আড্ডাপত্র

২৭ ফাল্গুন, ১৪৩১; ১২ মার্চ, ২০২৫;রাত ১২:৪২

গণঅভ্যুত্থানের কবিতা : পর্ব ৩৭

আড্ডাপত্র

মার্চ ১০, ২০২৫ | কবিতা, গুচ্ছ কবিতা

লুৎফা শাহিন

বাতাসে কালো ধোঁয়া

আকাশে কালো ধোঁয়া, বাতাসে দুর্গন্ধ—
সবদিকে অসুস্থ পরিবেশ মিছিল—সভা সমাবেশ। দখলদারিত্ব চলছে অলীক
স্বপ্নের আয়োজনে সিংহাসন নড়বড়ে এই ফ্যাসিবাদীর। কথায় কথায়
বিপ্লব— প্রকৃতি লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নেয়।
ফুলগুলো পর্যন্ত আগের মতো সৌরভে সুবাসিত নয়। সব যেনো হাইব্রিড।
আজকাল নেতারা ও হাইব্রিড। ওরা আলোকরশ্মি ছড়িয়ে দেবে দেশে দেশে।
মিছিলে , মিটিংয়ে,স্লোগানে সম্ভাবনার কথা বলে অথচ এরা একই রূপের
বাহারি স্বপড়বকাহন। কংক্রিটের দাবানলে জ্বলছে বিবেকের শহর!
আত্মশুদ্ধি বহুদূর— ধোলাই হচ্ছে মগজ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘুমহীন রাত্রি
যাপন তবুও মানুষ জীবন্ত লাশ। ঐসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে তোয়াক্কা হিশেবে
মানবিক গুণগুলো আজ অজগর সাপের পেটে। দুঃখ হয় অগোছালো বিছানা
দেখে—
মুষ্টিবদ্ধ ভাবনার হাত দিশেহারা। গণঅভ্যুত্থান কোটিজনতার স্বপ্নের বাগান।
বৈষম্য বিরোধ ঠেকাতে অপরিকল্পিত রাষ্ট্রনবায়ন, কথায় কথায় রাজপথ
দখল। কেউ জানে না কেনো আন্দোলন? কী দাবি? কোথায় পৌঁছাতে হবে?
আফসোস এ প্রজন্মের কোনো স্বপড়ব নেই, অস্থির উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যে, সততার
বড্ড অকাল পড়েছে। মূল্যবোধ নেই। সবাই রাজা এই রাজত্বে হাজারো
প্রশেড়বর উত্তর নেই। কী পেলো? কী হারালো? কী অর্জিত হলো? কোথায়
যাবো? কী করবে? রূপরেখা কী? কিছুই মেলেনি উত্তর—
হায় প্রিয় গণঅভ্যুত্থান—হায় স্বপ্নের বাংলাদেশ!

শফিকুর রহমান সবুজ

তারা নিক্ষেপ করে গুলি আমরা নিক্ষেপ করি কবিতা

যুদ্ধের ময়দানে হিংস্র ফেরাউসিনার
সৈন্য-বাহিনী, লাঠিয়াল হেলমেট বাহিনী;
যখন আমাদের গায়ে নিক্ষেপ করে গুলি,
টিয়ারগ্যাস- আমরা তখন তাদের
বিবেক ও চেতনায় নিক্ষেপ করি কবিতা।
আমাদের বুক যখন ঝাঁজরা হয়ে যায়
বুলেটের আঘাতে- লাঠিয়ালের হাতুড়ি
এবং হেলমেট বাহিনীর রাইফেলে;
আমরা তখন তাদের হৃদয় ও বিবেককে
ক্ষতবিক্ষত করি ছড়া-কবিতার ছন্দে ছন্দে।
এরপর, আমাদের হারায় প্রাণ;
আর তাদের হারায় ক্ষমতা।
প্রাণ হারিয়ে আমরা মুক্ত করি
একটা জনপদ। যে জনপদ
মুক্তি পেয়ে উল্লাসপ্রাণে
সীমাবদ্ধতাকে টপকিয়ে আগামী
প্রজন্মের জন্য উন্মুক্ত করে একটা ভূখণ্ড।
এ তো আমাদের লাল জুলাই
বিজয় আগস্ট।
আর তাদের কালোই আগস্ট,

শাহরিয়ার সোহেল

অন্ধকারে আলো

যেদিন তোমাদের বুকে
শাঁ শাঁ বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ হলো
হাজারও কবুতর লুটিয়ে পড়লো মাটিতে
আরও অধিক কবুতর ছটফট করল যন্ত্রণায়
পর পর তিন দিন আকাশ
আক্রোশে টগবগে গাঢ় লাল হয়েছিলো
সৃষ্টিকর্তার ক্রোধ যেনো আছড়ে পড়ছিলো জমিনে
বেশি দেরি হয়নি…
মাত্র চারদিনের আলটিমেটামে
পরাক্ম প্রভাবশালীরা পালিয়ে গেলো ভিনদেশে
নিজ দেশেও হলো না করুণ ঠাই
জুলুম, হত্যা, গুম, ঘুষ, দুর্নীতি
চিরস্থায়ী হতে পারে না
কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করতে পারে না কোন অজগর
রাত যতো দীর্ঘ হয় প্রভাত ততো এগিয়ে আসে
তীব্র অন্ধকার ভেদ করে ফুটে ওঠে আলোর আকাশ…

সরকার জাহিদুল ইসলাম

স্বার্বজনীন আন্দোলন

একজন আবু সাঈদ;
ঈদের মতোন এই আন্দোলনটাকে-
স্বার্বজনীন করে দিয়েছে।
প্রশিক্ষিত- পোষা জানোয়ারদের রাইফেলের সামনে
দু’বাহু প্রশস্ত করে- নির্ভয়ে তুমি দাঁড়ালে।
ওরা আজরাইল দেখবার মতোন ভয়ে,
বৃষ্টির মতো বুলেট ছুঁড়ে- তোমার পাঁজর ঝাঁঝরা করে দিলো!
যেনো ওদের কোনো স্বজন নেই, ভাই নেই, ঘর নেই
ভীনদেশি- যাযাবর।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কুল
অফিসার থেকে দিন মজুর
কৃষক থেকে শ্রমিক
অভিনেতা থেকে শিল্পী
কবি থেকে চিত্রকর
ব্যবসায়ী থেকে দোকানি
বেশ্যা থেকে মসজিদের ঈমাম
শিশু থেকে বৃদ্ধ
পুরুষ থেকে নারী
যেখানে যতো মানুষ ছিলো-
দেশলাই কাঠির মতোন; দারুণ জ্বলে উঠলো মুহূর্তেই!

চৌধুরী আব্দুল হাই

ফিরে যেতে চাই

ফিরে যেতে চাই একটি উর্বর জমিতে,
সেখানে ফসলের পোড়া গন্ধে— অদৃশ্য হয়েছে তাঁরা,
নাড়ার আগুনে আঁকা আছে শস্যের আল্পনা,
আমি তোমাদের চিনি অগ্রযায়ী, প্রিয়তম অগিড়বসাক্ষী।
ধানের ঘ্রান , চোখে মুখে আজকের লক্ষ্ণীর সঞ্চয়,
ঢেঁকিশালে বাঁধা একগোছা সোনালী আঁটি, আমার
আগামীর সুখ, সেই পোড়া নদীতীরে, যার শীতল
শরীরে লেখা আছে তোমাদের, অধিকার আদায়ের নাম।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১