডাকাত
লন্ডভন্ড করলো দেশের অর্থখাত
এরা সবাই মাফিয়াগং ওদের বড় লম্বা হাত
স্বৈরাচারের ঘোড়ায় চড়ে করছে তারা বাজিমাত
ওরা তো রুটেরা বটে চেহারা দরবেশ বাবা
খেলছে হরিলুটের খেলা সবখানে তার ভয়াল থাবা।

দিনে দিনে ফ্যাসিবাদের হচ্ছে চাবুক ভয়ংকর
ভাড়া করে আনছে দেশে জল্লাদ; রাখে কে খবর
বিরোধী নেতার ভাগ্যে জুটছে সুখের জেল জুলুম

কারো বুকে করছে গুলি, সাহসীদের করছে গুম
ওদের সোনার ছেলে-মেয়ের সময় এখন বৃন্দাবন
চলছে রাতে নষ্ট খেলার দিন বদলের নীল দহন

এসব দেখে শুনে ক্রমে পাল্টে গেল দৃশ্যপট
কোটা আন্দোলনের তুফান ডুবিয়ে দিল শাসন তট
কাঁপলো স্বৈরাচারীর বুক
বাড়লো দানবীয় রোখ
দমন পীড়ন আসলো তেড়ে তীরের বেগে ভয়ংকর
টুটি চেপে ধরল মানবতার ‘পর

ছুড়লো গুলি ঠাণ্ডা মাথায় পাষণ্ড খুনি স্বৈরাচার
মরলো ওরা দেশ জনতা ছাত্র যুবক নারী-নর
বিশ্বয়কর যুদ্ধ হলো একপক্ষের
গুন্ডা পান্ডা অস্ত্রধারী, লেঠেল ওরা ফ্যাসিবাদের
তাদের সাথে বাঁচতে লড়াই করছে যারা মজলুমান
খালি হাতে সাহস নিয়ে লড়লো তারা জানপরান।

অবশেষে এলো নতুন স্বাধীনতা
বিজয় হাসি হাসলো শেষে মানবতা
স্বৈরশাসক পালিয়ে গিয়ে খুঁজে নিলো প্রভুর কোল
এমপি, নেতা, পাতি নেতা সবাই গোলে হরিবোল
একসাথে তিনশত ষাট জন চুকালো সব এমপি পাঠ!
গিনেস বুকে উঠলো নাম, বালাই ষাট!
পুলিশ পেটুয়া বাহিনী দেখলো চোখে ঘোর আঁধার
পৃথিবীতে বিরল এটি দ্বিতীয়টি নেই তো আর!
জয় মিছিলে শামিল হল লক্ষ প্রাণ
ছাত্র যুবক অভিভাবক শিক্ষকদল সুখপরান

চললো এবার স্বৈরাচারের দোসর খোঁজার কার্যক্রম
অবাক জাতি, দেখলো একি অদ্ভুতুড়ে! না-কি ভ্রম!
খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এলো সচিব বাড়ির দৃশ্যপট
জমা করা নগদ ঘুষের কোটি কোটি টাকার লট
আর একজন লুটের রাজা স্বৈরাচারও বেশ খাঁটি
বাড়িতে তার পাওয়া গেল মোটে ন’শ বিশ কোটি
কোন একজন করেছে নাকি পাচার কোটি ৪৫ হাজার
আরো আছে কত শত সমঝদার!
কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসে একি দেখি অজগর
আহা সে কি ভয়ংকর!

অদ্ভুত এ দেশ যেন এক পুরো দেশই আস্ত ব্যাংক
লুট বন্যার বর্ষা ভিজে ডাকছে সুখে ঘ্যাঙর ঘ্যাং
দেশটা যেন হরিলুটের যা দেখা যায় আইসবার্গ
জীবনে যা দেখেনি কেউ, দেখবে না কেউ তেমন মার্গ।
ভয়ংকর এক খাদের পাড়ে দাঁড়িয়ে এ দেশ, ভয়ঙ্কর!
হয়তো কখন গিলে খাবে পাপ সাগরের ক্রোধ উদর।

এমন ভয়াল জাহিলিয়াত !
বাঁচতে হলে লড়তে হবে
‘নতুন স্বাধীনতা’ তাকে সুসংহত করতে হবে
নিতে হবে বিজয় ৩৬ জুলাই থেকে জীবন পাঠ।

মুহাম্মদ ওমর ফারুখ

ওরা ফুল হয়ে ফোঁটে

ওরা ফুল হয়ে ফোঁটে- রক্ত হয়ে ঝরে ওরা আবু সাঈদ,
মীর মুগ্ধ, জাফর- জাহাঙ্গীর নুসরাত- রাফিয়া ওরা বাংলা
ব্লকেড ঘরে ঘরে রিয়া আরাফাত, শিশু সাব্বির বিশ্ব বিজয়ী
বীর।
মৃত্যুকে পেছনে ফেলে ওরা চলে অমরত্বের পথে বসতি গড়ে
মজলুমের পাশে ভাঙগে জালিমের বিষদাঁত নির্ভীক ওরা
বন্ধন ছেড়ে সংসার গড়ে রাজপথে দুরন্ত- দুর্জয় ঈসাখান
ওরা, বজ্রকঠিন হাত।
শহীদি মৃত্যুকে ভালবাসে ওরা- মানেনা পরাজয় সত্যকে
খোঁজে পাহাড় ডিঙিয়ে, ভাঙগে রাজপ্রাসাদ বুকের পাজরে
লেলিহান শিখা- জানেনা কোনো ভয় ওরা চায় বন্ধ হোকমজলুে
মর আর্তনাদ।
চির প্রতিবাদী শাশ্বত ওরা, সৈনিক বিধাতার মুছে ফেলে
পতাকার কালো দাগ। সবিশেষ বিপ্লবী ওরা, বিশ্বাসী
ওরা—বন্ধু মানবতার ওদের রক্তে রাঙানো চব্বিশ,
নতুন বাংলাদেশ।
আবাবিল- মিসাইল ওরা শান্তির মহাদূত অমর-
অজেয় চির ভাস্বর ওরা স্বপড়বদ্রষ্টা বিশ্বের
চির স্বাধীন মুক্ত বিহঙ্গ ভালোবাসাসিক্ত অজুত
বেঁচে থাকে স্বাক্ষী হয়ে ওরা, কাল-মহাকালের।

মুহাম্মদ হানিফ

এক দফা ২৪

উঠেছে জোয়ার দেখো জেগেছে জনতা,
তারুণ্যের আজ নেমেছে ঢল।
দাবি এবার এক দফা
সবার মুখে একই কথা।
যদি ভোটাধিকার ফিরে চাও
তবে ঐক্যের হাত বাড়াও।
বুকে নিয়ে হিম্মত নৈতিক মনোবল,
গড়ে তোল দুর্বার গণআন্দোলন।
হইও নাকো পিছপা সম্মুখে এগিয়ে যা,
ফ্যাসিবাদী অভিলাস সমূলে হবে নাশ।
জুলুম আর জালিমের হবেই পতন।
গণতন্ত্র ফিরে পেতে আমরা দৃঢ়-অবিচল,
আমাদের এক দাবি, আমরা সবাই এক দল।

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী

বারুদফুল

শিশির ভেজা চিরহরিতে
ওঁৎপেতে বসে স্বৈরশকুন…
বায়ানড়ব ঊনসত্তর একাত্তর ফিরে
চব্বিশের বসন্তে
দাহনস্রোতে মুমূর্ষ ঢেউ বয়ে চলে
মানচিত্র নদী
ঢেউয়ের ভাঁজে ভাঁজে
রক্তের আখ্যান
চোখ ভরতি বিবেকী কানড়বা আর
অজস্র হাহাকার, ঘৃণা
ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে তারুণ্য
মুঠোয় জনযুদ্ধের দামামা
শপথের জাগরণে জেগেছি
জেগেছে অজস্র প্রেমিক কবি
উঁচু করে মশালের দশ হাত
কাঁধে তুলে নিয়েছে ভার
বঞ্চিতের অধিকার ফেরাবার
ফোটেছে কতো বারুদফুল আগুনের
গ্রাফিতি দেয়ালে দেয়ালে
চেতনার অজস্র পা সমবেতআবার
এসেছে বায়ানড়ব
আবার এসেছে ঊনসত্তর
একাত্তর ফিরে এসেছে জুলাইয়ের রাজপথে…

মোস্তাক রহমান

অশ্লীল তিনি, কদাকার

এতোটা অশ্লীল তিনি, প্রগলভ
সীমানা কোথায়, দাগ; দাঁড়াতে হবে, মানে না অভিশপ্ত, অষ্টাবক্র অমানব।
নর্দমার মতো মুখ, কদাকার
গোপন তীক্ষ্ণ দাঁত, দৃশ্যমান ওষ্ঠ-অধর হায়নার
পিশাচিনী ত্রাসে, এনেছে আঁধার।
ঘোর অমানিশায় ডাকিনীর মতো মুখ তুলে উর্ধ্বআকাশে ; রক্ত,পূজ ছড়িয়ে
বাতাসে, তার অপছায়া হাসে।
উন্মত্ত অপঘাত তার উদরে ঘুমায়
হাঁচিতে কাশিতে আকীর্ণ-জীর্ণ মহামারি কলেরা, উদরাময়।
মাটি, আকাশ, বৃক্ষ
মুক্তি, স্বাধীনতা; সব রক্ষাকবজ জরাগ্রস্ত করেছেন তিনি, হিংস্র দানব।
আমাদের অপরাহ্ণ, দূরের আকাশ, ভোর
নিশঙ্ক ঘুমঘোর
দখল নিয়েছিলো খুনি ‘পলাতক চোর’।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১