আড্ডাপত্র

১৩ পৌষ, ১৪৩১; ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪;রাত ১:১৬

আড্ডাপত্র : প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা–৫

প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রথম কবিতা আড্ডাপত্র প্রকাশ করছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের সাথে কবির আনন্দ, উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পাঠকের কানে নতুন কবিতার গুঞ্জরণ ভেসে আসে। পাঠকের মনে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটি তুলে ধরতে চায় আড্ডাপত্র। কবিতা পাঠের সাথে সাথে জানবো কবি সম্পর্কেও। এই আয়োজনটি পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে

কবলিত মানচিত্রে // আবিদ আনোয়ার

আমারও মগজে ব’সে কদাকার চঞ্চু ঠোকে শতকের চিল
তবু কোনো অন্তর্গত বাঁচার আবেগে
আমি ঠিক সেরে উঠি দুর্ঘটনা-কবলিত পেশীর নিয়মে–
সেরে গেছে প্রমিথিউস,
বৃক্ষের বাড়ন্ত কোষ দিনে-দিনে ঢেকে ফেলে তাবৎ খোড়ল।

যে-নারী যুদ্ধের কাছে তার প্রিয় পুরুষ হারালো
সেও ঠিক ফিরে গেছে অন্য কোনো নায়কের ঘরে;
জীবনের গতিধারা রূখতে পারে না কোনো দুর্যোগের ঢেউ:
হলুদের ছোপ-লাগা শীতের বাগানে
যুগপৎ পাতা ঝরে, গজায় মুকুল,
মৃতের করোটি ফুঁড়ে ফুটে ওঠে ভাগাড়ের ফুল।

নিরিবিলি ক্ষতস্থান চেটে
আহত হরিণ যায় চারণভূমিতে,
বারুদের গন্ধ শুঁকে সাহসী পাখির ঝাঁক ফিরে যায় বিলে–
আমিও তেমনি যেন কালের কয়েদী, গায়ে তবু জীবনের জামা,
স্বপ্নখেকো সময়ের বীভৎস থাবার পাশে
অবাক জ্বালিয়ে রাখি ব্যক্তিগত চাঁদের পূর্ণিমা।

—————————-

[আবিদ আনোয়ার বাংলাভাষার উল্লেখযোগ্য কবি, বহুমাত্রিক লেখক ও গবেষক। জন্ম ১৯৫০ সালের ২৪ জুন কিশোরগঞ্জ জেলায় কটিয়াদী থানার চর আলগী গ্রামে। বাবা মোঃ আজিমউদ্দিন ও মা হাসিনা বেগম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে অনার্সসহ ১৯৭২ সালে এমএসসি এবং পরে কেবল লেখালেখি ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার সূত্রেই বিশ্বব্যাংকের বৃত্তি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরী-কলাম্বিয়া থেকে ১৯৮৭ সালে রেকর্ড মার্কসহ সাংবাদিকতায় এমএ পাশ করেন। সাংবাদিকতা-সংক্রান্ত গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ এবং একাডেমিক কৃতিত্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের National Journalism Scholarship Society (Kappa-Tau-Alpha)-র সম্মানসূচক সদস্যপদ লাভ করেন। কবিতা, ছড়া, গল্প, গান ও প্রবন্ধ রচনায় এবং সাহিত্য সমালোচনায় তিনি সমান পারদর্শী। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা বিশ। তারমধ্যে কাব্যগ্রেন্থের সংখ্যা নয়টি। প্রতিবিম্বের মমি-১৯৮৫; মরা জোছনার মধুচন্দ্রিমা-১৯৯২; স্বৈরিণীর ঘরসংসার-১৯৯৭ (২য় সংস্করণ- ১৯৯৮, ৩য় সংস্করণ-২০০৩); খড়বিচালির বৃক্ষজীবন-২০০১; কাব্যসংসার ১ (কবিতা, ছড়া ও গান)-২০০৩; নির্বা‌চিত ক‌বিতা- ২০০৫; আটকে আছি মধ্যনীলিমায়-২০০৯; কাব্যসংসার (কবিতা, ছড়া ও গান)-২০০৩; ধলপহরের পদাবলি-২০১৮। ছড়াগ্রন্থ–আগল-ভাঙা পাগল ছড়া-১৯৯২, সৃষ্টিছাড়া ত্রিশটি ছড়া-১৯৯৯; মশার মেয়ে পুনপুনি- ২০১২। গল্প– তিন পাখনার প্রজাপতি- ২০০৬। প্রবন্ধগ্রন্থ- বাঙলা কবিতার আধুনিকায়ন-১৯৯৭ (২য় সংস্করণ ২০০৫, ৩য় সংস্করণ- ২০১৮); চিত্রকল্প ও বিচিত্র গদ্য-২০০৫; আমাদের আধুনিক কবিতার দুই দশক : বরেণ্য কবিদের নির্মাণকলা-২০১৫। মুক্তিযুদ্ধ– আমার মুক্তিযুদ্ধ : রাজপথ থেকে রণাঙ্গন-২০১৫। ছন্দের সহজপাঠ- ২০১৮।

কবিতায় সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও, জনহিতকর বিজ্ঞানবিষয়ক তথ্যকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মাঠে-ময়দানে বাউল গানের আকারে পরিবেশনের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি পদক, সাহিত্যকর্মের জন্য ১৯৯৬ সালে রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের স্মারক পদক ও সংবর্ধনা, ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতার রজত জয়ন্তি পুরস্কার: সৈয়দ নজরুল ইসলাম পদক ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সংবর্ধনা, ছড়াসাহিত্যে অবদানের জন্য ২০০৬ সালে সুকুমার রায় সাহিত্য পুরস্কার এবং কবিতার জন্য ২০১৬ সালে শ্রীপুর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর ইংরেজি স্ক্রিপ্টনির্ভর অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ বেতার দুইবার (২০০৫ ও ২০০৮ সালে) কমনওয়েলথ ব্রডকাস্টিং অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। তিনি বেতার-টিভির স্পেশাল (সর্বোচ্চ) গ্রেডের তালিকাভুক্ত গীতিকবি। একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত শিল্পসাহিত্যবিষয়ক প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন ও করছেন তিনি।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের চাকুলিয়া ক্যাস্প থেকে বিশেষ কমান্ডো হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে কিশোরগঞ্জ এলাকায় যুদ্ধ করেন। ধূলদিয়া রেলসেতু ও মানিক খালি রেল কালভার্ট অপারেশন এবং ধুলদিয়ায় ভাঙা-সেতুর পারে পরবর্তী যুদ্ধ পরিচালনায় কৃতিত্বের জন্য স্বাধীনতার পর সমগ্র কিশোরগঞ্জ মহকুমা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের প্রথমে সহকারী ক্যাম্প কমানড্যান্ট ও পরে প্রধান ক্যাম্প কমানড্যান্টের দাযিত্ব পান। সরকারি নির্দেশে মহকুমাভিত্তিক মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পগুলো বন্ধ হয়ে গেলে তিনি সে-এলাকার মুজিব বাহিনীর প্রধান অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ (যিনি বর্তমানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি)-এর কাছে দাপ্তরিক দায়িত্ব হস্তান্তর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন অসমাপ্ত ডিগ্রি সম্পন্ন করার জন্য।

পড়াশোনা শেষ করার পর অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেছেন। প্রায় বিশ বছর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-তে চাকুরিকালে তিনি তাাদর অন্যান্য প্রকাশনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের জার্নাল অব হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশন-এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন (এখন এই জার্নালটি লন্ডনভিত্তিক একটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়)। বর্তমানে কবি আবিদ আনোয়ার চুক্তিভিত্তিক কনসালট্যান্ট এডিটর হিসেবে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিডিডিআর,বি এবং সরকারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত আছেন।]

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১