আড্ডাপত্র

১২ বৈশাখ, ১৪৩১; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪;সকাল ৭:০৪

জাকির হোসেন কামাল এর পাঁচটি কিশোরকবিতা

আড্ডাপত্র

নভে ২৮, ২০২০ | কিশোর কবিতা

ফুল কুড়োবার দিন

রইলো না আর দিনগুলো সব সোনার ফ্রেমে বাঁধা,
উড়ে যাবার দিনগুলো সেই, বলবো কারে দাদা?

তুমি যেতে ওই পাড়াতে, আরো ক ‘জন মিলে,
পাখির বাসা খুঁজে নিতে ডাহুক-ডাকা ঝিলে।

আমি যেতাম পাখির মত পুচ্ছ যেন তুলে,
ভরে নিতাম খোঁপা আমার নানান বুনোফুলে।

আম কুড়োতাম মনের সুখে চৈত্র বোশেখ মাসে,
ফুল কুড়োতাম শিউলি চাঁপা শিশির ভেজা ঘাসে।

শর্ষে ক্ষেতে আলোয় মেতে ফড়িঙ যেমন উড়ে,
দিন কাটাতাম মেঘের ছায়ায় তেমনি ঘুরে ঘুরে।

এসব কথা আমার তো নয়, এসব কথা মায়ের,
এসব ছবি অনেক আগের দূরের কোন গাঁয়ের।

জানি এখন নেইতো গাঁ আর নদীর পাড়ের মেলা,
তোমরা সবাই দাও ফিরিয়ে আমার কিশোর বেলা।

স্বাধীনতা চাইলে আমি কন্ঠ করো ক্ষীণ,
মায়ের মত আমারও চাই ফুল কুড়োবার দিন।

বাংলা মা কে ভীষণ ভালবাসি

কী কী তুমি দেবে আমায় কী কী পারো দিতে
জামা-জুতো আয়না-কাঁকই চুলের সবুজ ফিতে।

গাড়ি-বাড়ি সোনা-দানা দিতে পারো জানি
নাহয় আমার এসব কিছুর থাকলো টানাটানি।

বাড়ি-গাড়ি পয়সা-কড়ি হয়তো লোভনীয়
এর চেয়ে ঢের আমার কাছে স্বাধীনতাই প্রিয়।

স্বাধীনতায় পুষ্প ফোটে ডানা মেলে কুড়ি
স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখায় পাখির ওড়াউড়ি।

ওদের মতো ইচ্ছে করে মন-পবনের নায়ে
ভেসে বেড়াই কিংবা ঘুরি সবুজ কোন গাঁয়ে।

সুদুর কোন নদীর পাড়ে ক্লান্ত হয়ে শেষে
বসে থাকি শ্যামলিমায়, দেশকে ভালোবেসে।

আবার হাঁটি, চোখ মেলি যেই নিবিড় বনছায়
ফুল ফাগুনের দখিন হাওয়ায় প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

গাছের পাতায় ঝিকিমিকি সোনা-রঙা আলো
খুব সকালে দেখে আমার মন হয়ে যায় ভালো।

রাতের বেলায় জোনাক জ্বালায় মিটিমিটি আলো
দেখে তুমিও বলতে পারো দারুন ও জমকালো।

ডিবি ইবির সুযোগ আছে, এসব কথা ছাড়ো
জেনো,আমার দেশপ্রেম ঠিক নিখাঁদ এবং গাঢ়।

আমার ভীষণ প্রিয় জেনো মায়ের মুখের হাসি
আমি যে ভাই বাংলা মাকে ভীষণ ভালবাসি।

একা

ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকুক আকাশ ঢাকুক মেঘে
আজ চারিধার থাকুক আঁধার বৃষ্টি নামুক বেগে।

নাহয় পড়ুক বাজ সমানে ঝনাৎ ঝনাৎ ঝন
বিজলি-মেয়ে আসুক ধেয়ে আজকে সারাক্ষণ।

এমনি দিনে বন্ধ জানি সব পারাপার খেয়া
এমনি দিনে হয়তো ফুটে কোথাও কদম কেয়া।

এমনি দিনে সবাই ঘরে, বাইরে যেতে ভয়
এমনি দিনে প্রায় সবারই মন উচাটন হয়।

এমনি দিনে শুধুই আঁধার; আঁধার আসুক ধেয়ে
তবুও আমি এগিয়ে যাবো বৃষ্টি জলে নেয়ে।
এগিয়ে যাব পথটা যদিও নিকষ কালো হয়
পথের মাঝে পথ হারাবার থাকুক যতই ভয়…

যাবো আমি, আমি যাব, যেতেই আমায় হবে
যাবার সময় হলে পরে কে থেমেছে কবে?

ওপাড় যাবার ডাক তো আমার, আমারই তো ঠেকা
এসেছিলাম একাই যখন, যাচ্ছি আজও, একা।

পৃথক হয়েছি গঙ্গা ও পদ্মায়

ওইখানে ছিল বাড়ি আমাদের গঙ্গার তীর ঘেঁষে
দিতো মনে দোল ঢেউ হিল্লোল মৌরির ঘ্রাণ এসে।

ঝুর ঝুর ঝুর সকাল দুপুর কার্পাস তুলো ঝরে
হাসি ও খেলার কিশোর বেলার কত কিছু মনে পড়ে।

ঝাপুর ঝুপুর নিদাঘ দুপুর দুষ্টুরা হয় জড়ো,
দীঘিটার জলে মহা কলরোলে নেমে পড়ো নেমে পড়ো।

কী আর করা, হয়ে মনমরা যায় কিরে থাকা বসে
গঙ্গার ধারে বনে ও বাদারে কেবলই বেড়াই চষে।

কখনোবা আনি পুই দুইখানি শাপলার ফুল সাদা সাদা
গড়াগড়ি করে মাছ আনি ধরে সারা গায়ে মেখে কাদা।

সুনীল বিজন মুনির সুজন একসাথে করি খেলা
গাছেও চড়ি ইমারত গড়ি কুড়িয়ে মাটির ঢেলা।

এমনি করেই কেটে যায় দিন পাখির ডানায় ভেসে
হঠাৎ এদেশে কী যে করে গেল রেডক্লিফ ব্যাটা এসে।

কলমটা নিয়ে এক খোঁচাতেই দাগটা দিয়েছে টেনে
দাগের দু ‘পাশে দু ‘টি দেশ হলো, সবাই নিয়েছে মেনে।

মানতে পারিনি আমিই কেবল শুধু কি আমার দায়
গঙ্গার পাড়ে বাড়ি ছিল বলে, শুধু মনে পড়ে যায়।

হায়রে ওখানে কত না মধুর মনোহরা দিন গেছে
বৈচির বনে পাখির কুজনে হেসে খেলে নেচে নেচে।

সকলেই জানে খুশির ওখানে ছিল না তো কোন সীমা
ছিল মনে মনে মহুয়ার বনে কোজাগরী পূর্ণিমা।

আজও এখানে বসতি আমার পদ্মার তীর ধরে
আজও এখানে অতীতের কথা কত স্মৃতি মনে পড়ে।

হয়তো বা সুখে কিংবা অসুখে দিনগুলি চলে যায়
আমরা শুধুই পৃথক হয়েছি গঙ্গা ও পদ্মায়।

আমি যেন হই

তাড়াহুড়ো করে সন্ধ্যার পরে সেদিন অফিস থেকে
বেরিয়েছি, দেখি যানজট এ কী দূর্বিসহ ঠেকে।

এ কেমন নগর গোলাপ টগর নেই তো কোথাও পথে
কত লোকে হায় ছুটে চলে যায় নিস্ফল মনোরথে।

গাড়ি আর গাড়ি দেয় পথ পাড়ি কোন সুদূরের পানে
এভাবেই পথে যাপিত জীবন, হয় নাতো কোনো মানে।

যানজটে পড়ে হাঁসফাস করে মেজাজ হয়েছে কড়া
এ সময়ে কোনো লাগে না তো ভালো স্বর্গের অপ্সরা।

গাড়ির ভেতরে বসে থেকে থেকে মাথাটা গিয়েছে ধরে
এমন সময়ে বাইরের দিকে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে।

দেখি এক শিশু ড্যাবড্যাবে চেয়ে বাড়িয়েছে দুটি হাত
দেখেই তাহারে ধমক দিলাম অজান্তে অকস্মাৎ।

একটু পরেই যানজট ভেঙে গাড়িও দিয়েছে টান
কিছু দূর যেতে গাড়ি-ঘোড়া কম রাস্তাও সুনসান।

পথে যেতে যেতে শিশুটির কথা বারবার মনে পড়ে
কোমল চোখের আহা সেই শিশু! বুকে খচখচ করে।

বাড়িতে এসেই ভুলে গেছি সব আর কিছু নেই মনে
কেটে যায় ক্ষণ মধুর লগন নিভৃতে নির্জনে।

ক্লান্তির দেহ কখন সঁপেছি নিদ্রাদেবীর কোলে
কেটেছে সময় বড় মধুময় স্বপনে দোদোল দোলে।

সুগভীর ঘুমে পৃথিবী যখন নিঝঝুম একাকার
সে সময় যেন তাড়া নেই কোনো সাড়া নেই কারো আর।

এমন সময়ে কিসের শব্দে জেগে উঠি ঘুম থেকে
অতি অকস্মাৎ চিৎকার করে বলি আমি কে…কে…?

কারো নেই সাড়া আমি দিশেহারা কে ঢুকেছে আজ ঘরে
নেই কোন কথা ফুল পাখি লতা থাকে সব চুপ করে।

দেখি আমি ঘরে থই থই করে জানালার ফাঁক গলে
জোছনার মেয়ে ঢুকে গেছে আর কতজানি কথা বলে।

ওরা বলে যায় দেখো জোছনায় চরাচর আজ ভাসে
এমনই রাতে কেমন করিয়া ঘুমটি তোমার আসে?

তুমি না কি কবি, শুধু কি কবির তকমা এঁটেছো গায়
অলক্ষে তোমার কেমন করিয়া চাঁদনিরা চলে যায়?

ঘরে কেন তুমি এখনো রয়েছো, কেন আছো একা ঘরে
চাঁদ কথা বলে, রাত কথা বলে, উঠে খলবল করে।

প্রজাপতি ডাকে, এসো গো কবি হাত ধরে আজ হাঁটি
এ সময় দেখো প্রকৃতিও থাকে অপরুপ পরিপাটি।

সে সময় এক জোনাকি বালিকা নিকটে আসিয়া কয়
শিশুদের ভালো বাসে না কবি, কেমন করিয়া হয়?

যে শিশুটি আজ ক্ষুধাতুর হয়ে পেতেছিল দুটি হাত,
ফিরিয়ে দেয়ায় পেয়েছিল সে যে কষ্টটা নির্ঘাত।

এইটুকু তুমি বোঝ নাই কবি, কিসের কবিতা লেখো
যা কিছু লেখো,লিখবার আগে, মানবতা তুমি শেখো।

তারপরে তুমি চাঁদ দেখো কবি, ফুল দেখে তবে হাসো
শিশুদের ভালো বাসবার পরে প্রকৃতিকে ভালোবাসো।

এ সকল শুনে দাঁড়িয়েছিলাম লজ্জায় নতমুখে
শিশুটি বুঝি বা ফেরৎ গিয়েছে আহারে কত না দুখে।

মনে মনে বলি ফুল পাখি রাত কত না আমার প্রিয়
মানবতা আগে বুঝে নিতে প্রভু সুযোগ আমাকে দিও।

তুমি তো আমাকে ভালো করে চেনো, তুমি তো জানোই সবই
আমি যেন হই প্রকৃতির আর মানব দরদী কবি।

Facebook Comments

আড্ডাপত্রে লাইক দিন

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০